নাটোরে এডিবি প্রকল্পের কাজ বন্ধ করে দিয়েছে যুবলীগকর্মীরা

চাঁদা না পেয়ে নাটোরে এডিবির অর্থায়নে একটি প্রকল্পের কাজ বন্ধ করে দিয়েছেন যুবলীগকর্মীরা। তাঁরা হাতুড়ি দিয়ে পিটিয়েছেন এ কাজে নিয়োজিত ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের ব্যবস্থাপককে। বেধড়ক মারধর করেছেন প্রকল্পের শ্রমিকদেরও। গত মঙ্গলবার দুপুরের এ ঘটনায় থানায় মামলা হয়েছে।নাটোর শহরে বিশুদ্ধ পানি সরবরাহের লক্ষ্যে এডিবির অর্থায়নে লৌহ বিশুদ্ধকরণ প্লান্টের (আইআরপি) কাজ চলছে বেশ কিছুদিন ধরে। ইতিমধ্যে প্রকল্পের ৬০ শতাংশ কাজ শেষও হয়েছে।


প্রকল্পের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান মেসার্স কবির হোসেনের ব্যবস্থাপক আবদুল হাই জানান, তিনি নাটোর জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল বিভাগের উদ্যোগে মাঝারি শহর অবকাঠামো উন্নয়ন প্রকল্পের আওতায় শহরের পিটিআইয়ের সামনে চার কোটি ৬০ লাখ টাকা ব্যয়ে বিশুদ্ধ পানি সরবরাহের জন্য আইআরপি নির্মাণকাজ করছেন। মঙ্গলবার দুপুরে যুবলীগকর্মী আবদুস সামাদ, মামুন ও শিলনের নেতৃত্বে কান্দিভিটা, মলি্লকহাটি ও দিয়ারভিটা এলাকার কতিপয় সন্ত্রাসী এসে পাঁচ লাখ টাকা চাঁদা দাবি করে। চাঁদা দিতে অস্বীকার করলে সন্ত্রাসীরা আগ্নেয়াস্ত্র বের করে তাঁকে প্রাণনাশের হুমকি দেয়। এ সময় সন্ত্রাসীরা তাঁকে হাতুড়ি দিয়ে পেটাতে থাকে। আবদুল হাইয়ের চিৎকারে সাইটের মিস্ত্রি ও শ্রমিকরা এগিয়ে এলে সন্ত্রাসীরা তাঁদের এলোপাতাড়ি মারধর করে। একপর্যায়ে সন্ত্রাসীরা প্রকল্পের নির্মাণকাজ বন্ধ করে দেয়। চাঁদাবাজি ও মারধরের অভিযোগ এনে তিনি নাটোর থানায় মামলা করেছেন।
এডিবির কনসালট্যান্ট ফার্মের আবাসিক প্রকৌশলী আফজাল হোসেন বলেন, 'ঘটনার সময় আমিও সাইটে উপস্থিত ছিলাম। কতিপয় যুবক দুপুরের দিকে এসে কত ভাগে কাজ হচ্ছে জানতে চায়। এরপর সাইট ম্যানেজার ও উপসহকারী প্রকৌশলীকে ডেকে তারা দূরে রাস্তায় নিয়ে যায়। একপর্যায়ে শুনতে পাই ম্যানেজার আবদুল হাইকে মারধর করা হয়েছে। এরপর আমি সাইট থেকে চলে আসি।'
নাটোর থানার ওসি আবদুল্লাহ আল মামুন জানান, নির্মাণাধীন প্রকল্পে গোলযোগের খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছে। এ বিষয়ে মামলা হয়েছে। অভিযুক্তদের গ্রেপ্তারে চেষ্টা চলছে।
অন্যদিকে যুবলীগকর্মী আবদুস সামাদ তাঁদের বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, চাঁদাবাজি নয়, নিম্নমানের কাজ হওয়ায় এলাকাবাসীর সঙ্গে তিনিও প্রতিবাদ করেছেন। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে ঠিকাদারের লোকজন মিথ্যা মামলা করেছে।
ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের অন্যতম মালিক নাসির উদ্দিন রানা জানান, আইআরপি কাজের সময় জনস্বাস্থ্য বিভাগের কর্মকর্তা ও এডিবির কনসালট্যান্ট ফার্মের প্রকৌশলী উপস্থিত থাকেন। এ ছাড়া এডিবি প্রতিনিধিদল সাইট ভিজিট করে। সুতরাং কাজে অনিয়মের প্রশ্নই ওঠে না। তিনি এ ঘটনার বিচার দাবি করেন।
জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তর, নাটোরের নির্বাহী প্রকৌশলী ওয়াজেদ আলী জানান, কাজে অনিয়ম হয়ে থাকলে অভিযোগ করার জন্য সরকারের বিভিন্ন দপ্তর রয়েছে। কিন্তু জবরদস্তি কাজ বন্ধ করে দেওয়া দুঃখজনক।
যুব ও ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী এবং নাটোর জেলা আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক আহাদ আলী সরকার বলেন, 'কোনো অনিয়ম হয়ে থাকলে আমি রয়েছি। এডিবিসহ সরকারের দপ্তর রয়েছে। সেসব দপ্তরে অভিযোগ না দিয়ে চাঁদাবাজির মতলব নিয়ে কোনো কাজকে প্রশ্রয় দেব না। ইতিমধ্যে আমি অভিযুক্তদের গ্রেপ্তারের নির্দেশ দিয়েছি।'

No comments

Powered by Blogger.