রাষ্ট্রায়ত্ত শিল্প প্রতিষ্ঠান লোকসানে চলছে by আবু হেনা মুহিব

বেশির ভাগ রাষ্টায়ত্ত শিল্প প্রতিষ্ঠান লোকসানে চলছে। বস্ত্র ও পাট এবং শিল্প মন্ত্রণালয়ের অধীনে থাকা ৩৯ প্রতিষ্ঠানের মধ্যে ৩৪টিই লোকসানে চলছে। ১৩টি দীর্ঘদিন ধরে বন্ধ। এসব প্রতিষ্ঠানের লোকসানের পরিমাণ ৪ হাজার কোটি টাকার মতো। দায়দেনার পরিমাণ সাড়ে ৬ হাজার কোটি টাকার ওপরে। সম্প্রতি প্রকাশিত প্রাইভেটাইজেশন কমিশনের সমীক্ষা প্রতিবেদন সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে। রাষ্ট্রায়ত্ত শিল্প প্রতিষ্ঠানের বর্তমান সার্বিক অবস্থা জানার জন্য প্রাইভেটাইজেশন কমিশন সরেজমিন একটি জরিপ পরিচালনা করে।


'সমীক্ষা প্রতিবেদন-১১' নামে এ প্রতিবেদন কমিশনের পক্ষ থেকে শিগগিরই প্রধানমন্ত্রীর কাছে পেশ করা হবে।
প্রাইভেটাইজেশন কমিশনের চেয়ারম্যান ড. মির্জা আবদুল জলিল এ প্রসঙ্গে গতকাল সমকালকে জানান, রাষ্ট্রায়ত্ত এসব প্রতিষ্ঠান দীর্ঘদিন ধরে বন্ধ থাকার কারণে অর্থনীতিতে নেতিবাচব প্রভাব পড়ছে। উৎপাদন নেই, অভ্যন্তরীণ চাহিদা কিংবা রফতানি কিছুতেই কোনো অবদান নেই, কর্মসংস্থান নেই, আছে লোকসান। লোকসানি এ প্রতিষ্ঠানগুলো পাহারা দিতে চলছে ব্যয়ের উৎসব। মির্জা জলিল বলেন, 'দীর্ঘদিন বন্ধ থাকার কারণে হাজার হাজার কোটি টাকার মেশিনারিজ নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। ফলে সরকারি-বেসরকারি পর্যায়ে এসব শিল্প প্রতিষ্ঠান আর কোনোভাবেই চালু করা যাবে না। রাষ্ট্রীয় সম্পদ সাশ্রয়ের স্বার্থে এসব প্রতিষ্ঠান বেসরকারিকরণের মাধ্যমে চালু করা জরুরি। আমাদের গরিব দেশের পক্ষে বছরের পর বছর এ সব লোকসানি শিল্প প্রতিষ্ঠানের দায়দেনা এবং লোকসান বহন করা সম্ভব নয়।'
সূত্র জানায়, বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয়ের অধীনে বাংলাদেশ টেক্সটাইল মিলস করপোরেশন (বিটিএমসি) পরিচালিত ১৫টি টেক্সটাইল মিল পরিদর্শন করে সমীক্ষা দল। এর মধ্যে একমাত্র ভালিকা উলেন মিলস করপোরেশন বর্তমানে চালু অবস্থায় পাওয়া গেছে। ৫টি মিল আংশিকভাবে সার্ভিস চার্জে চলছে। সার্ভিস চার্জে চলা এ ৫টির মধ্যে ৪টিই লোকসান দিচ্ছে। বাকি প্রতিষ্ঠানটি না লাভ না ক্ষতির ভিত্তিতে চলছে। টেক্সটাইল মিলস করপোরেশন পরিচালিত বাকি ৯টি মিল বর্তমানে বন্ধ রয়েছে। ভালিকা উলেন মিলসহ বন্ধ ১৪ মিলের দায়দেনার পরিমাণ ৮৮২ কোটি ১৪ লাখ ৩৯ হাজার টাকা। বাকি একটি মিল খুলনা টেক্সটাইল মিলের দায়দেনার তথ্য পাওয়া যায়নি। টেক্সটাইল মিলস করপোরেশনের অধীনে এ ১৫ মিলের মধ্যে ১২টির পুঞ্জীভূত লোকসানের পরিমাণ ৮৬২ কোটি ২ লাখ ১৯ হাজার টাকা। এ খাতের অবশিষ্ট ৩ মিলের আর্থিক লোকসানের তথ্য পাওয়া যায়নি।
বাংলাদেশ জুট মিলস করপোরেশনের (বিজেএমসি) অধীনে রাজশাহী জুট মিলের দায়দেনার পরিমাণ ১৯৪ কোটি ১৩ লাখ ৫৩ হাজার টাকা। পুঞ্জীভূত লোকসানের পরিমাণ ১২৬ কোটি ২৫ লাখ ২৬ হাজার টাকা।
শিল্প মন্ত্রণালয়ের অধীনে বাংলাদেশ কেমিক্যাল ইন্ডাস্ট্রিজ করপোরেশন (বিসিআইসি) পরিচালিত কাগজ, চামড়া, সিমেন্ট খাতের মোট ৯টি মিলের চলতি ও দীর্ঘমেয়াদি এবং অন্যান্য মিলে দায়দেনার পরিমাণ ১ হাজার ৯৭৩ কোটি ৫১ লাখ ২১ হাজার টাকা। পরিদর্শনকৃত ৯টির মধ্যে ৪টি প্রতিষ্ঠান বর্তমানে বন্ধ রয়েছে। চালু ৫ প্রতিষ্ঠানের মধ্যে ৪টিই লোকসানি। উসমানিয়া গ্গ্নাস শিট ফ্যাক্টরি এ করপোরেশনের অধীনে একমাত্র লাভজনক প্রতিষ্ঠান। লোকসানি এ ৮ প্রতিষ্ঠানের পুঞ্জীভূত লোকসানের পরিমাণ ১ হাজার ২১০ কোটি ৩৭ লাখ ১০ হাজার টাকা।
একই মন্ত্রণালয়ের অধীনে বাংলাদেশ ইস্পাত ও প্রকৌশল সংস্থা পরিচালিত ৪টি শিল্প প্রতিষ্ঠানের দায়দেনার পরিমাণ ৪৬০ কোটি ৭৬ লাখ ৪৮ হাজার টাকা। পরিদর্শনকৃত এসব প্রতিষ্ঠানের মধ্যে ৩টি লাভজনক এবং একমাত্র চট্টগ্রাম ড্রাইডকের পুঞ্জীভূত লোকসানের পরিমাণ ৫৯৫ কোটি ৩১ লাখ টাকা। অবশিষ্ট তিন প্রতিষ্ঠানের লাভের পরিমাণ ৩১ কোটি ৭৯ লাখ ৮৬ হাজার টাকা।
শিল্প মন্ত্রণালয়েরই অধীনে থাকা বাংলাদেশ চিনি ও খাদ্য শিল্প করপোরেশনের বন্ধ ১০টি মিলের সব ক'টিই চালু অবস্থায় থাকলেও ৯টিই লোকসানি প্রতিষ্ঠান। কেরু অ্যান্ড কোম্পানি এ খাতের একমাত্র লাভজনক প্রতিষ্ঠান। চালু বাকি ৯ প্রতিষ্ঠানের পুঞ্জীভূত লোকসানের পরিমাণ ৮২৯ কোটি ৪২ লাখ ২৬ হাজার টাকা। সমীক্ষা দলের পরিদর্শনকৃত ৬টি মিলের দায়দেনার পরিমাণ ৭৯৪ কোটি ৬৭ লাখ ৫৮ হাজার টাকা। সমীক্ষা দল বাকি ৪টি মিলের প্রকৃত দায়দেনার হিসাব উদ্ধার করতে পারেনি।

No comments

Powered by Blogger.