ভোলা-লক্ষ্মীপুর নৌপথ বন্ধ: এক কিলোমিটার সড়ক মেঘনায় বিলীন

বরিশাল-ভোলা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের ভোলা অংশের
প্রায় এক কিলোমিটার মেঘনা নদীতে বিলীন হয়ে গেছে।
মহাসড়কের মিছির আলীর ট্রলারঘাট থেকে তোলা ছবি
বরিশাল-ভোলা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে ভোলা সদর উপজেলার চডারমাথা থেকে ইলিশা ফেরিঘাট পর্যন্ত প্রায় এক কিলোমিটার অংশ গত রোববার রাতে মেঘনায় বিলীন হয়ে গেছে। ফলে ভোলা-লক্ষ্মীপুর নৌপথে ফেরি চলাচল বন্ধ হয়ে গেছে। বৈরী আবহাওয়ার কারণে লঞ্চ এবং সি-ট্রাক চলাচলও বন্ধ রয়েছে। বন্যানিয়ন্ত্রণ বাঁধ ধসে যাওয়ার আশঙ্কায় স্থানীয় লোকজন বাড়িঘর ও স্থাপনা সরিয়ে নিতে শুরু করেছেন এবং মাছ ও গাছ বিক্রি করে দিচ্ছেন।
এদিকে নৌপথ বন্ধ হয়ে যাওয়ায় ঈদের ছুটি শেষে চট্টগ্রাম ও সিলেট বিভাগে কর্মস্থলে ফিরতে গিয়ে কয়েক হাজার যাত্রী দুর্ভোগে পড়েছেন। তাঁরা ঘাট থেকে পুনরায় বাড়ি ফিরে যেতে বাধ্য হচ্ছেন। শনিবার ভোর থেকে ঝড়-বৃষ্টি ও দমকা হাওয়া শুরু হওয়ার পর ওই নৌপথে ফেরি, লঞ্চসহ সব ধরনের নৌযান চলাচল বন্ধ করে দেয় কর্তৃপক্ষ। রোববার রাতে চডারমাথা থেকে ফেরিঘাট পর্যন্ত প্রায় এক কিলোমিটার সড়ক মেঘনা নদীতে বিলীন হওয়ায় নৌপথটি অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ হয়ে যায়। ফলে ভোলার বিভিন্ন উপজেলা থেকে কয়েক হাজার যাত্রী ঘাটে এসে পুনরায় বাড়ি ফিরতে বাধ্য হয়েছেন।
ভোলা থেকে প্রায় ১২০ কিলোমিটার দূরের চরফ্যাশন উপজেলার মুজিবনগর থেকে গতকাল সোমবার বেলা ১১টার দিকে সপরিবারে ইলিশা ঘাটে পৌঁছান আবদুল অদুদ (৪৩)। তিনি চট্টগ্রামে একটি বেসরকারি কোম্পানিতে কাজ করেন। তিনি জানান, পরিবার নিয়ে ফেরিঘাটে এসেছেন প্রায় ৫৫০ টাকা খরচ করে। আবারও ৫৫০ টাকা খরচ করে তাঁকে বাড়ি ফিরে যেতে হচ্ছে। শারীরিক ভোগান্তি তো রয়েছেই।
ইলিশা ফেরিঘাটের ব্যবস্থাপক আবু আলম হাওলাদার বলেন, বৈরী আবহাওয়ার কারণে এই নৌপথে লঞ্চ, সি-ট্রাক ও ফেরি চলাচল বন্ধ ছিল। রোববার রাতে মহাসড়ক ভেঙে যাওয়ায় ফেরি চলাচল অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ হয়ে গেছে।
গতকাল সকাল আটটা থেকে একটা পর্যন্ত সরেজমিনে দেখা গেছে, চডারমাথা থেকে ভোলা ইলিশা ফেরিঘাট পর্যন্ত এক কিলোমিটার মহাসড়ক পুরোপুরি বিলীন হয়ে গেছে। হুমকিতে পড়েছে বন্যানিয়ন্ত্রণ বাঁধ। স্থানীয় বাসিন্দাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ওই এক কিলোমিটার সড়কের পাশে থাকা শতাধিক ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ও ৫৫০ মিটার মহাসড়ক রক্ষা ব্লকবাঁধও রোববার রাতে বিলীন হয়ে যায়। প্রায় আড়াই কোটি টাকা ব্যয়ে সড়ক ও জনপথ (সওজ) বিভাগ ওই ব্লকবাঁধ নির্মাণ করে। ভাঙন প্রতিরোধে পাউবো ও ঠিকাদারের লোকজন গত শুক্রবার থেকে বালুভর্তি জিও টেক্সটাইল বস্তা ফেললেও তা কোনো কাজে আসেনি।
দক্ষিণ রাজাপুরের বাসিন্দা আলাউদ্দিন মাঝি অভিযোগ করেন, সময়মতো ভূমিকা নিলে মানুষের এত ক্ষতি হতো না। এলাকাও ভাঙনের কবলে পড়ত না। অভিযোগ অস্বীকার করে পাউবোর ভোলা কার্যালয়ের নির্বাহী প্রকৌশলী আবদুল হেকীম বলেন, তাঁদের চেষ্টার কোনো ত্রুটি নেই। নদী ভয়াবহ রূপ ধারণ করেছে। বৈরী আবহাওয়ার মধ্যেও ভাঙন প্রতিরোধে তাঁদের লোকজন নিরলস চেষ্টা করছেন। এ কারণে এখন পর্যন্ত লোকালয়ে পানি ঢোকেনি।
এদিকে বন্যানিয়ন্ত্রণ বাঁধ ধসে যাওয়ার আশঙ্কায় আতঙ্কিত হয়ে পড়েছেন সদর উপজেলার রাজাপুর, পূর্ব ইলিশা, বাপ্তা ও পশ্চিম ইলিশার লক্ষাধিক মানুষ। তাঁরা পুকুরের মাছ ও বাগানের গাছ বিক্রি করে ফেলছেন। ঘরবাড়ি ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ভেঙে অন্যত্র নিয়ে যাচ্ছেন। সদর উপজেলার দক্ষিণ রাজাপুরের বাসিন্দা আবদুল মালেক বলেন, ‘যেকোনো মুহূর্তে বাঁধ ছুটে পানি ঢুকবে। পূর্ব ইলিশা, রাজাপুর ডুবে যাবে। এই ভয়ে পুকুরের মাছ কম দামে ছোট অবস্থায় বিক্রি করে ফেলছি।’
দক্ষিণ রাজাপুরের পল্লি চিকিৎসক আমির হোসেন মিজি বলেন, ভয়ে তিনি পুকুরের মাছ, বাগানের গাছ ও হাঁস-মুরগি বিক্রি করে ফেলছেন।

No comments

Powered by Blogger.