আসছে রোজা, বাড়ছে শঙ্কা by মাসুদ মিলাদ

এক সপ্তাহ পরেই আসছে রোজা। রোজার পণ্যের মজুত নিয়ে শঙ্কা দূর হয়েছে অনেক আগেই। এর পরও রোজা শুরু না হওয়া পর্যন্ত দাম নিয়ে শঙ্কা কাটছে না। কারণ, রোজার দু-এক দিন আগে বাজারে ক্রেতাদের উপচে পড়া ভিড় দেখে পণ্যের দাম বাড়ানোর সুযোগ নেন বিক্রেতারা।
ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, এবার বিশ্ববাজারে রোজার নিত্যপণ্যের দাম স্থিতিশীল। আবার রোজা উপলক্ষে যেসব পণ্যের চাহিদা বেশি, সেগুলোর আমদানি হয়েছে চাহিদার অন্তত দেড় থেকে আড়াই গুণ বেশি। ফলে, চাহিদার তুলনায় আমদানি বা মজুত কম হওয়ার অজুহাতে আমদানিপণ্যের দাম বাড়ানোর সুযোগ এবার নেই। এর পরও পেঁয়াজের দাম নিয়ে শঙ্কা শুরু হয়েছে। রোজায় বেশি ব্যবহূত এই পণ্য রোজার আগেই এক সপ্তাহের ব্যবধানে কেজিপ্রতি ৮ থেকে ১০ টাকা বেড়ে গেছে। অবশ্য রোজার সময় প্রয়োজনীয় অন্যান্য পণ্যের দাম এখনো স্থিতিশীল।
জানতে চাইলে চট্টগ্রাম চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজের সভাপতি মাহবুবুল আলম প্রথম আলোকে বলেন, এবার ছোলা, মটর ডাল, চিনিসহ রোজার পণ্যের সিংহভাগ আমদানি মূল্যের চেয়ে কম দামে বিক্রি হচ্ছে। আন্তর্জাতিক বাজারে দাম স্থিতিশীল এবং দেশে সরবরাহ ভালো থাকায় এই অবস্থা হয়েছে। তবে রোজার এক-দুই দিন আগে পুরো মাসের বাজার না করার জন্য সবার প্রতি আহ্বান জানান তিনি। কারণ, এতে বাজারে সৃষ্ট বাড়তি চাপের সুযোগে অনেকে পণ্যের দাম বাড়ানোর সুযোগ নিতে পারেন।
দাম নিয়ে শঙ্কা: খুচরা ও পাইকারি ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, মূলত রোজার পণ্যের বিক্রি শুরু হবে রোজার দু-তিন দিন আগে। এ সময় খুচরা বাজারে পণ্যের ব্যাপক চাহিদা ও চাপ সৃষ্টি হবে। এই অস্বাভাবিক চাহিদাকে ঘিরে পাইকারি বাজারে পণ্যের দাম বাড়ার আশঙ্কা করছেন সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা।
জানতে চাইলে রিয়াজউদ্দিন বাজারের খুচরা বিক্রেতা আহমেদ কবীর বলেন, প্রতিবছর রোজার আগেই পুরো মাসের বাজার একসঙ্গে সেরে ফেলার ঝোঁক থাকে ক্রেতাদের মধ্যে। ফলে, পণ্য পর্যাপ্ত থাকলেও চাহিদাকে কেন্দ্র করে পণ্যের দাম কিছুটা বাড়ে। ক্রেতাদের এই ঝোঁক পাল্টালে কেউ দাম বাড়ানোর সুযোগ নিতে পারবেন না।
বাজার ঘুরে দেখা গেছে, খুচরা বাজারে এখন পর্যন্ত পেঁয়াজের দামই বেশি বেড়েছে। আমদানি করা পেঁয়াজের দাম এক সপ্তাহে কেজিপ্রতি ৮ থেকে ১০ টাকা বেড়ে বিক্রি হচ্ছে ৩৮ থেকে ৪০ টাকা। তবে ছোলা, মটর ডাল ও ভোজ্যতেলের দাম আগের তুলনায় কিছুটা কমেছে।
সব পণ্যের আমদানি বেড়েছে: এবারের রোজায় ভোজ্যতেল ও চিনির সরবরাহ নিয়ে শঙ্কা ছিল। তবে গত মাসে রোজার চাহিদার চেয়ে বেশি চিনি ও ভোজ্যতেল আমদানি হয়েছে। যেমন রোজায় চিনির চাহিদা দেড় থেকে পৌনে দুই লাখ টন। কিন্তু গত মাসে চিনি আমদানি হয়েছে সোয়া দুই লাখ টন। রোজার আগে আসছে আরও ৫২ হাজার টন। একইভাবে গত মাসে ভোজ্যতেল আমদানি হয়েছে সোয়া দুই লাখ টন। রোজায় ভোজ্যতেলের চাহিদা ধরা হয় সর্বোচ্চ দুই লাখ টন। অর্থাৎ, চিনি ও ভোজ্যতেলও চাহিদার চেয়ে বেশি আমদানি হয়েছে।
এ ছাড়া রোজায় বেশি ব্যবহূত ছোলা, মসুর ডাল ও মটর ডালের আমদানি গত বছরের চেয়ে দ্বিগুণ বেড়েছে। গত মার্চ থেকে মে মাস পর্যন্ত তিন মাসে মসুর ডাল আমদানি হয় ৪৫ হাজার ৭৪৯ টন। একইভাবে গত তিন মাসে ছোলা আমদানি হয় এক লাখ ছয় হাজার ১৭৮ টন। আবার গত তিন মাসে মটর ডাল আমদানি হয় এক লাখ ৫৬ হাজার ৫১৫ টন।
জানতে চাইলে এস আলম গ্রুপের ভাইস চেয়ারম্যান আবদুস সামাদ প্রথম আলোকে বলেন, এবারের রোজার কোনো পণ্যের সংকট নেই। পণ্য আমদানি বেশি হওয়ায় স্থানীয় বাজারে বিশ্ববাজারের চেয়ে কম দামে পণ্য বিক্রি হচ্ছে।

No comments

Powered by Blogger.