বলিভিয়ার প্রেসিডেন্টের বিমানকে আকাশসীমা ব্যবহারে বাধা

মার্কিন নজরদারি ফাঁস করে আলোড়ন তোলা এডওয়ার্ড স্নোডেন আছেন সন্দেহে বলিভিয়ার প্রেসিডেন্ট ইভো মোরালেসের বিমানকে পথ পরিবর্তনে বাধ্য করা হয়েছে। পর্তুগাল ও স্পেনসহ চারটি দেশ তাদের আকাশসীমা ব্যবহারের অনুমতি না দেওয়ায় বিমানটি অস্ট্রিয়ায় অবতরণ করে। বলিভিয়া ও অস্ট্রিয়ার কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, ওই বিমানে স্নোডেন ছিলেন না। এ ঘটনায় ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছেন প্রেসিডেন্ট মোরালেস। বলিভিয়া এ বিষয়ে জাতিসংঘে অভিযোগ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। মোরালেসকে বহনকারী বিশেষ বিমান মঙ্গলবার রাতে রাশিয়ার রাজধানী মস্কো থেকে বলিভিয়া ফিরছিল। পথে পর্তুগাল, স্পেন, ইতালি ও ফ্রান্স নিজেদের আকাশসীমা ব্যবহারে বাধা দেয় ওই বিমানকে। বিমানে স্নোডেন আছেন সন্দেহ করে তা করা হয়। একপর্যায়ে জ্বালানি নেওয়ার জন্য স্পেনের মাদ্রিদে অবতরণ করার অনুমতি চাওয়া হয়। সেই অনুমতিও মেলেনি। পরে মোরালেসের বিমান অস্ট্রিয়ার রাজধানী ভিয়েনায় অনির্ধারিতভাবে অবতরণ করে। ক্ষুব্ধ মোরালেস বলেছেন, ‘আমি অপরাধী নই। কোনো ভুলও করিনি। তার পরও এমনটা করা হয়েছে।’ বিমানে প্রেসিডেন্ট মোরালেসের সঙ্গে ছিলেন তাঁর প্রতিরক্ষামন্ত্রী রুবেন সুভের্ডা। তিনি যুক্তরাষ্ট্রের সমালোচনা করে বলেন, মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তর ইউরোপের বিভিন্ন দেশের সরকারকে ব্যবহার করে এই ঘটনা ঘটিয়েছে। বলিভিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডেভিড চাকুয়েহুয়ানসা সাংবাদিকদের বলেন, ‘স্নোডেন বিমানে আছেন—এই ডাহা মিথ্যার ওপর ভিত্তি করে ফ্রান্স ও পর্তুগাল প্রেসিডেন্ট মোরালেসকে বহনকারী বিমানকে তাদের আকাশসীমা ব্যবহার করতে দেয়নি। আমরা জানি না কারা এ ধরনের মিথ্যা ছড়িয়েছে। প্রেসিডেন্ট মোরালেসের বিমান নিয়ে এই অন্যায়ের তীব্র নিন্দা জানাই আমরা।’ অস্ট্রিয়ার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র আলেকজান্ডার সলেনবার্গ নিশ্চিত করেছেন, বলিভিয়ার প্রেসিডেন্টকে বহনকারী বিমানে স্নোডেন ছিলেন না। মোরালেস একটি সম্মেলনে যোগ দিতে রাশিয়া গিয়েছিলেন। সেখানেই মস্কোর শেরেমেয়িতেভো বিমানবন্দরের ট্রানজিট এলাকায় গত ২৩ জুন থেকে অবস্থান করছেন হংকং থেকে যাওয়া স্নোডেন। মার্কিন কর্তৃপক্ষ তাঁর পাসপোর্ট বাতিল করায় এবং কোনো দেশ এখনো রাজনৈতিক আশ্রয় না দেওয়ায় ট্রানজিট এলাকাতেই অবস্থান করতে হচ্ছে স্নোডেনকে। বিশ্বজুড়ে বিভিন্ন দেশের দূতাবাস ও নিজ দেশের জনগণের ওপর মার্কিন প্রশাসনের নজরদারির খবর ফাঁস করায় যুক্তরাষ্ট্র স্নোডেনের ওপর ক্ষুব্ধ। মোরালেস গত মঙ্গলবার জানিয়েছিলেন, স্নোডেন তাঁর দেশের কাছে রাজনৈতিক আশ্রয় চাইলে তা বিবেচনা করে হবে। তবে তিনি জানান, গত মঙ্গলবার পর্যন্ত স্নোডেনের কোনো আবেদন তাঁর সরকার পায়নি। রাশিয়ার গণমাধ্যমে এমন কথা প্রচারের কয়েক ঘণ্টা পরই মোরালেসের বিমান নিয়ে এ ঘটনা ঘটল। মোরালেসকে বহনকারী বিমান শেষ পর্যন্ত অস্ট্রিয়া থেকে বলিভিয়ার উদ্দেশে ছেড়ে যায়। পথে তেল নিতে এটির স্পেনের ক্যানারি দ্বীপপুঞ্জে অবতরণের কথা। পরে স্পেনের কাছ থেকে সেই অনুমতি পাওয়া গেছে বলে জানা গেছে।  জাতিসংঘে নিযুক্ত বলিভিয়ার রাষ্ট্রদূত সাচা লরেন্তি গতকাল জেনেভায় সাংবাদিকদের বলেন, ‘প্রেসিডেন্ট মোরালেসের বিমানকে আকাশসীমা ব্যবহার করতে না দেওয়ায় আন্তর্জাতিক আইন লঙ্ঘিত হয়েছে। আমরা জাতিসংঘের মহাসচিবের কাছে এর নিন্দা জানানোর উদ্যোগ নিয়েছি।’ এদিকে ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) একজন মুখপাত্র বলেছেন, ইইউভুক্ত একটি দেশের সার্বভৌমত্বের দায়দায়িত্ব তার নিজের নিয়ন্ত্রণে। কোনো দেশ এককভাবে চাইলে তার আকাশসীমায় প্রবেশে যে কাউকে বাধা দিতে পারে। তবে ফ্রান্স ও পর্তুগাল কী কারণে প্রেসিডেন্ট মোরালেসের বিমানকে আকাশসীমা ব্যবহারের অনুমতি দেয়নি, তা অস্পষ্ট। এএফপি, বিবিসি, রয়টার্স।

No comments

Powered by Blogger.