মুরসিকে গৃহবন্দি করে রেখেছে সেনাবাহিনী

গণবিক্ষোভের মুখে সামরিক অভ্যুত্থানে ক্ষমতাচ্যুত মিশরের প্রেসিডেন্ট মোহাম্মদ মুরসিকে গৃহবন্দি করে রাখা হয়েছে।
স্থগিত করা হয়েছে ব্রাদারহুডসমর্থিত সংবিধান এবং ঘোষণা করা হয়েছে ‘জনগণের আকাঙ্ক্ষা বাস্তবায়নে’র জন্য একটি রোডম্যাপ।

আন্তর্জাতিক সংবাদ মাধ্যমগুলো জানিয়েছে, মুরসি এখন সেনাবাহিনীর নজরদারিতে গৃহবন্দি আছেন। এছাড়া, মুরসির দল মুসলিম ব্রাদারহুডের ৩ শতাধিক নেতার বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করা হয়েছে।

মুসলিম ব্রাদারহুডের শীর্ষ নেতা ও মুরসির উপদেষ্টা ইসাম এল-হাদাদ এর পুত্র জিহাদ এল-হেদাদ সংবাদ মাধ্যমকে জানান, “মুরসি ও প্রেসিডেন্ট ভবনের কর্মকর্তারা প্রেসিডেন্সিয়াল রিপালবিকান গার্ডস ক্লাবে গৃহবন্দি রয়েছেন...তবে মুরসিকে তার মিত্র ও উপদেষ্টাদের কাছ থেকে দূরে রাখা হয়েছে এবং তাকে প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের নজরদারিতে রাখা হয়েছে।”

এর আগে, বুধবার স্থানীয় সময় দুপুর আড়াইটায় উদ্ভূত পরিস্থিতিতে করণীয় নির্ধারণ করতে প্রেসিডেন্টকে দেওয়া ৪৮ ঘণ্টার আলটিমেটাম শেষ হওয়ার পর নানা জল্পনা কল্পনা ছড়িয়ে পড়ে মিশরজুড়ে।

শেষ পর্যন্ত মধ্যরাতে দেওয়া এক টেলিভিশন ভাষণে দেশটির সেনাপ্রধান আবদুল ফাতাহ আল-সিসি সামরিক অভ্যুত্থানের ঘোষণা দেন এবং মুরসিকে ক্ষমতাচ্যুত ঘোষণা করেন। সঙ্গে সঙ্গে মুরসি সরকারের প্রণীত সংবিধান স্থগিত ঘোষণা করেন। প্রেসিডেন্ট মুরসি মিশরের জনগণের দাবি পূরণে ব্যর্থ হয়েছেন বলেও দাবি করেন সেনাপ্রধান।

সেনাপ্রধান আবদুল ফাতাহ বলেন, “দেশের সর্বোচ্চ আদালতের প্রধান বিচারপতি অন্তর্বর্তী সরকারের দায়িত্ব পালন করবেন।” খুব শিগগিরই নির্বাচনের তারিখ ঘোষণা করা হবে বলেও জানান তিনি।

সেনাপ্রধানের ভাষ্যমতে অন্তবর্তী সরকারের প্রধান হচ্ছেন গত জুনেই প্রধান বিচারপতি পদে নিয়োগ পাওয়া আদলি মনসুর।

এ দিকে দেশটির বিমানবন্দরের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, মুরসির বিদেশ গমনের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ কর‍া হয়েছে। মুরসির সঙ্গে এ নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছে এক সময়ের নিষিদ্ধঘোষিত দল মুসলিম ব্রাদারহুডের শীর্ষ ৩০ নেতার বিরুদ্ধেও।

আন্তর্জাতিক সংবাদ মাধ্যমগুলো জানায়, সেনাপ্রধানের অভ্যুত্থানের ঘোষণার পর রাজধানী কায়রোর তাহরির স্কয়ারে মুরসির পদত্যাগের দাবিতে জড়ো হওয়া হাজারো জনতা উল্লাসে ফেটে পড়ে। তবে মুরসির সমর্থনকারীরা ‘সামরিক শাসন নয়’ বলে চিৎকার করে।

বিবিসি টেলিভিশনে সরাসরি সম্প্রচারিত খবরে এ সময় আকাশে মুহুর্মুহু আতঁশবাজি ফোটাতে দেখা যায়।

গত চারদিন ধরে মুরসিবিরোধীরা কায়রোর রাজপথে বিক্ষোভ করছে। দেশব্যাপী বড় ধরনের কোন সংঘর্ষের খবর পাওয়া না গেলেও দেশটির উত্তরাঞ্চলীয় শহর ‘মারসা মাথরো’তে সংঘর্ষে ৪ জন নিহত হয়েছে।

এছাড়া আলেক্সান্দ্রিয়ায় আরও ১ জন নিহত হয়েছে। এই নিয়ে গত ২৪ ঘণ্টায় মৃতের সংখ্যা দাঁড়াল ২১ জনে।
দেশটির রাষ্ট্রিয় সংবাদ মাধ্যমের খবরে বলা হয়, মুরসির দল মুসলিম ব্রাদারহুডের মালিকানাধীন ‘মিসর ২৫’ চ্যানেলের পরিচালককে গ্রেফতার করা হয়েছে।

এছাড়া নিরাপত্তা কর্মীরা কায়রোতে আল-জাজিরার শাখা চ্যানেল ‘মুবাশার মিসর’এ অভিযান চালিয়ে বেশ কয়েকজন ব্রাদারহুড ও চ্যানেল কর্মীকে গ্রেফতার করেছে।

এদিকে, মিশরের এই অস্থিরতায় উদ্বেগ প্রকাশ করে দ্রুত স্থিতিশীলতা কামনা করেছেন জাতিসংঘ মহাসচিব বান কি-মুন। মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা মিশরের সর্বশেষ ঘটনাপ্রবাহে গভীর উদ্বেগের কথা জানিয়ে দ্রুত বেসামরিক জনগণের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তরের আহ্বান জানান।

No comments

Powered by Blogger.