আসল পরীক্ষা তো মিরপুরের উইকেটে! by সাইদুজ্জামান

টেস্ট ম্যাচে বৃষ্টি বরাবরই আশীর্বাদ হয়ে এসেছে বাংলাদেশ দলের জন্য। এবারই এর ব্যতিক্রম। সামান্য বৃষ্টিতে চট্টগ্রাম জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামে দুই দিন খেলা বন্ধ থাকা নিয়ে দীর্ঘশ্বাস ঢাকায়ও শোনা যাচ্ছে। আহা, যদি খেলা হতো, তাহলে...!জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামে হয়নি তো কী, শেরেবাংলা জাতীয় স্টেডিয়াম আছে না! ঢাকা টেস্টকে ঘিরে ভালো কিছুর সম্ভাবনাই দেখছেন নির্বাচক কমিটির সদস্য হাবিবুল বাশার। তবে এখানকার কালো মাটির উইকেট কখন যে কী চরিত্র মেলে ধরবে, তা এ মাঠে অসংখ্য ম্যাচ খেলে ফেলা বাংলাদেশ দলের ক্রিকেটারদের কাছেই এখনো স্পষ্ট নয়।


সাধারণ ধারণা, এখানে বল একটু 'স্কিড' (পিছলে যায়) করে, যা বোলারদের জন্য বাড়তি সহায়তা। অবশ্য সেরকম যে হবেই তারও শতভাগ নিশ্চয়তা নেই। মিরপুরের উইকেটে ওয়ানডেতে ৫৮ আর ৭৮ রানে অল আউট হয় বাংলাদেশ। আবার একই মাঠে বিশ্বকাপে ৩৭১ রান করেছিল ভারত। উইকেট সম্পর্কে মিরপুরের মাঠকর্মীরাও তাই আগাম মন্তব্য করতে সাবধান। পোড় খেয়ে এখন তো আর করেনই না!
মিরপুরের উইকেটকে ঘিরে সন্দিহানদের দলে বাশারও আছেন, 'এখনকার কথা বলতে পারব না, তবে মিরপুরের উইকেটটা খেলোয়াড়ি জীবনে কোনোদিনই বুঝতে পারিনি। একদিন খুব বাউন্স দেখলাম তো পরের ম্যাচে দেখি পুরোপুরি ব্যাটিং উইকেট। বল স্কিড করে। কখনো বা খুব নিচু হয়ে আসে। কালো মাটির এ উইকেট নিয়ে আসলে চূড়ান্ত কিছু বলার নেই। মনে আছে ২০০৬ সালে আমার অধিনায়কত্বের শেষ টেস্টে উইকেটে অনেক বাউন্স আছে ভেবে ভারতকে ব্যাটিংয়ে পাঠিয়েছিলাম। কিন্তু ওরা ৬০০ রান করেছিল।' মুশফিকদের ঘিরে আবার এ ভাবনা নেই নির্বাচকের, 'উইকেটের এ চরিত্র আমাদের ব্যাটসম্যানদের জন্য সমস্যা হবে না, কারণ এ মাঠে ওরা আমার চেয়ে অনেক বেশি ম্যাচ খেলেছে। তা ছাড়া সবাই খুব ভালো টাচে আছে। যদি ভাবনার সঙ্গে না-ও মেলে উইকেটের চরিত্র, তবু সেটা মানিয়ে নেওয়ার ক্ষমতা ওদের আছে।'
অধিনায়কত্বের মধুচন্দ্রিমায় ২৯ অক্টোবর শুরু হতে যাওয়া মিরপুর টেস্টেও টস জিতবেন মুশফিকুর রহিম; বাজিকরদের কাছে এর দর সবচেয়ে কম হওয়ারই কথা, কারণ জাতীয় দলের অধিনায়কত্বের প্রথম টস থেকে এ পর্যন্ত পাঁচবারই ভাগ্যের লড়াইয়ে জয়ী মুশফিক। 'ল অব অ্যাভারেজ' মাথায় রেখেও তাই টসে মুশফিকের জয়ই সম্ভাবনার দৌড়ে এগিয়ে। তো, টস জিতে কি সিদ্ধান্ত নেবেন বাংলাদেশ অধিনায়ক? মিরপুরে পরে ব্যাট করার সুখস্মৃতি তেমন একটা নেই। তার ওপর নিজ দলের বোলিং স্পিনকেন্দ্রিক। সময় যত গড়াবে, ততই উইকেট ভেঙে স্পিনারদের সুবিধা দেবে। তাই ধরে নেওয়া যায়, ব্যাটিংয়ের সিদ্ধান্তই হয়তো নেবেন মুশফিক।
এর পরই হয়তো ছুটে আসবে ক্যারিবীয় ফাস্ট বোলারদের বল। সেটিও চট্টগ্রামের চেয়ে বাড়তি বাউন্স নিয়ে। অবশ্য এ নিয়ে মোটেও চিন্তিত নন হাবিবুল বাশার, 'রামপাল-এডওয়ার্ডসদের চেয়ে ভালো বোলিংও ওরা খেলেছে। জেমস অ্যান্ডারসন-ব্রেসনানরা তো বর্তমান ক্যারিবীয় পেসারদের চেয়ে ভালো। ওদের বিপক্ষে তামিমরা খেলেছে লর্ডস এবং ওল্ড ট্র্যাফোর্ডের মতো উইকেটে। তাই সিরিজের শুরু থেকে ক্যারিবীয় পেস নিয়ে যত কথা হয়েছে, আমার কিন্তু সেরকম মনে হয়নি।' সঙ্গে চট্টগ্রাম টেস্টে সে ভয় মুছে যাওয়ার অনুপ্রেরণাও পাচ্ছেন তিনি, 'মানছি চট্টগ্রামের তুলনায় ঢাকায় ক্যারিবীয় ফাস্ট বোলাররা বাড়তি বাউন্স পাবে, তবে ওদের তো ছেলেরা খেলে ফেলেছে। তাই আশা করি এতে কোনো অসুবিধা হবে না।' জাতীয় দলের সাবেক এ অধিনায়ক বাড়িয়ে বলেননি। ক্যারিবীয় ফাস্ট বোলারদের গতি আছে, এটা মানেন জাতীয় দলের প্রত্যেক ক্রিকেটারই। তবে সে গতি যে প্রায়ই দিকভ্রান্ত হয়, এ পূর্ব ধারণা মিলে যাওয়ায় স্বস্তির হাওয়াও বইছে বাংলাদেশের ড্রেসিংরুমে।
অবশ্য শুধু বাংলাদেশের ব্যাটসম্যান কেন, মিরপুরের উইকেটে ক্যারিবীয় ব্যাটসম্যানদেরও ঘাবড়ে যাওয়ার সম্ভাবনা আছে। উইকেটের অদ্ভুতুড়ে চরিত্রের কারণে এ মাঠকেই প্রথম পছন্দ বাংলাদেশি বোলারদের। সে পেসার কিংবা স্পিনার, যার কথাই বলুন না কেন। তো, সেই পছন্দের উইকেটে লেন্ডল সিমন্স-মারলন স্যামুয়েলসদের জীবন কি দুর্বিষহ করে তুলতে পারবেন না সাকিব-সানিরা? হাবিবুল বাশারের মনে স্বপ্নের ঝিলিক,'শুধু মিরপুর কিংবা চট্টগ্রাম না, আমাদের স্পিনাররা বিশ্বের সব ভেন্যুতেই ভালো বোলিং করে আসছে। উইকেট থেকে সামান্য একটু সহায়তা পেলে ওরা যে কোনো ব্যাটসম্যানকে বিপাকে ফেলতে পারে। মিরপুরের উইকেটে তো সেরকম কিছু থাকবেই।'
তবে বড় দল আর ছোট দলের একটা পার্থক্য তো থাকেই। সেটা আরো বেশি ফুটে ওঠে সিরিজ গড়ানোর সঙ্গে পাল্লা দিয়ে। ঐতিহ্য আর র‌্যাংকিং মিলিয়ে এ সিরিজে সফরকারীরাই বড় দল। তাই চট্টগ্রামে করা ভুলগুলো দ্রুত শুধরে ঢাকায় নামবে ক্যারিবীয়রা, এটা প্রত্যাশিত। আর ছোট দলের সমস্যা শরীর এবং মনে। সিরিজ যত গড়ায়, ততই ক্লান্তি ঘিরে ধরে শরীর এবং মনকে। তবে এবার অন্য রকম কিছুই প্রত্যাশা করছেন হাবিবুল বাশার, 'সেই আশঙ্কা দেখছি না, কারণ ওরা অনেক ফিট। তা ছাড়া চট্টগ্রামে ভালো করার অনুপ্রেরণাও আছে।' এমন সুদিনে তাঁর চাওয়া, 'শেষটা ভালো করা জরুরি। বিশেষ করে যদি ধারাবাহিকতার কথা বলেন। একটা দল তখনই ভালো যখন তারা নিয়মিত পারফর্ম করে। আমি মনে করি বাংলাদেশ দল এবার সেটা করে দেখাতে পারবে। সে সামর্থ্য এবং আত্মবিশ্বাস দলের আছে।'

No comments

Powered by Blogger.