শিক্ষার্থী নির্যাতন-শিক্ষকের মানসিক স্বাস্থ্য সমস্যা

রকার গত ৯ আগস্ট এক আদেশের মাধ্যমে দেশের সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীদের ওপর দৈহিক শাস্তি প্রদান নিষিদ্ধ ঘোষণা করেছে। এর আগে উচ্চ আদালত গত ১৩ জানুয়ারি এক রায়ে স্কুল ও মাদ্রাসায় সব ধরনের দৈহিক নির্যাতন বেআইনি ঘোষণা করেন। কিন্তু হাইকোর্টের রায় ও নির্দেশনা এবং সরকারি নিষেধাজ্ঞার মধ্যেই গত রোববার রাজধানীর রামপুরায় খালেদ হায়দার মেমোরিয়াল স্কুলে ইংরেজির শিক্ষক পড়া না পারায় বেতের বেধড়ক পিটুনিতে


ষষ্ঠ শ্রেণীর ৩৭ শিক্ষার্থীকে আহত করেছেন। হতভাগ্য শিক্ষার্থীদের অনেককেই চিকিৎসা নিতে হয়েছে, এমনকি কাউকে কাউকে নিয়ে অভিভাবকদের ঢাকা মেডিকেল পর্যন্ত দৌড়াতে হয়েছে। এ ঘটনার পর অবশ্য পুলিশ নির্যাতনকারী শিক্ষক সেলিম মজুমদারকে গ্রেফতার করেছে। কিন্তু আশ্চর্যের বিষয় হলো, অভিযুক্ত শিক্ষককে আটক হওয়ার সময়ও কৃতকর্মের জন্য অনুশোচনা করতে দেখা যায়নি। তাহলে কি ওই শিক্ষকের মানসিক স্বাস্থ্য ভালো নেই? বিশেষজ্ঞদের মতে, অনেক শিক্ষক পারিবারিক সমস্যা উদ্ভূত মানসিক চাপে অনেক সময় শিক্ষার্থীদের ওপর চড়াও হন। এভাবে ক্ষেপে যাওয়া শিক্ষকদের বেপরোয়া আচরণ ঠেকানো যাবে কী করে? কোমলমতি শিশুদের ওপর নির্যাতন চালালে শিশুর মানসিক বিকাশ বাধাগ্রস্ত হতে পারে_ এমন আশঙ্কার কথা জানার পরও অনেক শিক্ষক ও অভিভাবক শিক্ষার্থীদের গায়ে হাত তুলতে বা বেত চালাতে বা ডাস্টার ছুড়ে মারার মতো ঘটনা ঘটাতে দ্বিধা করেন না। শিশু ও শিক্ষার্থীদের মানবাধিকার রক্ষার গুরুত্ব সমাজ ও রাষ্ট্রের জন্য এবং সর্বোপরি ওই শিক্ষার্থীর ভবিষ্যৎ জীবনের জন্য কতখানি গুরুত্বপূর্ণ সেটা শিক্ষক, শিক্ষার্থী ও অভিভাবক_ সবারই জানা থাকা উচিত। এ ব্যাপারে প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণের উদ্যোগ নেওয়া সমীচীন হবে। শিক্ষার্থীদের, বিশেষ করে স্কুলের কোমলমতি ছাত্রছাত্রীদের ওপর শিক্ষকের নির্যাতন চালানোর খবর মাঝে মধ্যেই গণমাধ্যমে প্রকাশিত ও সম্প্রচারিত হচ্ছে। শিক্ষার্থী নির্যাতন বেআইনি ও নিষিদ্ধ ঘোষিত হওয়ার পরও এ ধরনের বেশ কয়েকটি ঘটনা ঘটেছে। তবে দেশের অনেক স্কুল ও মাদ্রাসার শিক্ষার্থী নির্যাতনের খবর অজানাই থেকে যায়। শিক্ষার্থী ও তাদের অভিভাবকদের সচেতনতার অভাবের কারণে এমনটি হয়ে থাকবে। আমরা চাই, শিক্ষার্থীর ওপর দৈহিক নির্যাতন পরিচালনাকারী খালেদ হায়দার মেমোরিয়াল স্কুলের শিক্ষক সেলিম মজুমদারের শাস্তি হোক। এ ব্যাপারে শিক্ষক, শিক্ষার্থী ও অভিভাবদের সচেতনতা সৃষ্টির বিকল্প নেই। শিক্ষকদের মানসিক স্বাস্থ্য সম্পর্কেও খোঁজ রাখার ব্যবস্থা থাকা উচিত।

No comments

Powered by Blogger.