যমুনার ভাঙনে বিলীনের পথে ফুলছড়ি

গাইবান্ধার ফুলছড়ি উপজেলার ভাঙনকবলিত
পাগলারচর গ্রাম। -প্রথম আলো
দফায় দফায় বর্ষণ এবং পানিতে টান ধরার সঙ্গে সঙ্গে যমুনা নদীর ভাঙন ভয়াবহ রূপ নিয়েছে। মাত্র দুই সপ্তাহের ব্যবধানে গাইবান্ধার ফুলছড়ি উপজেলার এরেন্ডাবাড়ী ইউনিয়নের পাগলারচর গ্রামের শতাধিক ঘরবাড়িসহ অন্তত ২০০ বিঘা আবাদি জমি বিলীন হয়েছে। আশ্রয়হীন হয়ে পড়েছে দুই শতাধিক মানুষ। অথচ গ্রামটি রক্ষায় নেই কোনো উদ্যোগ।
গত রোববার পাগলারচর গ্রামে গিয়ে দেখা যায় নদীভাঙা মানুষের চরম দুর্ভোগ। গ্রামে ঢুকতেই নদীর তীরে চোখে পড়ে পলিথিনে মোড়ানো ছোট্ট একটি ঘর। সেখানে থাকেন গ্রামের হতদরিদ্র নারী রাশেদা বেগম (৪৫)। স্বামী নেই। দুই সন্তান ঢাকায় রিকশা চালায়। গৃহহীন রাশেদা গ্রামবাসীর সহায়তায় এ ঘরটি বানিয়ে সেখানে বসবাস করে আসছিলেন। নদীর দিকে তাকিয়ে তিনি বলেন, ‘ওই দ্যাকেন, নদীর মাচখানে হামারঘরে বাড়ি আচিল। তিন মাস আগোত বাড়ি ভাংগি একানে আচ্চি। এ বাড়িকোনাও ভাংগি যাছে।’ এই ঘর ভাঙলে কোথায় যাবেন জানতে চাইলে মুখে আঁচল চাপা দিয়ে কাঁদতে থাকেন তিনি।
একই গ্রামের কৃষক আমিনুল ইসলাম (৪৫) বলেন, ‘হামরা সোরকারের কাচে কিচু চাইনে। শুধু নদী ভাঙার হাত থাকি হামাঘরোক বাঁচান।’ আরেক কৃষক সোবহান মিয়া (৫৫) বলেন, গত দুই সপ্তাহে যমুনার ভাঙনে তাঁর তিনটি ঘরসহ বসতভিটা বিলীন হয়েছে। কিন্তু ভাঙনরোধে এখনো কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি।
এরেন্ডাবাড়ী ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান আবদুল মতিন বলেন, প্রতিদিন গড়ে চার থেকে পাঁচ ফুট এলাকা বিলীন হচ্ছে। এভাবে ভাঙতে থাকলে অল্প দিনের মধ্যেই গোটা গ্রাম নিশ্চিহ্ন হয়ে যাবে। এরই মধ্যে ২২০ থেকে ২৩০ জন মানুষ ঘরবাড়ি হারিয়ে সরকারি জায়গা ও বন্যানিয়ন্ত্রণ বাঁধে আশ্রয় নিয়েছে। ভাঙনের ভয়ে অন্যরাও ঘরবাড়ি নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নিচ্ছে। পাউবোকে পরিস্থিতি জানিয়েও কোনো কাজ হয়নি।
গাইবান্ধা পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) সূত্র জানায়, বর্ষণ বেশি হলে এবং পানি কমে যাওয়ার সময় এ রকম ভাঙন দেখা দেয়। গত দুই সপ্তাহে পাগলারচর গ্রামের বেশির ভাগ অংশই যমুনা নদীতে বিলীন হয়েছে। এতে শতাধিক ঘরবাড়ি এবং অন্তত ২০০ বিঘা আবাদি জমি নদীতে গেছে। নদীভাঙনে কী পদক্ষেপ নিয়েছেন জানতে চাইলে গাইবান্ধা পাউবোর নির্বাহী প্রকৌশলী আবদুল আউয়াল মিয়া বলেন, পাগলারচর এলাকাটি চরাঞ্চলে অবস্থিত। সেখানে ভাঙন রোধে কোনো কর্মসূচি নেই। তবে যমুনার পশ্চিম তীরে ফুলছড়ি বাজার ও গণকবর রক্ষায় ওই অংশের নদীর তীরে বালুভর্তি জিও টেক্সটাইল ব্যাগ স্থাপনের পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে।

No comments

Powered by Blogger.