সাতক্ষীরার আ.লীগ রাজনীতি: দুই সদস্যের কমিটি দুটি ধারায় বিভক্ত by কল্যাণ ব্যানার্জি

১০ বছর পর গত ফেব্রুয়ারিতে সাতক্ষীরা জেলা আওয়ামী লীগের সম্মেলন হয়েছে। কিন্তু তাতে ভোটের মাধ্যমে নেতৃত্ব নির্বাচন করা হয়নি। সমঝোতার মাধ্যমে শুধু সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক পদে দুজনের নাম ঘোষণা করা হয়। দুই সদস্যের এই কমিটির দুই নেতা আবার দুটি ধারার নেতৃত্ব দেন। তাঁদের কার্যালয়ও পৃথক।
দলীয় বিভিন্ন সূত্র থেকে জানা গেছে, সাতক্ষীরা জেলা আওয়ামী লীগে দুটি ধারা সক্রিয় রয়েছে। বর্তমান সভাপতি মনসুর আহমেদ ও সাধারণ সম্পাদক নজরুল ইসলাম দুজন দুই ধারার নেতা। দুই পক্ষের টানাপড়েনের কারণে গত ছয় মাসেও পূর্ণাঙ্গ কমিটি করা সম্ভব হয়নি। এ বিষয়ে অনেক নেতা ক্ষোভ ও হতাশা ব্যক্ত করলেও তাঁরা নাম প্রকাশ করতে রাজি হননি। তাঁদের আশঙ্কা, গণমাধ্যমে এ বিষয়ে বক্তব্য প্রকাশ করলে পূর্ণাঙ্গ কমিটিতে তাঁদের ঠাঁই হবে না।
অবশ্য সভাপতি মনসুর আহমেদ দাবি করেন, তাঁর ও সাধারণ সম্পাদকের মধ্যে কোনো মতভেদ নাই। জেলায় দলের সবগুলো শাখার কমিটি করতে না পারায় জেলার পূর্ণাঙ্গ কমিটি করা যাচ্ছে না। তিনি বলেন, সাতক্ষীরা জেলায় আওয়ামী লীগের আটটি ইউনিট রয়েছে। এর মধ্যে সাতটি উপজেলা কমিটি ও একটি পৌর কমিটি। এর মধ্যে কেবল তিনটি ইউনিটের কমিটি তাঁরা পেয়েছেন।
মনসুর আহমেদ বলেন, আগামী এক মাসের মধ্যে তাঁরা পূর্ণাঙ্গ কমিটি করতে পারবেন বলে আশাবাদী। অবশ্য তিনি তিন মাস আগেও এ প্রতিবেদককে একই কথা বলেছিলেন।
আওয়ামী লীগের বিভিন্ন পর্যায়ের বেশ কয়েকজন নেতা-কর্মীর সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, এখানকার আওয়ামী লীগের একটি ধারার নেতৃত্বে আছেন জেলা কমিটির সাবেক সভাপতি শেখ মুজিবুর রহমান ও বর্তমান সাধারণ সম্পাদক নজরুল ইসলাম। আরেকটি ধারার নেতৃত্বে আছেন বর্তমান সভাপতি মনসুর আহমেদ ও সাবেক স্বাস্থ্যমন্ত্রী আ ফ ম রুহুল হক। এঁদের সঙ্গে সর্বশেষ যুক্ত হয়েছেন সাতক্ষীরা-২ (সদর) আসনের সাংসদ মীর মোস্তাক আহমেদ।
সাবেক সভাপতি শেখ মুজিবুর রহমান বলেন, ১০ বছর পর গত ২ ফেব্রুয়ারি জেলা আওয়ামী লীগের সম্মেলন হয়। ওই সম্মেলনে সভাপতি পদে প্রার্থী হওয়ার জন্য তিনি প্রস্তুতি নিয়েছিলেন। কিন্তু আগের রাতে দুজন কেন্দ্রীয় নেতা সাতক্ষীরা সার্কিট হাউসে ডেকে নিয়ে চাপ প্রয়োগ করে তাঁকে প্রার্থিতা থেকে সরে দাঁড়াতে বলেন। প্রধানমন্ত্রীর নাম বলায় তিনি তা মেনে নেন।
এ বিষয়ে বর্তমান সাধারণ সম্পাদক নজরুল ইসলামের ভাষ্য, ‘সম্মেলনে ভোট না করে কমিটি করা নিয়ে দলে কারও কারও মতপার্থক্য ও ভিন্নমত থাকতে পারে। কিন্তু কেন্দ্রীয় নেতারা বলেছিলেন যে প্রধানমন্ত্রীর ইচ্ছা সমঝোতার মাধ্যমে কমিটি করা। এ কথা বললে তো প্রধানমন্ত্রীর প্রতি সম্মান দেখাতেই হয়।’
দলীয় সূত্রগুলো জানায়, জেলায় আওয়ামী লীগের কোনো কার্যালয় নাই। একাধিক ধারায় বিভক্ত নেতারা একেকজন একেক স্থানে বসেন। ফলে সাধারণ কর্মীদের একত্র হওয়ার কোনো ঠিকানা নাই। দলের বড় কোনো সভা হলে জেলা পরিষদের সম্মেলন কক্ষ ব্যবহার করা হয়।
সাতক্ষীরা-২ আসনের (সদর) দলীয় সাংসদ মীর মোস্তাক আহমেদ বলেন, তিনি রেডক্রিসেন্ট সোসাইটির জেলার ভাইস চেয়ারম্যান। তাই রেডক্রিসেন্ট কার্যালয়ে বা বাড়িতে বসে দলের সভাপতিসহ ভদ্রলোকদের সঙ্গে সমন্বয় করে কাজ করে থাকেন।
জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি একই সঙ্গে জেলা পরিষদের প্রশাসক। তিনি জেলা পরিষদে অথবা সুলতানপুরে তাঁর এক আত্মীয়ের বাড়িতে বসেন। সাধারণ সম্পাদক বসেন শহরের কামান নগরে তাঁর নিজস্ব কার্যালয়ে। একই এলাকায় নিজস্ব কার্যালয় রয়েছে জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক ফিরোজ আহমেদের। জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক যুগ্ম সম্পাদক আবু আহমেদ বসেন তাঁর পত্রিকা কার্যালয়ে।
সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি এস এম শওকত হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, জেলা আওয়ামী লীগের কোনো দলীয় কার্যালয় না থাকায় তাঁরা যাঁর যাঁর নিজস্ব কার্যালয়ে বসে কাজ চলিয়ে থাকেন।
এ বিষয়ে জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মনসুর আহমেদ প্রথম আলোকে বলেন, দ্রুত দলের একটি জেলা কার্যালয় করা হবে।

No comments

Powered by Blogger.