ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষা-এমন ত্রুটি অপ্রত্যাশিত

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ব্যবসায় শিক্ষা অনুষদভুক্ত 'গ' ইউনিটে ভর্তি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ শিক্ষার্থীদের ভাগ্য এখন অনিশ্চিত। শত শত শিক্ষার্থী দুর্ভোগের মুখে পড়েছে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের ত্রুটির কারণে। প্রশ্নপত্রে ভুল এবং উত্তরপত্র মূল্যায়নে ভুল হয়েছে বলে যে কারণ দেখানো হয়েছে, তাকে স্বাভাবিক বলা যায় না। প্রশ্নপত্র তৈরির সময় ভুল হলে তা পরীক্ষার হল পর্যন্ত যাওয়ার পরও চোখে পড়েনি কেন? যদি চোখে পড়ে থাকে, তাহলে কোন কারণে তা সংশোধন করা কিংবা


বিকল্প ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি, তা-ও এখন প্রশ্নবিদ্ধ হয়ে পড়ছে। শুধু তা-ই নয়, পরীক্ষাশেষে পুনর্মূল্যায়ন হওয়া এবং তা বাতিল করার মাধ্যমে যে অনিশ্চিত অবস্থার সৃষ্টি করা হয়েছে, তা নিয়েও ধূম্রজালের সৃষ্টি হয়েছে। মূল্যায়ন ও পুনর্মূল্যায়নের পরও অনিয়ম ধরা পড়ার পর এটা নিশ্চিত হওয়া গেছে যে কর্তৃপক্ষ তাদের দায়িত্বপালনে যথাযথ ভূমিকা পালন করেনি। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো শিক্ষায়তন থেকে সংগত কারণেই এমন অবহেলা প্রত্যাশা করা যায় না।
যেসব পরীক্ষার্থী ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়ার সুযোগ পেয়েছে বলে নিশ্চিত হয়েছে এবং সেই কারণে যারা অন্য বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির সুযোগ গ্রহণ করেনি কিংবা ভর্তি পরীক্ষায় অংশ নেয়নি, তাদের ভাগ্য কী হবে, তা এখন ভেবে দেখার ব্যাপার। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ আবার যদি ভর্তিপরীক্ষা গ্রহণ করে, তাহলে বিগত পরীক্ষায় উত্তীর্ণদের সবাই যে আবারও উত্তীর্ণ হবে, তা বলা যায় না। পুনঃ পরীক্ষায় অনুত্তীর্ণদের ভাগ্য কী হবে, তা বলার সুযোগ নেই। ইতিমধ্যে জানানো হয়েছে, আগামী মাসের ৯ তারিখে আবার ভর্তি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে।
এদিকে পরীক্ষায় উত্তীর্ণদের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে মিছিল-সমাবেশ করতে দেখা গেছে। তাদের দাবিগুলোও সংগত বলেই মনে হয়। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের ব্যর্থতার দায় তারা বহন করবে কেন, এমন প্রশ্ন আসাটা একান্তই স্বাভাবিক। জীবনভর তারা আশা করে আসছে দেশের সর্ববৃহৎ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ভর্তি হয়ে লেখাপড়া করবে বলে। আর সেই আশা পূরণ হওয়ার পথে যে বাধা তৈরি হলো, তা দূর করা কি এখন তাদের সবার পক্ষে সম্ভব হবে?
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষা অত্যন্ত স্বচ্ছতার সঙ্গে সম্পন্ন হয়ে থাকে। সেখানে প্রভাব-প্রতিপত্তি কিংবা অসততার কোনো অভিযোগও পাওয়া যায় না। অন্যদিকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিকও সংবাদমাধ্যমে অনিয়মের কথা স্বীকার করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তরিকতার উদাহরণ পুনরায় প্রদান করেছেন। কিন্তু এই আন্তরিকতার পরও ৯৮০ আসনের বিপরীতে উত্তীর্ণ দুই হাজার ৭২৭ জন শিক্ষার্থীর জীবন যে অনিশ্চয়তার মধ্যে পড়েছে, তার কি সমাধান হবে?
বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ এই অনিয়মের কারণ ও সংশ্লিষ্টদের চিহ্নিত করার উদ্দেশ্যে তদন্ত কমিটি গঠন করেছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, অনিয়মের জন্য যে-ই দায়ী হোক না কেন, তাকে অবশ্যই জবাব দিতে হবে। কিন্তু মেধাবী শিক্ষার্থীদের জীবনে এই অনিশ্চয়তার জন্য দায়ীদের দায় স্বীকার করে দ্রুত পদত্যাগ করা উচিত। একই সঙ্গে প্রাচ্যের অঙ্ফোর্ডখ্যাত এই বিশ্ববিদ্যালয়ের সুনাম রক্ষার জন্য এ ধরনের অনিয়ম যাতে ভবিষ্যতে আর না হয়, সে জন্যও বিশ্ববিদ্যালয়কে সতর্ক হতে হবে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় তার ঐতিহ্যকে যথাযথভাবে ধারণ করুক। প্রশ্নবিদ্ধ নয়, অনুকরণীয় হোক।

No comments

Powered by Blogger.