আবদুল কালামকে শেষ শ্রদ্ধা

চেন্নাইতে এক শোক অনুষ্ঠানে অশ্রুসিক্ত এক শিক্ষার্থী l এএফপি
‘জনতার রাষ্ট্রপতি’ এ পি জে আবদুল কালামকে চোখের জলে বিদায় জানাল নয়াদিল্লি। গতকাল মঙ্গলবার সকালে বিমানবাহিনীর বিশেষ বিমানে মেঘালয়ের রাজধানী শিলং থেকে জাতীয় পতাকায় মোড়া তাঁর মরদেহ দিল্লিতে পৌঁছায়। বিমানবন্দরেই তাঁকে শ্রদ্ধা জানাতে উপস্থিত হন রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখার্জি, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি এবং প্রতিরক্ষা বাহিনীর তিন প্রধান। প্রতিরক্ষা বাহিনীর পক্ষ থেকে বিমানবন্দরে প্রয়াত ভারতরত্নকে গার্ড অব অনার দেওয়া হয়।
বিমানবন্দর থেকে সাবেক রাষ্ট্রপতির মরদেহ নিয়ে যাওয়া হয় রাজাজি মার্গে তাঁর সরকারি বাসভবনে। সেখানে পূর্ণ রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় দিনভর শায়িত থাকে প্রয়াত ‘মিসাইলম্যানের’ নশ্বর দেহ। উপরাষ্ট্রপতি হামিদ আনসারি, কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভার সদস্যরা, কংগ্রেসের সভানেত্রী সোনিয়া গান্ধী, রাহুল গান্ধীসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতারা, বিভিন্ন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী ও বিদেশি রাষ্ট্রদূতেরা বিকেল পর্যন্ত শ্রদ্ধা জানান রাজাজি মার্গে গিয়ে।
জাতীয় পতাকায় মোড়ানো এ পি জে আবদুল কালামের মরদেহে পুষ্পার্ঘ্য অর্পণ করে ফিরছেন ভারতের রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখার্জি (বাঁয়ে), প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি (ডানে) ও প্রতিরক্ষামন্ত্রী মনোহর পরিকর (পেছনে)। গতকাল নয়াদিল্লি বিমানবন্দর থেকে তোলা ছবি l রয়টার্স
ভিআইপিদের আনাগোনা শেষ হলে বিকেল পাঁচটা থেকে শুরু হয় সাধারণ মানুষের শ্রদ্ধা-মিছিল। হাজার হাজার মানুষ শান্তিপূর্ণভাবে অপেক্ষায় থাকেন ‘স্বপ্নের ফেরিওয়ালাকে’ শেষবারের মতো দেখার জন্য। নানা বয়সের বহু মানুষকে কাঁদতে দেখা যায়। দর্শনার্থীদের মধ্যে অধিকাংশই ছিলেন অল্প বয়সী, আবদুল কালাম যাঁদের মনে প্রকৃত বড় হওয়ার বীজমন্ত্র বুনে দিতে চেয়েছেন সারাটা জীবন।
ভারতের পরমাণু কর্মসূচির পথিকৃৎ আবদুল কালামের মরদেহ আজ বুধবার নিয়ে যাওয়া হবে নিজ রাজ্য তামিলনাড়ুর রামেশ্বরমে। কাল বৃহস্পতিবার বেলা ১১টায় সেখানেই তাঁকে দাফন করা হবে। রামেশ্বরমেই হতদরিদ্র এক পরিবারে আবদুল কালামের জন্ম। প্রয়াত সাবেক রাষ্ট্রপতির বড় ভাই মোহাম্মদ মুথু মারাইকর এখনো জীবিত। বয়স ৯৯।
কর্মযোগে বিশ্বাসী এ পি জে আবদুল কালাম ছুটিতে বিশ্বাস করতেন না। তাঁর ইচ্ছাও ছিল, মৃত্যুর পর শ্রদ্ধা জানাতে সরকারি ছুটি যেন ঘোষণা করা না হয়। সরকারিভাবে সে কথা না জানানো হলেও প্রধানত সেই কারণেই কেন্দ্রীয় সরকার মঙ্গলবার থেকে পরবর্তী সাত দিন সারা দেশে রাষ্ট্রীয় শোক ঘোষণা করেছে। কিন্তু সেই সঙ্গে জানানো হয়েছে, কালামের প্রতি শ্রদ্ধায় সরকারি অফিস খোলা থাকবে।
সাবেক রাষ্ট্রপতির প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে ভারতের সংসদের উভয় কক্ষের অধিবেশন গতকাল মুলতবি করে দেওয়া হয়। কাল বৃহস্পতিবার পর্যন্ত সংসদ মুলতবি থাকবে। কেন্দ্রীয় মানবসম্পদ উন্নয়নমন্ত্রী স্মৃতি ইরানী জানিয়েছেন, রাষ্ট্রীয় আবিষ্কার অভিযান কার্যক্রমের নামকরণ প্রয়াত সাবেক রাষ্ট্রপতির নামে করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
আবদুল কালামের মৃত্যুর খবর পেয়ে রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখার্জি তাঁর কর্ণাটক সফর কাটছাঁট করে দিল্লি ফিরে আসেন। বিমানে আসার পথে তিনি সাংবাদিকদের বলেন, অনেকেই জানেন না, সাবেক রাষ্ট্রপতি অবসরে কবিতা লিখতেন। দিল্লিতে ইন্ডিয়া গেটে অমর জওয়ান জ্যোতিতে শহীদ জওয়ানদের স্মরণে যখনই তিনি শ্রদ্ধা জানাতে যেতেন, একটি করে কবিতা লিখে নিয়ে যেতেন। রাষ্ট্রপতি জানান, আবদুল কালাম সেই কবিতা কখনো পাঠ করতেন না। নিঃসাড়ে তা কারও হাতে গুঁজে দিতেন। তাঁর কাছে এমন দু-তিনটি কবিতা রয়েছে বলে প্রণব মুখার্জি জানান।
অতি সাধারণ জীবন যাপন ও অনন্যসাধারণ চিন্তাভাবনাকে বাস্তবায়িত করা এই সর্বত্যাগী নির্লোভ মানুষটির শোকবার্তায় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি বলেছেন, আবদুল কালামের প্রথম পরিচয় তিনি দেশের এক অমূল্য সম্পদ, রাষ্ট্রপতি পরে। তাঁর ব্যক্তিত্ব ছিল এক বিশেষ ধরনের। তাঁর জীবন দেশবাসীকে প্রেরণা জুগিয়েছে। বিশেষ করে দেশের যুব সম্প্রদায়কে।

No comments

Powered by Blogger.