সরকারি প্রণোদনা-সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত আজ ঘোষণা

পুঁজিবাজারে স্থিতিশীলতা ফেরাতে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা মোতাবেক সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত করেছে সরকার। বুধবারের পর থেকে গত কয়েক দিন দফায় দফায় বৈঠকের পর গতকাল সোমবার দুপুরে শেষবারের মতো বৈঠক করে সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত করেন সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা। বৈঠকে মার্জিন ঋণের সুদ নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত স্থগিত (ব্লক) করা ও ঋণের সুদের হার কমানো, বাংলাদেশ ব্যাংকের সিআরআর, এসএলআর কমানোসহ কালো টাকা শর্তমুক্ত বিনিয়োগের বিষয়ে সিদ্ধান্তে পেঁৗছেছে


সরকার। চূড়ান্ত ঘোষণার আগে, সম্ভব হলে সোমবার রাতে বা আজ মঙ্গলবার কোনো একসময় সিদ্ধান্তগুলো প্রধানমন্ত্রীকে জানানোর কথা। আজ দিনের শেষ ভাগে সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এঙ্চেঞ্জ কমিশনের (এসইসি) পক্ষ থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে সিদ্ধান্তগুলো প্রকাশ করার কথা রয়েছে।
অর্থ মন্ত্রণালয়ের সম্মেলনকক্ষে অনুষ্ঠিত গতকালের সভায় অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত, বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ড. আতিউর রহমান, অর্থসচিব ড. মোহাম্মদ তারেক, ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের সচিব মো. শফিকুর রহমান পাটোয়ারী, জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের চেয়ারম্যান ড. নাসির উদ্দিন, এসইসির চেয়ারম্যান খায়রুল হোসেন, বাংলাদেশ ব্যাংকের ডেপুটি গভর্নর নজরুল হুদা, এসইসির সদস্য হেলাল উদ্দিন নিজামীসহ ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
বৈঠকের পর অর্থমন্ত্রী বলেন, 'এখনই কোনো কিছু বলা যাবে না। সভায় বেশ কিছু বিষয়ে আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছি। এ ব্যাপারে এসইসি আনুষ্ঠানিকভাবে জানাবে।' এসইসির সদস্য হেলাল উদ্দিন নিজামী কালের কণ্ঠকে জানান, শেয়ারবাজার পরিস্থিতি স্বাভাবিক ও স্থিতিশীল করতে সভায় গুরুত্বপূর্ণ বিভিন্ন বিষয়ে সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত করা হয়েছে। মঙ্গলবার আনুষ্ঠানিকভাবে এসইসি সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে সিদ্ধান্তগুলো সাংবাদিকদের জানাবে। তিনি বলেন, গৃহীত সিদ্ধান্তের মধ্যে বাজারের জন্য নেতিবাচক কোনো কিছু নেই। বরং ইতিবাচক নানা সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। এতে ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারীদের স্বার্থ সুরক্ষিত হবে। এসইসির চেয়ারম্যান খায়রুল হোসেন এক প্রশ্নের উত্তরে জানান, বাজার পরিস্থিতি স্বাভাবিক করতে বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকস (বিএবি), অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকার্স বাংলাদেশ (এবিবি)সহ সংশ্লিষ্ট সব পক্ষই ইতিবাচক মনোভাব নিয়ে কাজ করছে। ওই বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন এমন একজন কালের কণ্ঠকে জানান, রবিবার সন্ধ্যায় শেরে বাংলানগরের এনইসি-২ সম্মেলনকক্ষের বৈঠকে কালো টাকার শর্তমুক্ত বিনিয়োগ, ব্যাংকের এসএলআর, সিআরআর কমানো, মার্জিন ঋণের সুদ ব্লক করাসহ সুদের হার কমানোর বিষয়ে আলোচনা হলেও কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি। ওই দিনই সিদ্ধান্ত হয় যে সোমবার সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের শীর্ষ কর্মকর্তারা অর্থমন্ত্রীর সঙ্গে বসে এসব বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবেন। সে মোতাবেক সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের নিয়ে গতকাল বৈঠকে বসেন অর্থমন্ত্রী। বৈঠকে এসব বিষয়ে সিদ্ধান্তও চূড়ান্ত হয়েছে। তবে সেগুলো আগে প্রধানমন্ত্রীকে দেখিয়ে তাঁর সম্মতির পরই গণমাধ্যমকে জানানো হবে। ওই কর্মকর্তা জানান, প্রধানমন্ত্রীর কাছে উপস্থাপনের পর কোনো কোনো সিদ্ধান্তে পরিবর্তনও আসতে পারে। তাই এখনই সিদ্ধান্তগুলো প্রকাশ করা সম্ভব হচ্ছে না। শেয়ারবাজারের অব্যাহত দরপতনের পরিপ্রেক্ষিতে দফায় দফায় বৈঠক করে সরকারের তরফ থেকে নানা ধরনের প্রণোদনা দেওয়া হয়। ওই সময় বিভিন্ন পর্যায়ে আয়করের হারও কমানো হয়। কিন্তু এর পরও বাজার পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়নি। এতে ক্ষতিগ্রস্ত বিনিয়োগকারীরা জোট বেঁধে আন্দোলন শুরু করেন। যার পরিপ্রেক্ষিতে গত বুধবার সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের নিয়ে বৈঠকে বসেন প্রধানমন্ত্রী। বাজার পরিস্থিতি স্বাভাবিক করতে তিনি বেশ কিছু নির্দেশনা দেন। ওই দিন বৈঠকের পর এসইসির সদস্য আরিফ খান সাংবাদিকদের বলেছিলেন, রবিবার এ ব্যাপারে সিদ্ধান্ত জানানো হবে। তারপর থেকে সরকারি ও বেসরকারি খাতের সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের নিয়ে কয়েক দফায় বৈঠক করেন অর্থমন্ত্রী। রবিবার চূড়ান্ত ঘোষণা দেওয়া হয়নি। সন্ধ্যায় সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের সঙ্গে আবার বৈঠতে বসেন অর্থমন্ত্রী। আড়াই ঘণ্টারও বেশি সময় ধরে চলা বৈঠকের পর এসইসির সদস্য হেলাল উদ্দিন নিজামী বলেন, ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারীদের স্বার্থ রক্ষায় সরকার ধাপে ধাপে প্রয়োজনীয় সব ধরনের উদ্যোগ নেবে। তার আগে ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারীদের চিহ্নিত করে তাদের ক্ষতির পরিমাণ নিরূপণ করা হবে। অর্থমন্ত্রীও ব্যাংকগুলোকে বিনিয়োগ বাড়ানোর কথা বলেছেন। শেয়ারবাজারে অনুকূল পরিবেশ সৃষ্টিতে বাংলাদেশ ব্যাংকও এসইসির সঙ্গে নানা বিষয়ে একমত হয়েছে বলে জানান এসইসির এ সদস্য।
রবিবারের বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন এমন কয়েকজন কালের কণ্ঠকে জানিয়েছিলেন, পুঁজিবাজারে কালো টাকা বিনিয়োগে কোনো বাধা নেই বলে আলোচনা হয়েছে। বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর সাবসিডিয়ারি কম্পানি হিসেবে বিদ্যমান মার্চেন্ট ব্যাংকগুলোর পুঁজিবাজারে বিনিয়োগ ঋণ হিসেবে বিবেচনা না করে মূলধন হিসেবে বিবেচনা করার বিষয়েও আলাপ হয়েছে। তালিকাভুক্ত কম্পানির পরিচালকদের ২০ শতাংশ শেয়ার ধরে রাখতে বাধ্য করার জন্য বিদ্যমান আইনের সংস্কারের প্রসঙ্গও আলোচনায় এসেছে।

No comments

Powered by Blogger.