ডিএসইতে লেনদেন ৫০০ কোটি ছাড়াল-দাম বেড়েছে ১২৯টি কম্পানির, কমেছে ১২১টির

শেয়ারবাজার নিয়ে সরকারের ইতিবাচক ঘোষণার অপেক্ষায় গতকাল মঙ্গলবারও বিনিয়োগকারীদের দিন কেটেছে। গত সপ্তাহের বুধবার শেয়ারবাজারসংশ্লিষ্টদের নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর বৈঠকের পর থেকে বিনিয়োগকারীদের যে অপেক্ষা শুরু হয়, রবিবার রাতে অর্থমন্ত্রীর সঙ্গে আবার বাজারসংশ্লিষ্টদের বৈঠকে সুনির্দিষ্ট কোনো সিদ্ধান্ত না আসায় তাঁরা অস্থির হয়ে উঠেন। সে অস্থিরতার প্রমাণ মেলে গতকালের শেয়ারবাজারে।


প্রধানমন্ত্রীর বৈঠকের পর থেকে মূল্যবৃদ্ধির যে প্রবাহ শুরু হয়, তাতে ছেদ পড়ে গতকাল। বারবার দর ওঠানামার পর মাত্র ১০ পয়েন্ট সূচক বৃদ্ধি পায় এদিন। তবে বিনিয়োগকারীদের জন্য কিছুটা আশার খবর দিয়েছেন এসইসির সদস্য হেলালউদ্দিন নিজামী। গতকাল বুধবার অর্থ মন্ত্রণালয়ে অনুষ্ঠিত বৈঠকের পর কালের কণ্ঠকে তিনি জানান, 'আজ মঙ্গলবার এসইসির সভাকক্ষে সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে শেয়ারবাজার-সংক্রান্ত একগুচ্ছ প্যাকেজ ঘোষণা করবে এসইসি।'
প্রধানমন্ত্রীর বৈঠকের খবরে বুধ ও বৃহস্পতিবার অনেকগুলো কম্পানির বিক্রেতা খুঁজে পাওয়া যায়নি। বুধ, বৃহস্পতি ও রবিবার ডিএসইর সূচক বৃদ্ধি পেয়েছে ৬৬৪ পয়েন্ট। অথচ গতকাল বেড়েছে মাত্র ৯.৪৬ পয়েন্ট। দিনশেষে তা ৫৩২২.৬৮ পয়েন্টে স্থির হয়। গতকাল ঢাকা স্টক এঙ্চেঞ্জে (ডিএসই) মোট ২৫৬টি কম্পানির সাত কোটি ৩৩ লাখ ৪৮ হাজার ৭৪টি শেয়ার ও মিউচ্যুয়াল ফান্ডের লেনদেন হয়েছে। মোট লেনদেনের পরিমাণ ছিল ৫১৯ কোটি ৪৫ লাখ ৬২ হাজার ৫৭ টাকা। লেনদেনের পরিমাণ আগের দিনের তুলনায় বেড়েছে ৪৩ কোটি ৮০ লাখ টাকা। ডিএসইর বাজার মূলধনের পরিমাণ ছিল দুই লাখ ৬৪ হাজার ৩৭২ কোটি ৯৬ লাখ ৫৯ হাজার ৪১৩ টাকা। ডিএসইর বাজার পরিস্থিতি পর্যালোচনায় আরো দেখা গেছে, লেনদেন হওয়া ২৫৬টি কম্পানির মধ্যে দাম বেড়েছে ১২৯টির, কমেছে ১২১টির এবং অপরিবর্তিত থেকেছে ছয় কম্পানির শেয়ারের দাম।
বাজার পরিস্থিতি সম্পর্কে আইডিএলসি ম্যানেজমেন্টের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. মনিরুজ্জামান কালের কণ্ঠকে বলেন, এ কয়েক দিন প্রধানমন্ত্রীর বৈঠকের প্রভাবে বাজার বেড়েছে। তবে গতকাল কোনো সুনির্দিষ্ট ঘোষণা না আসায় কিছুটা হতোদ্যম হয়েছেন বিনিয়োগকারীরা। এ ছাড়া তিন দিন আগে যাঁরা শেয়ার কিনেছিলেন, তাঁরা সোমবার বিক্রি করেছেন। এ জন্য বাজারে একধরনের অস্থিরতা তৈরি হয়। ব্র্যাক ইপিএলের বিনিয়োগকারী বি এম কামাল বলেন, 'এসইসির পক্ষ থেকে গতকাল হঠাৎ বিভিন্ন টেলিভিশন চ্যানেলে একটি সতর্কবাণী প্রচার করা হয়। তাতে বলা হয়, শেয়ারবাজার ঝুঁকিপূর্ণ, বুঝে-শুনে বিনিয়োগ করুন।' তিনি বলেন, ডিএসইর ওয়েবসাইটে এটা প্রতিদিনই প্রচার করা হয়। এই মুহূর্তে হঠাৎ টেলিভিশন চ্যানেলগুলোয় এভাবে এই সতর্কবাণী বিনিয়োগকারীদের ভীত করে তোলে। কামাল বলেন, সতর্ক বার্তা প্রচার না করে সচেতন বার্তা প্রচার করা উচিত ছিল।
লেনদেনের ভিত্তিতে গতকালের প্রধান ১০টি কম্পানি হলো মার্কেন্টাইল ব্যাংক, গ্রামীণফোন, লাফার্জ সুরমা সিমেন্ট, বেঙ্মিকো, সোস্যাল ইসলামী ব্যাংক, ন্যাশনাল ব্যাংক, এম আই সিমেন্ট, ইউসিবিএল, ফু-ওয়াং সিরামিকস্ ও তিতাস গ্যাস্।
মূল্যবৃদ্ধির শীর্ষে গতকালের শীর্ষ ১০টি কম্পানি হলো সিটি জেনারেল ইনস্যুরেন্স, বিডি ফাইন্যান্স, ম্যাকসন স্পিনিং, এম আই সিমেন্ট, সিএমসি কামাল, মালেক স্পিনিং, গ্রামীণ ১, মেঘনা কনডেন্সড মিল্ক ও ফেডারেল ইনস্যুরেন্স।
অন্যদিকে দাম কমার শীর্ষে প্রধান ১০টি কম্পানি হলো ন্যাশনাল টিউবস্, ফু-ওয়াং সিরামিকস্, দ্বিতীয় আইসিবি, ডেল্টা ব্র্যাক হাউজিং প্রথম মিউচ্যুয়াল ফান্ড, মার্কেন্টাইল ব্যাংক মিউচ্যুয়াল ফান্ড, বাংলাদেশ শিপিং করপোরেশন, সাভার রিফ্রেক্টরিজ, এটলাস বাংলাদেশ, আইসিবি তৃতীয় এনআরবি ও বেঙ্মিকো ফার্মা।
অন্যদিকে চট্টগ্রাম স্টক এঙ্চেঞ্জের (সিএসই) সার্বিক মূল্যসূচক ৪১.৩০ পয়েন্ট বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১৫১৪৫.৬০ পয়েন্টে। সিএসইতে লেনদেন হওয়া ১৭৭টি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে বেড়েছে ১০৮টির, কমেছে ৬৭টির আর অপরিবর্তিত রয়েছে দুটি প্রতিষ্ঠানের শেয়ারের দাম। স্টক এঙ্চেঞ্জটিতে গতকাল ৫৬ কোটি টাকা লেনদেন হয়েছে, যা গতকালের চেয়ে চার কোটি টাকা বেশি।

No comments

Powered by Blogger.