খালেদার বিরুদ্ধে রাষ্ট্রদ্রোহ মামলা চান মহাজোট এমপিরা

ম্প্রতি রোডমার্চে অভিযুক্ত যুদ্ধাপরাধীদের পক্ষ নিয়ে কথা বলা এবং বিচারের জন্য গঠিত ট্রাইব্যুনাল বাতিল করতে খালেদা জিয়ার দাবিকে ক্রিমিনাল অপরাধ (ফৌজদারি) হিসেবে অভিহিত করেছেন মহাজোটের সংসদ সদস্যরা। এ অপরাধের দায়ে খালেদা জিয়ার নামে রাষ্ট্রদ্রোহের মামলা করার জন্য সরকারের প্রতি দাবি জানিয়েছেন তাঁরা। একই সঙ্গে তাঁর বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য সুপ্রিম কোর্টের প্রতি আহবান জানানো হয়েছে।আইন প্রণেতারা বলছেন, জাতীয় সংসদে সর্বসম্মতিক্রমে আন্তর্জাতিক ট্রাইব্যুনাল অ্যাক্ট পাস হওয়ার পর খালেদা জিয়া বাইরে এ নিয়ে কথা বলে সংসদের অবমাননা করেছেন।


এ জন্য সংসদের উচিত তাঁর বিরুদ্ধে কার্যকর ব্যবস্থা নেওয়া।গতকাল বুধবার জাতীয় সংসদে ৬৮ বিধিতে সুরঞ্জিত সেনগুপ্তের আনা এক নোটিশের ওপর সাধারণ আলোচনায় অংশ নিয়ে মহাজোটের সংসদ সদস্যরা খালেদা জিয়ার বক্তব্যের কড়া সমালোচনা করেন। মাগরিবের বিরতির পর সন্ধ্যা পৌনে ৭টায় ৭১ বিধির নোটিশের আলোচনা স্থগিত রেখে ডেপুটি স্পিকার শওকত আলীর সভাপতিত্বে বিরোধী দলের অনুপস্থিতিতে এ নিয়ে দীর্ঘ আলোচনা হয়। আলোচনায় মহাজোটের ১৫ জন সদস্য অংশ নেন।
এ আলোচনার শিরোনাম দেওয়া হয় 'যুদ্ধাপরাধীদের রক্ষা করতে বিরোধীদলীয় নেতা খালেদা জিয়া রোডমার্চের নামে সারা দেশে যে মিথ্যাচার ও আইনবহির্ভূত কাজে লিপ্ত হয়েছেন, তা নিবারণ প্রসঙ্গ'। আলোচনার কারণ হিসেবে বলা হয়, বিএনপির নেতৃত্বে চারদলীয় জোটের রোডমার্চে খালেদা জিয়া যুদ্ধাপরাধীদের পক্ষ নিয়ে মহান মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় আঘাত, যুদ্ধাপরাধীদের বিচারে বাধা প্রদান এবং আদালত অবমাননা করছেন। বিধি অনুয়ায়ী নোটিশে অপর পাঁচজন সংসদ সদস্য স্বাক্ষর করেন। তাঁরা হলেন রাশেদ খান মেনন, শেখ ফজলুল করিম সেলিম, মো. ফজলে রাবি্ব মিয়া, মো. আলী আশরাফ ও রফিকুল ইসলাম বীর-উত্তম।
শুরুতেই সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত তাঁর বক্তব্যে বলেন, সংবিধান ও আইনগত আদালতের মাধ্যমে যুদ্ধাপরধীদের বিচার হচ্ছে। বিচারাধীন বিষয়টি নিয়ে অপরাধীদের পক্ষ হয়ে বেগম জিয়া আদালতের বিরুদ্ধে কথা বলে আদালত অবমাননা করছেন। বিরোধীদলীয় নেতার উদ্দেশে তিনি বলেন, 'কোন খালেদা জিয়া আজকে কাদের নিয়ে কাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করতে চান। আপনার চারপাশের দক্ষিণপন্থীদের নিয়ে যুদ্ধ করবেন। আপনি এখনো ষড়যন্ত্র করছেন। বাংলার স্বাধীনতা ও মুক্তিযুদ্ধের বিরুদ্ধে লড়ছেন।'
খালেদা জিয়ার উদ্দেশে সুরঞ্জিত বলেন, 'আপনি যখন কথা বলছেন, মনে হচ্ছে বিএনপি নেত্রী নয়, জামায়াতের আমির হিসেবে কথা বলছেন। আজকে যখন বিচার শুরু হয়েছে, সেই আদালতকে সামনে রেখে আপনি বিষোদ্গার করছেন। এ দেশে কি আইন নেই? কোর্ট নেই? এটি অপরাধ। অপরাধীদের পক্ষ নিয়ে আদালতের বিরুদ্ধে বিষোদ্গার করছেন। সবার গার্ডিয়ান সুপ্রিম কোর্ট। সুপ্রিম কোর্ট এ অপরাধীর বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নিন। এটি ক্রিমিনাল অপরাধ। এর সঙ্গে রাজনীতির ক্ষমতার সম্পর্ক নেই। এর সঙ্গে সম্পর্ক রাষ্ট্রের আইনের। অপরাধ অপরাধই, এর বিচার করার এখতিয়ার কোর্টের, রাজনীতিবিদদের নয়।'
আমির হোসেন আমু বলেন, 'আমি জানতে চাই রাষ্ট্রদ্রোহিতার সংজ্ঞা কী? স্বাধীনতার বিরুদ্ধে, জাতীয় পতাকা ও সংবিধানের বিরুদ্ধে কথা বলা হলে তা যদি রাষ্ট্রদ্রোহিতা না হয়, তাহলে রাষ্ট্রদ্রোহিতা শব্দটি উঠিয়ে দেওয়া হোক।' আমু দাবি করেন, খালেদা জিয়ার এ বক্তৃতার জন্য রাষ্ট্রদ্রোহিতার মামলা হওয়া উচিত।
তোফায়েল আহমেদ বলেন, 'খালেদা জিয়া যুদ্ধের ঘোষণা দিতে পারেন, তবে এ যুদ্ধেও আমরাই বিজয়ী হব। খালেদা জিয়া এ বিচার নিয়ে প্রশ্ন তুলে সংসদ অবমাননা করেছেন।' এর জবাব দিতে তোফায়েল আহমেদ সংসদে একটি নিন্দা প্রস্তাব আনার আহ্বান জানান।
অর্থমন্ত্রী আবুল মাল মুহিত বলেন, 'যুদ্ধাপরাধীদের বিচারে কোনো অন্যায়, অস্পষ্টতা নেই। এ বিচার শুরু করতে সরকার অনেক সময় নিয়েছে। যুদ্ধাপরাধীদের বিচার মুক্তিযুদ্ধের অসমাপ্ত অধ্যায়। যে আদর্শ নিয়ে আমরা মুক্তিযুদ্ধ করেছি, সেই আদর্শ সমুন্নত করতে যুদ্ধাপরাধীদের বিচার সম্পন্ন করতেই হবে।'
শেখ ফজলুল করিম সেলিম বলেন, 'আন্তর্জাতিক মানদণ্ডের ট্রাইব্যুনালের বিরোধিতা করে খালেদা জিয়া কী সুফল পেতে চান। বিরোধীদলীয় নেতা যতই হুমকি-ধমকি দেন না কেন, বিচার হবেই। অশুভ শক্তির পক্ষে খালেদা জিয়া যুদ্ধ ঘোষণা করেছেন। বাংলাদেশের মানুষ তা বরদাশত করবে না। অস্ত্র জমা দিয়েছি, ট্রেনিং ভুলিনি। আগুন নিয়ে খেলবেন না।
আইন প্রতিমন্ত্রী অ্যাডভোকেট কামরুল ইসলাম বলেন, 'মুক্তিযোদ্ধাদের বিরুদ্ধে বেগম জিয়ার যুদ্ধ ঘোষণায় বিস্মিত হওয়ার কিছু নেই। জিয়াউর রহমান পঁচাত্তর-পরবর্তী সময়ে মুক্তিযুদ্ধের চেতনার বিরুদ্ধে অঘোষিত যুদ্ধ ঘোষণা করেছিলেন। আজ খালেদা জিয়া প্রকাশ্যে যুদ্ধ ঘোষণা করেছেন। জামায়াতের ঔরস থেকে বিএনপির জন্ম হয়েছে বলেই আজ তারা জামায়াতের পক্ষে কথা বলছে।' তিনি বলেন, 'আমরা সুষ্ঠু ও স্বচ্ছ বিচার করছি। এ বিচারকে তিনি প্রশ্নবিদ্ধ করার চেষ্টা করছেন। আদালত, বিচারসহ সাংবাধানিক প্রতিষ্ঠান নিয়ে যাঁরা যেসব কথা বলছেন, তাতে প্রতিদিন তাঁদের বিরুদ্ধে একটা করে রাষ্ট্রদ্রোহিতার মামলা হতে পারে।' তিনি আরো বলেন, সাক্ষীদের ভয়ভীতি ও হুমকি দেওয়া হচ্ছে। সাক্ষীদের ভয়ভীতি দিতে খালেদা জিয়া এসব বক্তব্য দিচ্ছেন।
বেগম মতিয়া চৌধুরী বলেন, 'খালেদা জিয়া আলবদর, আলশামস ও স্বাধীনতাবিরোধীদের মা। এটা নিয়ে কোনো সন্দেহ নেই। ক্ষমতা হারিয়ে আপনি পাগল হয়ে গেছেন। মুক্তিযুদ্ধের সময় আপনি যাদের মেহমান ছিলেন, তাদের যে পরিণতি হয়েছিল, যাদের নিয়ে এখন যুদ্ধ ঘোষণা করেছেন, আপনারও সেই পরিণতি হবে। যুদ্ধাপরাধীদের বিচার বাংলার মাটিতে হবে, হবে, হবেই।'
রাশেদ খান মেনন বলেন, 'ট্রাইব্যুনাল নিয়ে খালেদা জিয়া অপপ্রচার চালাচ্ছেন। তিনি ভালো করেই জানেন ট্রাইব্যুনাল বাতিল হবে না। বিচার হবেই। জামায়াত নেতারা ট্রাইব্যুনালের বিরুদ্ধে লবিস্ট নিয়োগ করেছেন। কোটি কোটি টাকা ব্যয় করছেন। বেগম জিয়ার বিরুদ্ধে পার্লামেন্টে আলোচনা করে ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।'
আবদুল মান্নান বলেন, 'নিজামী, সাঈদী, সাকা চৌধুরী যদি যুদ্ধাপরাধী না হয়, তাহলে কি জিয়াউর রহমান যুদ্ধাপরাধী ছিল? এ ছাড়া পাট ও বস্ত্রমন্ত্রী আবদুল লতিফ সিদ্দিকী, অ্যাডভোকেট ফজলে রাবি্ব মিয়া, মুজিবুল হক চুন্নু, মঈন উদ্দীন খান বাদল প্রমুখ বক্তব্য দেন।

No comments

Powered by Blogger.