চিকিৎসা সহকারী বনেছেন ক্লিনিকের ডাক্তার-অপচিকিৎসা, কেটে ফেলতে হচ্ছে শিশু তাজবীরের হাত by রফিকুল ইসলাম,

তদরিদ্র ভ্যানচালক আবদুল মালেকের একমাত্র ছেলে তাজবীর হোসেন। মাত্র পাঁচ বছর বয়স ওর। শৈশবের দুরন্তপনায় বাবার ভ্যানে চড়ে খেলতে খেলতেই অসাবধানতাবশত পড়ে গিয়ে বাম হাতটা কনুইয়ের কাছে ভেঙে যায়। একমাত্র শিশুর ভাঙা হাত ঠিক করাতে নওগাঁর মান্দা উপজেলা সদরের 'মা ক্লিনিকে' ছুটে যান মালেক। সেখানে ছেলের চিকিৎসা করানোর নামে তাঁর কাছ থেকে টাকা নেওয়া হলেও এক হাতুড়ের অপচিকিৎসায় তাজবীরের বাম হাত এখন কেটে ফেলার উপক্রম। বর্তমানে শিশুটির পচন ধরা হাতের চিকিৎসা চলছে রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে।


রামেক হাসপাতালের ডাক্তাররা বলছেন, ওই শিশুটির বাম হাতে পচনের সৃষ্টি হয়েছে। শিশুটির হাতটির বর্তমান যে অবস্থা, তাতে ভালো না হওয়ার সম্ভাবনা বেশি। আর যদি ভালো করা না যায়, তাহলে তার বাম হাতের কনুই পর্যন্ত কেটে ফেলতে হবে। আর কাটা না হলেও ওই হাতটি দিয়ে সে আর কখনো কাজ করতে পারবে না। পুরো বাম হাতটি অকেজো হয়ে যাবে।
তাজবীরের বাবা আবদুল মালেক জানান, গত ৬ অক্টোবর তাঁর ভ্যানগাড়ি থেকে পড়ে গিয়ে হাত ভাঙার পর ছেলে তাজবীরকে নিয়ে মান্দা উপজেলা সদরের মা ক্লিনিকে যান তিনি। সেখানে ডাক্তার সেজে বসে থাকা মান্দা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেঙ্রে চিকিৎসা সহকারী মাসুদুজ্জামান ৮০০ টাকা খরচের বিনিময়ে তাঁর ছেলের চিকিৎসা শুরু করেন। কিন্তু তাঁর বেঁধে দেওয়া ব্যান্ডেজে ছেলেটি অস্বস্তি বোধ করে কান্নাকাটি করলে এবং হাতটি ফুলতে শুরু করায় আবারও তাকে মা ক্লিনিকে নিয়ে আসা হয়। নকল ডাক্তার মাসুদুজ্জামান সেদিন ব্যান্ডেজের কিছু অংশ কেটে দেন। এতেও শিশুটির অস্বস্তি না কমায় পরদিন আবারও তারা ওই ক্লিনিকে মাসুদুজ্জামানের শরণাপন্ন হন। ভুয়া ডাক্তার মাসুদুজ্জামান তখন ব্যান্ডেজটি পাল্টে নতুন ব্যান্ডেজ বেঁধে দিয়ে আরো ২০০ টাকা ফি নেন। এর কয়েক দিন পর শিশুটির হাতে আবার সমস্যা দেখা দিলে মাসুুদুজ্জামান আর কিছু করতে পারবেন না বলে জানিয়ে দেন। এরপর গত ১৫ অক্টোবর তাকে রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের এক নম্বর ওয়ার্ডে ভর্তি করা হয়।
শিশুটির মা তাসলিমা খাতুন জানান, রামেক হাসপাতালে আনার পর এ পর্যন্ত তাজবীরের চিকিৎসা বাবদ আরো অন্তত সাড়ে সাত হাজার টাকা ব্যয় হয়েছে। তার পরও ডাক্তারের কথামতো তাজবীরের হাত নিয়ে তারা এখন শঙ্কিত।

No comments

Powered by Blogger.