কম্বোডিয়ায় প্রধান তিন খেমাররুজ নেতার বিচার শুরু-গণহত্যা ও মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধের অভিযোগ

ণহত্যা ও মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধের অভিযোগে কম্বোডিয়ার সাবেক খেমাররুজ আমলের তিন শীর্ষ নেতার বিচার শুরু হয়েছে। তাঁদের মধ্যে কুখ্যাত 'ব্রাদার নাম্বার টু' হিসেবে পরিচিত নুয়ান চিয়া-ও আছেন। রাজধানী নমপেনে জাতিসংঘ সমর্থিত যুদ্ধাপরাধ আদালতে গতকাল সোমবার শুনানি শুরু হয়েছে।১৯৭৫ থেকে ১৯৭৯ সাল পর্যন্ত কম্বোডিয়া শাসন করে মাওবাদী খেমাররুজ সরকার।
সে সময় দুর্ভিক্ষ, অতিরিক্ত কাজের চাপ ও রাজনৈতিক হত্যাকাণ্ডে দেশটিতে প্রায় ২০ লাখ লোক প্রাণ হারায়। দেশের প্রায় এক-তৃতীয়াংশ মানুষ তখন নানাভাবে নৃশংসতার শিকার হয়।
আদালতের মুখপাত্র লারস ওলসেন জানান, গতকাল সূচনা বক্তব্যের মধ্যে দিয়ে ট্রাইব্যুনালে শুনানি শুরু হয়েছে। তিনি এ দিনটিকে 'মাইলফলক' হিসেবে অভিহিত করে বলেন, 'এ বিচার হতে পারে, এমন আশা অনেকেই করেননি।'
বিচারের মুখোমুখি করা অন্যরা হলেন সাবেক প্রেসিডেন্ট খিউ সাম্পান ও তৎকালীন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ইয়েং স্যারি। তিনজনেরই বয়স আশির কোঠায়। ২০০৭ সালে গ্রেপ্তারের পর থেকে তাঁরা আটক রয়েছেন। তবে অভিযুক্তরা তাঁদের বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ অস্বীকার করেছেন। তাঁরা তিনজন ছাড়াও তৎকালীন সমাজকল্যাণমন্ত্রী ইয়েং থিরিথের বিরুদ্ধেও একই অভিযোগ আনা হয়। তবে গত সপ্তাহে স্বাস্থ্যগত কারণে তাঁকে বিচারে অনুপযুক্ত ঘোষণা করা হয়। তিনি ওই প্রশাসনের 'ফার্স্টলেডি' হিসেবে পরিচিত ছিলেন।
খেমাররুজ নেতাদের এ বিচারকাজকে অত্যন্ত জটিল বলে বিবেচনা করা হচ্ছে। কম্বোডিয়ানরা এ বিচারের জন্য দীর্ঘদিন ধরে অপেক্ষা করছে। বিচার শুরু উপলক্ষে গতকাল আদালত প্রাঙ্গণ ও আদালতকক্ষে ব্যাপক জনসমাগম হয়। রাষ্ট্র নিয়ন্ত্রিত টেলিভিশন বিচারকাজ সম্প্রচার করে।
খেমাররুজের আমলে ১১ স্বজন হারানো ৭৫ বছর বয়সী কৃষক সাও কুয়োন বলেন, 'আমার খুব ভালো লাগছে। আমি পুরো ঘটনা জানতে চাই। সে কারণেই এখানে এসেছি।'
কয়েকটি ছোট ছোট ধাপে পুরো বিচার প্রক্রিয়া সম্পন্ন হবে। ফলে বিচার প্রক্রিয়া দীর্ঘায়িত হবে বলেই মনে করা হচ্ছে। তবে অভিযুক্তরা সাক্ষ্য দেওয়ার ব্যাপারে খুব একটা আগ্রহী নন। ইয়েং স্যারি জানিয়েছেন, তিনি সাক্ষ্য দেবেন না। আর এর আগের এক শুনানির সময় নুয়ান চিয়া ওয়াকআউট করেন।
জাতিসংঘ বিচারকাজ শুরুকে স্বাগত জানিয়েছে। জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক সংস্থার প্রধান নাভি পিল্লাই গতকাল এক বিবৃতিতে বলেন, 'কম্বোডিয়ার জনসাধারণের জন্য আজ একটি ঐতিহাসিক দিন। অনেক মানুষ এ বিচার শুরুর জন্য দীর্ঘদিন অপেক্ষা করেছে।'
কম্বোডিয়ার মাওবাদী খেমাররুজ সরকার 'আঙ্কার' নামেও পরিচিত ছিল। দলের প্রতিষ্ঠাতা 'পলপট' নামেই বেশি পরিচিত। কৃষিভিত্তিক সমাজব্যবস্থা প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে খেমাররুজ বিপ্লবীরা দেশটিতে ধর্ম, স্কুল ও মুদ্রা বিলুপ্ত করে। শহর থেকে লোকজনকে ধরে নিয়ে তারা গ্রামে কৃষিক্ষেতে কাজ করতে বাধ্য করত এবং যাদের বিপ্লবের শত্রু ভাবা হতো তাদের হত্যা করত। ১৯৭৯ সালে ভিয়েতনাম বাহিনীর অভিযানে খেমাররুজ সরকারের পতন ঘটে। পলপট দেশ থেকে পালিয়ে যান। ১৯৯৮ সালে তিনি মারা যান।
খেমাররুজ নেতাদের বিচারে ট্রাইব্যুনাল গঠনের জন্য ১৯৯০-এর দশকের মাঝামাঝি জাতিসংঘ ও আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সহায়তা চায় কম্বোডিয়া। নমপেনের সঙ্গে দীর্ঘ আলোচনার পর ২০০৬ সালে ট্রাইব্যুনালটি গঠিত হয়। এখন পর্যন্ত এ গণহত্যায় জড়িতদের মধ্যে জীবিত একজনকে ৩৫ বছরের কারাদণ্ড দেন এ আদালত। তাঁর নাম কেইঙ গুয়েক ইভ। 'কমরেড ডাচ' নামে পরিচিত ইভ ছিলেন কম্বোডিয়ার কুখ্যাত তুল স্লেঙ কারাগারের প্রধান। ওই কারাগারে কমপক্ষে ১৪ হাজার নারী-পুরুষ ও শিশুকে নির্যাতন এবং হত্যার অভিযোগ প্রমাণিত হয় তাঁর বিরুদ্ধে। সূত্র : এএফপি, বিবিসি।

No comments

Powered by Blogger.