বিশ্ব জনসংখ্যা প্রতিবেদন প্রকাশ-এ গ্রহ কি বাসযোগ্য থাকবে?

রিবারের আকার ছোট হচ্ছে, কিন্তু সংখ্যা বাড়ছে। ফলে জনসংখ্যা বেড়েই চলেছে। এর কারণ শিশু মৃত্যুর হার কমছে, মানুষের গড় আয়ু বাড়ছে। কিন্তু এ সাফল্য আমাদের নতুন চ্যালেঞ্জের দিকে ঠেলে দিচ্ছে। এত মানুষের খাবার জুটবে কোথা থেকে? প্রত্যেকের জন্য বাসস্থান ও শিক্ষার ব্যবস্থা হবে কিভাবে? বিশুদ্ধ বায়ু ও পানি কি পাবে সবাই? এ গ্রহ কি থাকবে বাসযোগ্য?গভীর উদ্বেগ নিয়ে এসব কথা বললেন জাতিসংঘ জনসংখ্যা তহবিলের (ইউএনএফপিএ) বাংলাদেশ প্রতিনিধি আর্থার এরকেন।


গতকাল বুধবার রাজধানীর রূপসী বাংলা হোটেলে পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তর আয়োজিত অনুষ্ঠানে ইউএনএফপিএর 'বিশ্ব জনসংখ্যা পরিস্থিতি-২০১১' প্রতিবেদন প্রকাশকালে তিনি এ বক্তব্য দেন। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন পরিকল্পনামন্ত্রী এ কে খন্দকার।বিশ্বের সব দেশের বিভিন্ন সহযোগী সংস্থার সহায়তা নিয়ে জনসংখ্যা পরিস্থিতি বিষয়ক '৭০০ কোটির বিশ্বে মানুষ ও সম্ভাবনা' শীর্ষক প্রতিবেদনটি তৈরি করেছে ইউএনএফপিএ। ১২৫ পৃষ্ঠার এ প্রতিবেদনে বিভিন্ন দেশের জন্মহার, মৃত্যুহার, যুবসমাজ, নগরায়ণসহ বিভিন্ন বিষয় তুলে ধরা হয়েছে।
ইউএনএফপিএর জরিপ অনুযায়ী আর মাত্র চার দিন পর ৩১ অক্টোবরে বিশ্বের জনসংখ্যা ৭০০ কোটিতে পেঁৗছাবে। প্রতিবেদনটিতে বলা হয়েছে, বর্তমানে পৃথিবীতে ৬০ বছরের অধিক বয়স্ক ব্যক্তির সংখ্যা প্রায় ৮৯৩ মিলিয়ন। এ শতাব্দীর মাঝামাঝি এ সংখ্যা দাঁড়াবে ২১৮ বিলিয়ন। বর্তমানে প্রতি দুজন ব্যক্তির মধ্যে একজন শহরে বাস করে এবং আগামী ৩৫ বছরে প্রতি তিনজনের মধ্যে দুজন শহরে বাস করবে। পৃথিবীর মোট জনসংখ্যার ৪৩ শতাংশের বয়স ২৫ বছরের কম এবং কোনো কোনো দেশে তা প্রায় ৬০ শতাংশ।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বর্তমানে বাংলাদেশের জনসংখ্যা ১৫ কোটি ১৪ লাখ ১০ হাজার। ২০২০ সাল নাগাদ এ সংখ্যা দাঁড়াবে ১৭ কোটি ৩৪ লাখ। বর্তমানে দেশের জনসংখ্যার ঘনত্ব প্রতি বর্গ কিলোমিটারে ৯৯৩ জন। জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার ১ দশমিক ৩৯ শতাংশ। প্রজনন হার ২ দশমিক ৫ শতাংশ। জন্ম নিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি ব্যবহারের হার ৬১ দশমিক ৭ শতাংশ। মাতৃমৃত্যুর হার ১ দশমিক ৯৪ শতাংশ এবং শিশু মৃত্যুর হার ৫২ শতাংশ। পুরুষের গড় আয়ু ৬৫ দশমিক ৭ শতাংশ এবং নারীর ৬৮ দশমিক ৩ শতাংশ।
প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, উন্নয়নশীল দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশ একটি ব্যতিক্রম অবস্থানে রয়েছে। ১৯৭০ সালের তুলনায় বর্তমানে এ দেশের প্রজনন হার ৬০ শতাংশ হ্রাস পেয়েছে। পরিবার পরিকল্পনা পদ্ধতি ব্যবহারের হার প্রায় ৬২ শতাংশে উন্নীত হয়েছে। তবে সত্তরের দশকের জনসংখ্যা বৃদ্ধির উচ্চহার, বয়স কাঠামোতে কমবয়সী জনসংখ্যার প্রাধান্য এবং এক শ্রেণীর সক্ষম দম্পতির মধ্যে অপেক্ষাকৃত ধীরগতিতে প্রজনন হার হ্রাসের কারণে বাংলাদেশের জনসংখ্যা বৃদ্ধির এ ধারা ২০৫০ সাল পর্যন্ত অব্যাহত থাকবে বলে প্রতিবেদনে বলা হয়েছে।
প্রতিবেদনে আরো বলা হয়েছে, 'বাংলাদেশের জনসংখ্যার বৃহত্তম প্রজননক্ষম অংশ হচ্ছে ১৫ থেকে ২৪ বছর বয়সী জনগোষ্ঠী। জনসংখ্যা বৃদ্ধিতে এ অংশের ভূমিকা সবচেয়ে বেশি। বাল্যবিবাহ এবং অল্প বয়সে গর্ভধারণের প্রবণতাও এ জনগোষ্ঠীর মধ্যে বেশি। '
প্রতিবেদনটি উপস্থাপন করেন ইউএনএফপিএর কর্মকর্তা ক্লারা রডিগ্রেস রিবাস। অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক এম এম নেয়াজ উদ্দিন, পরিসংখ্যান বিভাগের সচিব রীতি ইব্রাহিম, পরিকল্পনা কমিশনের সদস্য অধ্যাপক ড. শামসুল আলম প্রমুখ।

No comments

Powered by Blogger.