কক্সবাজারে পাহাড়ধসে প্রাণ গেল মা–মেয়ে ও স্বামী–স্ত্রীর

কক্সবাজার শহরের রাডার স্টেশন এলাকায় পাহাড়ধসের পর
উদ্ধার অভিযান চালান সেনাবাহিনী ও ফায়ার সার্ভিসের
সদস্যরা। গতকাল সকালে তোলা ছবি l প্রথম আলো
প্রবল বৃষ্টিতে পাহাড়ধসে কক্সবাজার শহরে মা-মেয়ে, স্বামী-স্ত্রীসহ দুই পরিবারের পাঁচজনের মৃত্যু হয়েছে। গত রোববার দিবাগত রাতে শহরের সার্কিট হাউস-সংলগ্ন রাডার স্টেশন এলাকায় এ ঘটনা ঘটেছে।
নিহত ব্যক্তিরা হলেন জুনু বেগম (২৮), তাঁর মেয়ে নীহামণি (৭) এবং শাহ আলম (৪০), তাঁর স্ত্রী রোকেয়া আক্তার (৩০) ও তাঁদের ভাগনি রিনা আক্তার (১৬)।
কক্সবাজার বন ও পরিবেশ সংরক্ষণ পরিষদের আহ্বায়ক মাসুদুর রহমান জানান, গত জুন মাসে একাধিক পাহাড়ধসের ঘটনায় কক্সবাজার শহর ও রামুতে সাতজনের মৃত্যু হয়েছে। এর আগের পাঁচ বছরে ১০টিরও বেশি পাহাড়ধসের ঘটনায় ৯৩ জনের মৃত্যু হয়।
কক্সবাজার ফায়ার সার্ভিস, পুলিশ ও স্থানীয় লোকজন জানান, রোববার দিবাগত রাত দুইটার দিকে রাডার স্টেশন-সংলগ্ন পাহাড়ের একটি অংশ পাশের তিনটি টিনের বাড়ির ওপর ধসে পড়ে। টিনের চাল ভেঙে বাড়ি তিনটি গুঁড়িয়ে যায়। ঘরের লোকজন তখন ঘুমিয়ে ছিলেন। ওই তিনটি বাড়ি খায়রুল আমিন, জাকের হোসেন ও ইসলাম মিয়ার। হতাহত ব্যক্তিরা সবাই তাঁদের স্বজন। মাটিচাপা পড়ে তাঁরাও আহত হয়েছেন।
উদ্ধার অভিযানে যাওয়া ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা জানান, পাহাড়ধসের পর রাত তিনটার দিকে আশপাশের লোকজন খায়রুলের ঘরের মাটি সরিয়ে গুরুতর আহত তাঁর স্ত্রী জুনু আকতার ও মেয়ে নীহামণিকে কক্সবাজার সদর হাসপাতালের নিয়ে যান। সেখানে চিকিৎসক দুজনকে মৃত ঘোষণা করেন। খায়রুল আমিন কক্সবাজার পর্যটন শ্রমিক দলের সভাপতি। তাঁর মেয়ে নীহা শহরের প্রভাতি শিক্ষা একাডেমিতে দ্বিতীয় শ্রেণিতে পড়ত।
ফায়ার সার্ভিস সূত্র জানায়, পাহাড়ধসের ঘটনার খবর পেয়ে গতকাল সোমবার ভোর পাঁচটার দিকে সেনাবাহিনী, বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের (বিজিবি) সদস্যরা ফায়ার সার্ভিসের কর্মীদের সঙ্গে উদ্ধার অভিযানে যোগ দেন। মাটি সরিয়ে আহতাবস্থায় উদ্ধার করা হয় খায়রুল আমিন, জাকের হোসেন, ইসলাম মিয়া, জাকের হোসেনের ছেলে নুর নবী এবং তাঁদের আত্মীয় শেফায়েতকে। তাঁদের মধ্যে নুর নবী এবং আত্মীয় শেফায়েতকে গুরুতর অবস্থায় কক্সবাজার সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। তাঁরা আশঙ্কামুক্ত বলে জানান হাসপাতালের জরুরি বিভাগের চিকিৎসক আবদুস সালাম।
ফায়ার সার্ভিস সূত্র জানায়, গতকাল বেলা দুইটার দিকে সেনাবাহিনীর সহায়তায় পাহাড়ের মাটি সরিয়ে ইসলাম মিয়ার ছেলে শাহ আলম (৪০), ছেলের স্ত্রী রোকেয়া আক্তার (৩০) ও তাঁদের ভাগনি রিনা আক্তারের (১৬) লাশ উদ্ধার করা হয়।
কক্সবাজারের জেলা প্রশাসক (ভারপ্রাপ্ত) অনুপম সাহা প্রথম আলোকে জানান, শহরের বিভিন্ন পাহাড়ে ঝুঁকি নিয়ে বসবাসকারী লোকজনকে নিরাপদ স্থানে সরিয়ে আনতে জেলা প্রশাসন ও রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটির পক্ষ থেকে মাইকিং করা হচ্ছে।
কক্সবাজার ফায়ার সার্ভিসের স্টেশন কর্মকর্তা আবদুল মজিদ জানান, ভারী বর্ষণের কারণে শহরে একাধিক পাহাড়ধসের ঘটনা ঘটছে। বিশেষ করে যেসব পাহাড় কেটে ফেলা হয়েছে, সেসব স্থানে পাহাড়ধসের ঘটনা বাড়ছে।
কক্সবাজার পৌরসভার মেয়র সরওয়ার কামাল জানান, বর্ষা এলেই পাহাড়ে বসবাসকারী লাখো মানুষ নিয়ে আতঙ্কে থাকতে হয়।

No comments

Powered by Blogger.