ছাত্রলীগ-ছাত্রশিবির সংঘর্ষে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ

ছাত্রলীগ ও ছাত্রশিবিরের মধ্যে সংঘর্ষের কারণে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। আজ বৃহস্পতিবার দুপুর ২টার মধ্যে আবাসিক শিক্ষার্থীদের হল ত্যাগের নির্দেশ দিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। বিশ্ববিদ্যালয়ের লালন শাহ হলের ডাইনিং ম্যানেজারের নিয়োগকে কেন্দ্র করে গত মঙ্গলবার ছাত্রলীগ ও ছাত্রশিবিরের মধ্যে সংঘর্ষে ৪০ ছাত্র আহত হন। এ কারণে ক্যাম্পাসে থমথমে অবস্থা বিরাজ করছিল।গতকাল প্রভোস্ট কাউন্সিলের জরুরি সভায় ছাত্রদের হল ছাড়তে বলাসহ বেশ কয়েকটি সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। পরে প্রশাসনিক বৈঠকে উপাচার্য অধ্যাপক ড. এম আলাউদ্দিন তা অনুমোদন দেন। বিকেল সাড়ে ৪টায় কর্তৃপক্ষ নোটিশের মাধ্যমে আবাসিক শিক্ষার্থীদের হল ছাড়ার নির্দেশ দেয়।


আগামী ২৬ নভেম্বর হলগুলো খুলে দেওয়া হবে বলে নোটিশে বলা হয়েছে। তবে অফিস ২ থেকে ১৪ নভেম্বর পর্যন্ত বন্ধ থাকবে।
ছাত্রলীগ ও ছাত্রশিবিরের মধ্যে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষের কারণে অনেক শিক্ষার্থী গতকাল থেকেই হল ছাড়তে শুরু করে। বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে ক্যাম্পাসে র‌্যাব, পুলিশ, ডিবি, আর্মড ব্যাটালিয়ানসহ নিরাপত্তা বাহিনীর চার শতাধিক সদস্য মোতায়েন করা হয়েছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, লালন শাহ হলের বর্তমান ডাইনিং ম্যানেজার তোতা মিয়াকে বাদ দিয়ে গোলাপ মিয়া নামের অন্য একজনকে নিয়োগ দেওয়ার ঘটনাকে কেন্দ্র করে দুপুর ১টার দিকে ছাত্রলীগ ও শিবিরের কয়েকজন নেতা-কর্মীর মধ্যে কথাকাটাকাটির ঘটনা ঘটে। দুপুর ২টার দিকে হলের ভারপ্রাপ্ত প্রভোস্ট তৌফিক এলাহী, ছাত্র উপদেষ্টা ড. মেহের আলী, ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগ শাখার সভাপতি জাহাঙ্গীর হোসেন, শিবিরের দপ্তর সম্পাদক আসাদুল্লাহসহ উভয় দলের নেতা-কর্মীরা সাংবাদিকদের উপস্থিতিতে বিষয়টি মীমাংসার জন্য প্রভোস্ট অফিসে বৈঠকে বসে। মিটিং চলার সময় প্রভোস্ট অফিসের বাইরে ছাত্রলীগ ও শিবিরের কিছু উচ্ছৃঙ্খল কর্মীর মধ্যে আবার কথা কাটাকাটি শুরু হয়। একপর্যায়ে শিবিরের এক কর্মীকে ছাত্রলীগের এক বহিরাগত কর্মী ছুরিকাঘাত করলে সংঘর্ষ বাধে। এ সময় মিটিং করতে আসা সবাই প্রভোস্টের রুমে অবরুদ্ধ হয়ে পড়ে।
পরে বিশ্ববিদ্যালয়ের শেখপাড়া বাজার গেটে উভয় সংগঠনের নেতা-কর্মীদের মধ্যে প্রচণ্ড সংঘর্ষ চলতে থাকে। শিবিরের নেতা-কর্মীরা ক্যাম্পাসের ভেতরে অবস্থান নিলে ছাত্রলীগ সংঘবদ্ধ হয়ে ক্যাম্পাসে প্রবেশ করার চেষ্টা করে। এ সময় উভয় সংগঠনের নেতা-কর্মীরা দা, চাপাতি, ককটেল, লাঠি নিয়ে তুমুল সংঘর্ষে লিপ্ত হয়। তখন অর্ধশতাধিক গুলির শব্দ পাওয়া যায়। উভয় সংগঠনের প্রায় ৪০ জন আহত হয়। আহতদের প্রথমে বিশ্ববিদ্যালয়ের চিকিৎসাকেন্দ্রে নিয়ে যাওয়া হয়। গুরুতর আহত সাতজনকে পরে কুষ্টিয়া সদর হাসপাতালে পাঠানো হয়।
ক্যাম্পাস পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে বিশ্ববিদ্যালয়ের ট্রেজারারসহ প্রক্টরিয়াল বডির কয়েকজন সদস্য ইবি থানার পুলিশ নিয়ে ঘটনাস্থলে আসেন। কিন্তু তাঁরা সংঘর্ষ নিয়ন্ত্রণে আনতে সম্পূর্ণ ব্যর্থ হন। পরে কুষ্টিয়া থেকে অতিরিক্ত পুলিশ, ডিবি পুলিশ ও র‌্যাব এসে বিকেল ৪টায় পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। পুলিশ ১৮ রাউন্ড শটগানের গুলি ও ২৪টি টিয়ারশেল নিক্ষেপ করে। বিকেল ৫টায় লালন শাহ হলে তল্লাশি চালায় পুলিশ। এ সময় দুটি চাপাতি, একটি ছোরা, আটটি রডসহ কিছু ইট-পাথর উদ্ধার করে।
সংঘর্ষের পর বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন মঙ্গলবার রাত সাড়ে ৩টা পর্যন্ত ছাত্রলীগ ও শিবিরের নেতা-কর্মীদের সঙ্গে দফায় দফায় বৈঠক করে। উদ্ভূত এ পরিস্থিতিতে গতকাল শিক্ষার্থীরা ক্যাম্পাস ছাড়তে শুরু করেন। কুষ্টিয়া-ঝিনাইদহ রুটে পরিবহন ধর্মঘট থাকায় ঝুঁকি নিয়ে নসিমন, করিমনে করেই যাত্রা করেন তাঁরা।
বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রক্টর আবু হেনা মোস্তাফা জামাল হ্যাপি বলেন, 'শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তার জন্য আমরা ক্যাম্পাসে পুলিশ মোতায়েন করেছি। সংঘর্ষ এড়াতে আমরা সব ধরনের ব্যবস্থা গ্রহণ করেছি।'

No comments

Powered by Blogger.