চরাচর-টেলিভিশন দিবস গণমাধ্যমের ব্যাপ্তি

৯৯৬ সালের ডিসেম্বর মাসে জাতিসংঘের যে সাধারণ সভা হয়, এতে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয় ২১ নভেম্বরকে আন্তর্জাতিক টেলিভিশন দিবস হিসেবে পালন করা হবে। যদিও জার্মানি এতে দ্বিমত পোষণ করে। জার্মানির কথা হলো, একই রকম তিনটি আন্তর্জাতিক দিবস থাকা সত্ত্বেও কেন আমরা আরো একটি দিবস বাড়াব? দিবস তিনটি হলো_ওয়ার্ল্ড প্রেস ফ্রিডম ডে, ওয়ার্ল্ড টেলিকমিউনিকেশন ডে, ওয়ার্ল্ড ডেভেলপমেন্ট ইনফরমেশন ডে।


এমনকি জার্মানি আরো যুক্তি দেখায়, টেলিভিশন হচ্ছে এমন একটি মাধ্যম, যা কেবল বড়লোকদের জন্য। সাধারণ মানুষের ক্রয়ক্ষমতার বাইরের একটি মাধ্যমকে বিশ্ব দিবস হিসেবে পালন করার কোনো মানে নেই। তার পরও টেলিভিশনের গুরুত্ব সাধারণ মানুষের জীবনে অনেক। সেই চাঁদের বুকে যখন মানুষের পা পড়ে ১৯৬৯ সালের ২০ জুলাই, তখন সেই দৃশ্য সরাসরি মানুষজন দেখে টেলিভিশনের পর্দায়। ম্যারাডোনা যখন পায়ের জাদু দেখিয়েছেন বলে, তখনো মানুষ সরাসরি খেলা উপভোগ করেছেন ঘরে বসে টেলিভিনের পর্দায়। বাংলাদেশের ক্রিকেট টিম যখন খেলতে নামে তখন প্রায় সব বাংলাদেশির চোখ থাকে এই টেলিভিশনের পর্দায়। টেলিভিশনের কল্যাণে আমাদের মনেই হয় না আমরা মাঠের বাইরে আছি। ১১ জন খেলোয়াড়ের সঙ্গে তখন যেন খেলে ১৬ কোটি মানুষ। মানুষের বিশাল লাইন তৈরি হয় টিভি দোকানগুলোর সামনে। এবার আসি কিছুটা কারিগরি আলোচনায়। টেলিভিশন মানে হলো এক জায়গা থেকে ভিডিও প্রচার করা হবে আর তা অনেকে একসঙ্গে উপভোগ করতে পারবে। সাধারণত তিনটি পদ্ধতিতে তা করা হয়। পদ্ধতিগুলো হলো_টেরিস্ট্রিয়াল, স্যাটেলাইট ও আইপি সম্প্রচার। বাংলাদেশে বিটিভি টেরিস্ট্রিয়াল সম্প্রচার করে। এ পদ্ধতিতে টেলিভিশন কেন্দ্রে উঁচু একটি টাওয়ার বসানো হয়। এই টাওয়ারে একটি অ্যান্টেনা বসিয়ে ভিডিও সম্প্রচার করা হয়। বাসাবাড়িতে মানুষজন একটি ছোট অ্যান্টেনা বসিয়ে ওই সিগন্যাল রিসিভ করে টেলিভিশন উপভোগ করতে পারে। দ্বিতীয় পদ্ধতিটি হলো স্যাটেলাইট। এই পদ্ধতিতে টেলিভিশন অফিসে একটি ডিশ অ্যান্টেনা বসিয়ে তার মাধ্যমে সিগন্যাল স্যাটেলাইটে আপ করা হয়। পাড়ার ডিশ ব্যবসায়ীরা এই সিগন্যাল একটি ডিশের মাধ্যমে স্যাটেলাইট থেকে রিসিভ করে তা কেব্লের মাধ্যমে বাসাবাড়িতে দেয়। সর্বশেষ ও আধুনিক পদ্ধতিটি হলো আইপির মাধ্যমে সম্প্রচার। এই পদ্ধতিতে একটি কম্পিউটারকে সার্ভার করা হয়। সেই সার্ভার থেকে ইন্টারনেটের মাধ্যমে অন্য কোনো কম্পিউটার বা স্ট্রিমবঙ্ থেকে সরাসরি টেলিভিশন দেখা যায়। এমনকি এখনকার স্মার্ট টেলিভিশনগুলোতে আইপি টিভিরও সুবিধা দেওয়া হয়। ব্যস্ততার এই জীবনে টেলিভিশন অনেকটাই আনন্দ দেয়। জাতীয় গুরুত্বপূর্ণ সময়ে রাস্তার পাশে দাঁড়িয়ে হলেও আমরা একাত্ম হতে পারি টেলিভিশন দেখে। বিশ্ব টেলিভিশন দিবসে টেলিভিশনের কাছে আমরা আরো কী কী পেতে চাই, তা নতুন করে ভাবতে শিখি।
জাহাঙ্গীর হোসেন অরুণ

No comments

Powered by Blogger.