জ্বালানির দাম বাড়ানোর পরামর্শ আইএমএফের

ন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ) বিভিন্ন খাতে সরকারের দেওয়া ভর্তুকি কমিয়ে আনার পরামর্শ দিয়েছে। তারা মনে করে, জ্বালানি ও বিদ্যুতের মূল্য সমন্বয়ের মাধ্যমে ক্রমান্বয়ে এই ভর্তুকি কমিয়ে আনা যেতে পারে। আইএমএফ দেশে উচ্চ মূল্যস্ফীতি পরিস্থিতিতে সংকোচনমূলক মুদ্রানীতি অনুসরণেরও পরামর্শ দিয়েছে।

বর্তমান পরিস্থিতিতে ব্যাংকগুলোর বিধিবদ্ধ জমা (এসএলআর) ও এর নগদ অংশ (সিআরআর) কমানো ঠিক হবে কি না—এমন প্রশ্নের জবাবে ঢাকায় আইএমএফের মিশনপ্রধান এতেরি ভিনত্রাজে বলেন, সাধারণভাবে এ রকম পরিস্থিতিতে মুদ্রানীতিতে কোনো ধরনের শিথিলতা দেখানো ঠিক নয়। সংস্থাটি একই সঙ্গে সরকারের ব্যাংকঋণ কমিয়ে আনারও পরামর্শ দেয়।
বাংলাদেশের সামষ্টিক অর্থনীতিতে ঝুঁকি ও সম্ভাবনা বিষয়ে আইএমএফের ঢাকা মিশন গতকাল সোমবার এক সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলেছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত সংবাদ সম্মেলনে এতেরি দেশের সামষ্টিক অর্থনীতির বিভিন্ন দিক তুলে ধরেন।
প্রশ্নের জবাবে এতেরি ভিনত্রাজে বলেন, মূল্যস্ফীতিকে নিয়ন্ত্রণে রাখতে বাংলাদেশ ব্যাংক বিচক্ষণতার সঙ্গে ব্যাংকগুলোর এসএলআর ও সিআরআর বৃদ্ধি করেছে এবং এ বিষয়ে কোনো ধরনের পদক্ষেপ নিয়ে নিয়ন্ত্রক সংস্থাকে খাটো করা ঠিক হবে না।
সংস্থাটি বলেছে, বাংলাদেশের জিডিপির প্রবৃদ্ধির হার ভালো, তবে তা এই আঞ্চলিক দেশগুলোর গড়ের তুলনায় কম। রপ্তানি খাতে ভালো অগ্রগতি হচ্ছে এবং দেশের পোশাক খাত বিশ্ববাজারে নতুন করে অংশীদারি বাড়িয়েছে। কিন্তু রপ্তানির এই বৃদ্ধি আমদানি-ব্যয়ের চেয়ে কম। অন্যদিকে প্রবাসী-আয়ের (রেমিট্যান্স) প্রবৃদ্ধির গতি আগের চেয়ে কম।
আবারও জ্বালানি তেলের মূল্যবৃদ্ধির পরামর্শ দিয়ে আইএমএফ বলেছে, মূল্যস্ফীতিকে নিয়ন্ত্রণে রাখতে এটা প্রয়োজন। এতেরি ভিনত্রাজে বলেন, তাঁরা শুধু সমন্বয়ের বিষয়গুলো চিহ্নিত করতে পারেন কিন্তু সরকার এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবে। তিনি বলেন, কলকাতা ও বাংলাদেশের জ্বালানি তেলের মূল্যে পার্থক্য রয়েছে। যে কারণে চোরাচালানের আশঙ্কাও থাকে।
আইএমএফ মিশন বলেছে, সরকারের ব্যাংকঋণের কারণে রিজার্ভ মানি (বীজ টাকা) বৃদ্ধি পাচ্ছে। এতে মূল্যস্ফীতির ওপর চাপ তৈরি করবে। মূল্যস্ফীতি এখন দুই অঙ্কে এবং বর্তমান অবস্থা অব্যাহত থাকলে ভবিষ্যতে এই হার আরও বৃদ্ধি পাবে বলে এতেরি মত দেন।
এতেরি বলেন, এক দশকের মধ্যে বাংলাদেশ প্রথমবারের মতো লেনদেনের ভারসাম্যে ঋণাত্মক অবস্থানে রয়েছে। আমদানি-ব্যয় বৃদ্ধির হার রপ্তানি ও রেমিট্যান্স আয়ের চেয়ে দ্রুত ও বেশি হওয়ায় এ অবস্থা হয়েছে। টাকার মূল্যমান কমে গেছে। বর্তমানে প্রতি ডলার কিনতে ৭৬ দশমিক ৫০ টাকা ব্যয় করতে হচ্ছে। যেখানে জানুয়ারি মাসে প্রতি ডলারের মূল্যমান ছিল ৭১ টাকা।
আইএমএফ আবার বলেছে, বর্তমানে যে রিজার্ভ রয়েছে তা দিয়ে তিন মাসের আমদানি-ব্যয় মেটানো যাবে। কিন্তু বর্তমান অনিশ্চিত বিশ্ব পরিস্থিতিতে রিজার্ভ আরও বেশি থাকা আবশ্যক। তারা বলেছে, কেন্দ্রীয় ব্যাংক টাকার মানকে আস্তে-ধীরে নামিয়ে আনতে ১৪০ কোটি ডলার বাজারে বিক্রি করেছে। সংস্থাটি মুদ্রার বিনিময় হার আরও বেশি বাজারভিত্তিক করার পরামর্শ দিয়েছে।
আইএমএফ বলেছে, বাংলাদেশে কর আদায় বৃদ্ধি, সরকারি ব্যয় ব্যবস্থাপনা এবং আর্থিক খাতের সংস্কার বেসরকারি খাতে গতিশীলতা এনেছে, যা দেশের উচ্চ প্রবৃদ্ধির পথকে প্রশস্ত করেছে।

No comments

Powered by Blogger.