অভিভাবকদেরও আইনের আওতায় আনার তাগিদ -শিশুদের প্রতি নির্যাতন বন্ধে করণীয় বিষয়ে কর্মশালায় প্রতিমন্ত্রী

উচ্চবিত্ত ও দরিদ্র পরিবারের মা-বাবার উদাসীনতার জন্য কোনো কোনো শিশু অপকর্মে জড়িয়ে পড়ছে বলে মন্তব্য করেছেন মহিলা ও শিশুবিষয়ক প্রতিমন্ত্রী মেহের আফরোজ চুমকি। তিনি শিশুদের এ দুরবস্থার জন্য দায়ী অভিভাবকদেরও আইনের আওতায় আনার তাগিদ দিয়েছেন।
গত রোববার শিশুদের প্রতি নির্যাতন বন্ধে করণীয় বিষয়ে আয়োজিত একটি কর্মশালায় মেহের আফরোজ এ মন্তব্য করেন। মহিলা ও শিশুবিষয়ক মন্ত্রণালয় রাজধানীর শিশু একাডেমি মিলনায়তনে এ কর্মশালার আয়োজন করে। এতে অন্য মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারাও উপস্থিত ছিলেন।
মেহের আফরোজ আরও বলেন, ‘উচ্চবিত্ত পরিবারের শিশুরা কম্পিউটার-মোবাইল নিয়ে বসে থাকছে। প্রযুক্তি ব্যবহার করে কখনো কখনো শিশু বিপদে পড়ছে। দরিদ্র পরিবারে বাবা-মা কখনো কখনো সন্তান জন্ম দিয়েই দায়িত্ব শেষ করছেন। শিশুকে ঝুঁকিপূর্ণ কাজে পাঠাচ্ছেন। তারা নির্যাতিত হচ্ছে। কখনো কখনো শিশুরা অপরাধে জড়িয়ে পড়ছে।’ যেসব মা-বাবার অসচেতনতার কারণে শিশুদের নিরাপত্তা বিঘ্নিত হচ্ছে তাঁদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া উচিত বলে প্রতিমন্ত্রী মন্তব্য করেন।
প্রতিমন্ত্রী বলেন, শিশু সুরক্ষায় ৫০টির মতো আইন আছে। আইনগুলো সম্পর্কে সবাই জানে না। তিনি শিশু নির্যাতন বন্ধে সবাইকে এগিয়ে আসার আহ্বান জানান। রাজনকে পিটিয়ে হত্যার প্রসঙ্গ টেনে তিনি বলেন, ‘সেখানে কি এমন একজন ছিলেন না যাঁর মধ্যে মানবতাবোধ ছিল? কেউ একটা ফোন করতে পারলেন না?’
মেহের আফরোজ বলেন, ‘শিশু রাসেলকে গুলি করে খুলি উড়িয়ে দেওয়া হয়েছিল। শিশুদের নিরাপত্তা নিয়ে অনেকে টক শো তে কথা বলেন, কিন্তু এ প্রসঙ্গটি নিয়ে কিছু বলেন না।’
মহিলা ও শিশুবিষয়ক সচিব নাসিমা বেগম বলেন, ‘শিশু রাজনের হত্যাকারীদের বিচার হবে। এই বিচারের মাধ্যমে আমরা উদাহরণ স্থাপন করতে চাই।’
আইন মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব নাসরিন বেগম বলেন, আন্তর্জাতিক সনদের সঙ্গে শিশু সুরক্ষায় বাংলাদেশের প্রচলিত আইনের ফারাকগুলো কি তা খুঁজে বের করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। তবে শুধু খুঁজে বের করলেই হবে না, সমন্বয় করতে হবে।
কর্মশালায় মূল বক্তব্য উপস্থাপন করেন মহিলা ও শিশুবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব আমিনুল ইসলাম। তিনি বলেন, শিশুকে বাল্যবিয়ে, যৌন হয়রানি, ঝুঁকিপূর্ণ শ্রম, পাচার ও শারীরিক নির্যাতন থেকে রক্ষা করতে সরকার কাজ করছে। বাংলাদেশ শিশু নির্যাতন বন্ধে দক্ষিণ এশীয় মোর্চা সাইভেকের সদস্য। অন্যান্য সদস্যরাষ্ট্রগুলোর তুলনায় বাংলাদেশ এগিয়ে আছে। তবে অর্থাভাবে বাংলাদেশ চাইলেও অনেক কিছু করতে পারছে না।
নতুন মাদক সিসা। প্রাচীনকালের হুঁক্কার নগর-সংস্করণ। নিকোটিনের প্রভাব থেকে রেহাই পেতে হুঁক্কার উদ্ভব হয়েছিল। এখন সেই হুঁক্কাকে ব্যবহার করা হচ্ছে সিসার নিকোটিনকে ভিন্নভাবে উপভোগের কাজে। সিসায় আসক্ত শহরের ধনিক শ্রেণীর সন্তানরা। প্রথমে এক ধরনের অ্যাডভেঞ্চার থেকে সিসা গ্রহণ করলেও পরবর্তী সময়ে ইয়াবা, ফেনসিডিল, হেরোইনে আসক্ত হয়ে পড়েছে। পান সালসা, লিমোরা ডিলাইট, অরেঞ্জ কাউন্টি, ওয়াইল্ড মিন্ট, কিউই, ট্রিপল আপেল, চকোলাভা, ক্রেজিকেয়ারি, ব্লুবেরিসহ বিভিন্ন ফ্লেভারের সিসা পাওয়া যাচ্ছে। উচ্চবিত্ত ঘরের কিছু বিপথগামী তরুণ-তরুণীর মধ্যে সিসা সেবনের প্রবণতা লক্ষ করা গেলেও এখন তা ছড়িয়ে পড়ছে সর্বস্তরে। তরুণ-তরুণীরা সিসা সেবনকে নিজেদের আভিজাত্য ও স্মার্টনেসের বহিঃপ্রকাশ বলে মনে করছে। শীতের সময় সিসাবারগুলোতে বেশি ভিড় থাকে। রাজধানীর ধানমন্ডি, গুলশান, বারিধারা, বনানীসহ অভিজাত এলাকায় রয়েছে বেশিরভাগ সিসাবার। সরেজমিনে গিয়ে ও সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, রাজধানীর সিসা লাউঞ্জগুলোর মধ্যে মোহাম্মদপুরে অ্যারাবিয়ান নাইটস, ফুড কিং, ধানমন্ডির সেভেন টুয়েলভ লাউঞ্জ, এইচ টু ও লাউঞ্জ অ্যান্ড রেস্টুরেন্ট, ঝাল লাউঞ্জ অ্যান্ড রেস্টুরেন্ট, গুলশানের এডিট লাউঞ্জ, জোন জিরো লাউঞ্জ, মাউন্ট আল্ট্রা লাউঞ্জ, জাবেদ বাড লাউঞ্জ, ক্লাব অ্যারাবিয়ান, হাবুল-বাবুল, বনানীর মিলাউন্স, ডকসিন, কফি হাউস (বেইজিং লাউঞ্জ), মিট লাউঞ্জ, সিন্থ ফ্লোর, বেইলি রোডের থার্টি থ্রি ও খিলক্ষেত্রের হোটেল রিজেন্সি অন্যতম। এসব লাউঞ্জের ছোট ছোট কেবিনে দুজন বা তার বেশি তরুণ-তরুণী বসে সিসার পাইপ মুখে নিয়ে ধোঁয়া টানতে থাকে। আধো আলোতে চারপাশে ধোঁয়া ছড়িয়ে পড়ে। হালকা মিউজিক তৈরি করে স্বপ্নময় মাদকতাপূর্ণ পরিবেশ।অভিযোগ আছে, এমন পরিবেশে অসামাজিক কার্যকলাপও চলছে।

No comments

Powered by Blogger.