আদালতে হট্টগোল-'সিপাহি মাঈন আপনার সৃষ্টি'

পিলখানা হত্যা মামলায় সাক্ষীর জেরা চলাকালে গতকাল বুধবার আদালতে হট্টগোল হয়েছে। গোয়েন্দা সদস্য এক আসামির চিরকুট পড়েছেন_ এ বিষয়টিকে কেন্দ্র করে আদালতে বিশৃঙ্খলার সৃষ্টি হয়। এরপর আসামিপক্ষের আইনজীবীরাও হট্টগোলে জড়িয়ে পড়েন। কাঠগড়ায় উপস্থিতআসামিদের হট্টগোলের মুখে আদালত থেকে বের হয়ে যান এক গোয়েন্দা সদস্য।এদিকে জেরা করার সময় সাক্ষী কর্নেল শামসুল আলম চৌধুরীকে আসামি রাখাল চন্দ্র দাসের আইনজীবী এমদাদুল হক লাল বলেন, আপনি ও আপনার ব্যাটালিয়নের নেতৃত্বে বিডিআর বিদ্রোহ হয়েছে।


এ জন্য ৪৪ রাইফেলস ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক (বিদ্রোহের সময় ৪৪ রাইফেলস ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক ছিলেন শামসুল আলম), উপ-অধিনায়ক, সহ-অধিনায়কের কেউ পিলখানা বিদ্রোহে মারা যাননি। সিপাহি মাঈন আপনার সৃষ্টি। ঘটনার সময় সিপাহি মাঈনের হাতে অস্ত্র থাকা সত্ত্বেও আপনাকে হত্যা করেনি। সফল বিডিআর বিদ্রোহে নেতৃত্ব দেওয়ায় পরে ভালো জায়গায় পোস্টিং পেয়েছেন। একটি স্বার্থান্বেষী মহলের ইন্ধনে আপনি সত্য গোপন করে সাক্ষ্য দিচ্ছেন। এমন বক্তব্যের সময় কাঠগড়ায় উপস্থিত অনেক আসামি চিৎকার করে বলে ওঠে_ সঠিক, সঠিক। এ পর্যায়ে আইনজীবীর উদ্দেশে সাক্ষী বলেন, আপনাকে এসব অভিযোগ প্রমাণ করতে হবে। এরপর বিচারক তৃতীয় অতিরিক্ত মহানগর দায়রা জজ আখতারুজ্জামান বলেন, আইনজীবী প্রশ্ন করতে পারেন। এক পর্যায়ে সাক্ষী বলেন, আইনজীবীর বক্তব্য সঠিক নয়।
পিলখানা হত্যা মামলায় আসামিপক্ষের আইনজীবীরা জেরা করেন সাক্ষী শামসুল আলমকে। গতকাল সকাল পৌনে ১০টা থেকে পুরান ঢাকার বকশীবাজারে আলিয়া মাদ্রাসা মাঠে স্থাপিত বিশেষ আদালতে বিচার কার্যক্রম শুরু হয়ে দুপুর ২টায় শেষ হয়। ২ নভেম্বর পর্যন্ত আদালতের কার্যক্রম স্থগিত করা হয়। ঢাকা মহানগর দায়রা জজ জহুরুল হক ছুটিতে থাকায় তৃতীয় অতিরিক্ত মহানগর দায়রা জজ আখতারুজ্জামান ভারপ্রাপ্ত বিচারক হিসেবে মামলা পরিচালনা করেন।
সাক্ষীকে জেরার এক পর্যায়ে কাঠগড়া থেকে এক জওয়ান তার আইনজীবীর উদ্দেশে একটি চিরকুট ছুড়ে দেন। এরপর ওই চিরকুটটি আদালতে উপস্থিত এক গোয়েন্দা সদস্য পড়ে আইনজীবীর হাতে দেন। গোয়েন্দা সদস্য চিরকুট খোলায় আসামিরা বিশৃঙ্খলা করেন। আসামিপক্ষের আইনজীবীরা বলেন, আদালত এলাকায় আমরা গাড়ি নিয়ে আসতে পারি না; কিন্তু অন্য বাহিনীর লোকজন আদালতে থাকেন। আদালতের বাইরে লেখা রয়েছে_ 'অস্থায়ী বিশেষ আদালত'। এসময় কাঠগড়ায় উপস্থিত আসামিদের কয়েকজন হাত উঁচিয়ে এক কর্মকর্তাকে আদালত থেকে চলে যাওয়ার ইঙ্গিত করেন।
আসামিপক্ষের এক আইনজীবী সাক্ষীর কাছে জানতে চান, ২০০৯ সালের জানুয়ারিতে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ও প্রতিমন্ত্রী পিলখানা গিয়েছেন কি-না। উত্তরে সাক্ষী বলেন, আমার জানা নেই। ২৫ ফেব্রুয়ারি বিডিআর জওয়ানরা প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে দেখার করার সময় এসএসএফের চার সদস্য উপস্থিত ছিল। তাদের নাম কী? জবাবে সাক্ষী বলেন, জানা নেই। আইনজীবী দাবি করেন, সাক্ষী হওয়ার জন্য তার আসামিকে নির্যাতন করা হয়েছে। সাক্ষী না হওয়ায় তাকে আসামি করা হয়। উত্তরে সাক্ষী বলেন, এমন বক্তব্য সঠিক নয়।
রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী অ্যাডভোকেট মোশাররফ হোসেন কাজল সমকালকে বলেন, আসামিরা দিন দিন যে আচরণ করছে, এটা দুঃখজনক। তাদের অভিযোগ, তারা পানি পাচ্ছে না। সংশ্লিষ্ট মহল মনে করলে আদালত এলাকায় আরও নিরাপত্তা বাড়ানো হবে।

No comments

Powered by Blogger.