হলিউড টম হ্যাঙ্কসের জন্মদিন

দেখতে ফরসা, মিষ্টি চেহারার ছেলেটিকে স্কুলে সবাই থমাস জেফ্রি হ্যাঙ্কস নামে চিনত। মজার ব্যাপার হলো, প্রচণ্ড লাজুক স্বভাবের হলেও যথেষ্ট ভালো এবং দায়িত্বশীল ছেলেটি কখনো বিপদে পড়ত না। ছোট্ট সেই ছেলেটি এখন ছয় ফুটের এক মধ্যবয়সী অভিনেতা।
ঝুলিতে তাঁর দুটি অস্কারসহ আরও ৬৭টি পুরস্কার। বলছি বিখ্যাত মার্কিন অভিনেতা, পরিচালক, প্রযোজক ও লেখক টম হ্যাঙ্কসের কথা। তিনি সমসাময়িক মার্কিন সিনেমার সবচেয়ে জনপ্রিয় তারকাদের অন্যতম। আসছে ৯ জুলাই জন্মদিন উপলক্ষে হ্যাঙ্কসভক্তদের জন্য এই বিশেষ নিবেদন।
টম হ্যাঙ্কসের জন্ম ১৯৫৬ সালের ৯ জুলাই যুক্তরাষ্ট্রের ক্যালিফোর্নিয়া অঙ্গরাজ্যের কনকর্ডে। জন্মসূত্রে তিনি কর্কট রাশির জাতক। বাবা অ্যামস মেফোর্ড হ্যাঙ্কস ছিলেন একজন ভ্রাম্যমাণ পাচক, আর মা জ্যানেট ম্যারিলিন হাসপাতালকর্মী। তাঁদের অন্য পরিচয়, তাঁরা দুজন ওই এলাকায় বিবাহ-বিচ্ছেদ আইন উন্নতি করার প্রবর্তক। ১৯৬০ সালে বাবা-মায়ের বিচ্ছেদের পর বাবার হাত ধরে ঘুরতে ঘুরতে আর নিত্যনতুন স্কুলের সঙ্গে নিজেকে মানিয়ে নিতে নিতেই টমের শৈশবের অনেকটা সময় কেটে যায়। স্কাইলাইন হাইস্কুল, চ্যাবট কলেজ এবং ক্যালিফোর্নিয়া স্টেট ইউনিভার্সিটিতে কাটে তাঁর শিক্ষাজীবন। অভিনয়জীবনে ঈর্ষণীয় সাফল্যের অধিকারী হ্যাঙ্কস মূলত দ্বন্দ্ব-সংঘাতময় সাধারণ মানুষের চরিত্রে কিংবা অসাধারণ পরিস্থিতিতে সাধারণ চরিত্রে বেশি অভিনয় করেন। তাঁর অভিনীত ছবিগুলোর মধ্যে সেভিং প্রাইভেট রায়ান, দ্য গ্রিন মাইল, ক্লাউড অ্যাটলাস, অ্যাঞ্জেল অ্যান্ড ডেমন্স, ফরেস্ট গাম্প, কাস্ট অ্যাওয়ে, বিগ, দ্যাট থিং ইউ ডু!, স্লিপলেস ইন সিয়াটল ইত্যাদি মনে রাখার মতো। টয় স্টোরি সিরিজ তাঁর বিখ্যাত অ্যানিমেশন সিরিজ। আসুন, তাঁর কিছু বিখ্যাত ছবি সম্পর্কে সংক্ষেপে জানার চেষ্টা করি ।
সেভিং প্রাইভেট রায়ান (১৯৯৮) ছবিতে টম হ্যাঙ্কসের অসাধারণ অভিনয়ের জন্য তাঁকে ১৯৯৯ সালে ইউএস নেভি বেসামরিক নাগরিকদের জন্য দেওয়া সর্বোচ্চ পুরস্কার ‘ডিস্টিংগুইশড পাবলিক সার্ভিস অ্যাওয়ার্ড’ পদকে ভূষিত করে। ছবিটির মূল কাহিনির লেখক রবার্ট রোড্যাট এবং পরিচালক স্টিভেন স্পিলবার্গ। এতে টম হ্যাঙ্কস অভিনয় করেন ক্যাপ্টেন মিলারের চরিত্রে। তাঁর নেতৃত্বে শত্রুর হাত থেকে প্রাইভেট জেমস রায়ান নামের এক ছত্রীসেনাকে যুদ্ধক্ষেত্র থেকে ফিরিয়ে আনতে আট সদস্যের একটি দল পাঠানো হয়। জেমস রায়ানের বাকি তিন ভাই যুদ্ধে শহীদ হন। ১৬৯ মিনিটের এই ছবি পাঁচটি অস্কার জিতে নেয়।
ফরেস্ট গাম্প (১৯৯৪) ছবিতে তাঁর কৃতিত্ব তাঁকে প্রিমিয়ার ম্যাগাজিনের সর্বকালের সেরা ১০০ ছবি তারকার তালিকায় ৪৩তম স্থান দিয়েছে। ছবির কেন্দ্রীয় ফরেস্ট গাম্প চরিত্রে অভিনয় করেন টম নিজে, যার অতি সামান্য সাধারণ জ্ঞান থাকলেও অনেক ভালো কিছু করার চেষ্টা থাকে। ছোটবেলার প্রিয়তমা জেনির কাছে সব সাফল্য যার তুচ্ছ মনে হতো, সেই গাম্প পরবর্তীকালে প্রমাণ করতে চেষ্টা করে, যে কেউ চাইলে যে কাউকে ভালোবাসতে পারে! ১৪২ মিনিটের ছবিটির পরিচালক রবার্ট জিমেকিস। ছবিটি ছয়টি অস্কারসহ আরও ৩৮টি পুরস্কার জিতে নেয়।
একই সঙ্গে হাসি, আনন্দ ও কান্না এনে দেয় ফ্রাংক ডারাবন্ট পরিচালিত দ্য গ্রিন মাইল (১৯৯৯) ছবিটি। এতে টম হ্যাঙ্কস পল এজকম্বের চরিত্র অলংকরণ করেন, যিনি ছিলেন গ্রিন মাইলের প্রধান কারারক্ষী। ১৮৯ মিনিটের ছবিটি চারটি অস্কারের জন্য মনোনীত হয়েছিল।
টম হ্যাঙ্কসের বর্তমান জীবনসঙ্গিনী রিটা উইলসন। তাঁর সন্তান চারজন। বর্ণাঢ্য জীবনে তিনি পেয়েছেন অসংখ্য স্বীকৃতি। স্পেন্সার ট্রেসির পর তিনিই দ্বিতীয় ব্যক্তি, যিনি ফিলাডেলফিয়া (১৯৯৩) এবং ফরেস্ট গাম্প (১৯৯৪) ছবি দুটির জন্য পরপর দুই বছর অস্কার জয়ের গৌরব অর্জন করেন। ২০০২ সালে প্রদত্ত স্টার টিভির নব্বইয়ের দশকের শীর্ষ ১০ বক্স অফিস তারকার তালিকায় তাঁর স্থান প্রথম। ১৯৯৭ সালে এম্পায়ার ম্যাগাজিনের সর্বকালের সেরা ১০০ ছবি তারকার তালিকায় তিনি ১৭তম স্থান লাভ করেন। খেলাধুলার প্রতি যথেষ্ট অনুরাগী হ্যাঙ্কস ক্লিভল্যান্ড ইন্ডিয়ানস বেসবল দলের সমর্থক। টম হ্যাঙ্কস সম্পর্কে অনেকটাই তো জানা হলো, এবার তাঁকে জন্মদিনের শুভেচ্ছা জানানোর পালা। দিনপঞ্জির দিকে তাকিয়ে ৯ জুলাইয়ের অপেক্ষায় ভক্তরা।
 দেবদুলাল গুহ
তথ্যসূত্র: আইএমডিবি, রোটেন টমেটো, ইয়াহু মুভিজ, উইকিপিডিয়া ইত্যাদি।

No comments

Powered by Blogger.