মোদিকে নিয়ে অগোছালো বিজেপি ঘর গোছাচ্ছে কংগ্রেস by সৌম্য বন্দ্যোপাধ্যায়

নরেন্দ্র মোদিকে দল ও জোটের মুখ হিসেবে তুলে ধরা নিয়ে বিজেপি যখন বিব্রত, দ্বিধাবিভক্ত এবং অগোছালো, কংগ্রেস তখন ঘর গোছানো শুরু করে দিয়েছে। শতাব্দীপ্রাচীন কংগ্রেস আগামী নির্বাচনের দিকে তাকিয়ে রাজ্যে রাজ্যে বন্ধুর সন্ধান শুরু করেছে। এই প্রচেষ্টারই সাম্প্রতিক উদ্যোগ ঝাড়খন্ডে একসময়কার মিত্র ঝাড়খন্ড মুক্তি মোর্চার (জেএমএম) সঙ্গে সরকার গঠনের সিদ্ধান্ত।সবকিছু ঠিকঠাক চললে চলতি সপ্তাহেই ঝাড়খন্ডে রাষ্ট্রপতির শাসনের বদলে জেএমএম-কংগ্রেস-রাষ্ট্রীয় জনতা দলের জোট সরকার গঠিত হবে। ঝাড়খন্ডের দিকে তাকানোর আগে গত সপ্তাহেই তামিলনাড়ুর একদা বন্ধু পরে ক্ষুব্ধ ডিএমকের সঙ্গে বোঝাপড়া প্রায় পাকা করে নেয় কংগ্রেস। করুণানিধির কন্যা কানিমোড়ি (এটাই ঠিক তামিল উচ্চারণ) কংগ্রেসের সমর্থন না পেলে দ্বিতীয়বারের জন্য রাজ্যসভায় নির্বাচিত হতে পারতেন না। প্রয়োজনীয় সেই সমর্থন চাওয়ামাত্রই কংগ্রেস হাত বাড়িয়ে দেয়। ডিএমকেকে যেমন কংগ্রেসের প্রয়োজন, করুণানিধিরও তেমনি চাই কংগ্রেসকে। দুর্নীতির দায়ে মন্ত্রী এ. রাজা এবং কন্যা কানিমোড়ির জেলযাত্রা আটকাতে ব্যর্থ করুণানিধি শেষ পর্যন্ত শ্রীলঙ্কায় তামিলদের ‘স্বার্থহানির’ প্রশ্নে ইউপিএ থেকে সমর্থন প্রত্যাহার করে নিয়েছিলেন। ঝাড়খন্ডে গত জানুয়ারি মাসে অর্জুন মুন্ডা সরকারের পতন ঘটার পর থেকে রাষ্ট্রপতির শাসন চলছে। ‘দুর্নীতিগ্রস্ত’ শিবু সোরেনের হাত ধরে জোট সরকার গঠনে শুরুতে কংগ্রেসের আপত্তি ছিল। কিন্তু মোদির উত্থানে বিজেপি যাতে বাড়তি গুরুত্ব না পায়, সে জন্য পুরোনো বন্ধু শিবু সোরেনের হাত ধরতে শেষ পর্যন্ত রাজি হয়ে যায়। ঠিক হয়েছে জোট সরকারের মুখ্যমন্ত্রী পদ পাবে জেএমএম (মুখ্যমন্ত্রী শিবু সোরেন না তাঁর পুত্র হেমন্ত ঠিক হয়নি), কংগ্রেস পাবে রাজ্যের ১৪ লোকসভা আসনের মধ্যে আট থেকে দশটি। এই ফর্মুলায় ২০০৪ সালে কংগ্রেস, জেএমএম ও লালু প্রসাদের রাষ্ট্রীয় জনতা দল ১৪টির মধ্যে ১৩টি আসন জিতেছিল। বিজেপিকে রুখতে এবারও সেই পথে হাঁটতে চলেছে কংগ্রেস। ঝাড়খন্ডের পাশের রাজ্য বিহারেও নিতীশ কুমারের দিকে বন্ধুত্বের হাত বাড়িয়ে দিয়েছে কংগ্রেস। নিতীশ সেই হাত ধরবেন না, এমন কোনো ইঙ্গিত এখনো দেননি। কংগ্রেস চাইছে, বিহারেও তাদের সঙ্গে বিজেপিবিরোধী তিন শক্তি, নিতীশ-লালু-রামবিলাস একজোট হোন। কংগ্রেসের নজরে পরবর্তী রাজ্য অন্ধ্র প্রদেশ। রাজশেখর রেড্ডির অকালমৃত্যু ও তাঁর ছেলে জগনমোহনের বিদ্রোহ কংগ্রেসকে যথেষ্ট দুর্বল করে দিয়েছে। জগনমোহনের সঙ্গে সমঝোতার একটা চেষ্টা তলে তলে চলছে।এদিকে কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভা গতকাল রাতে খাদ্য নিরাপত্তা অধ্যাদেশ অনুমোদন করেছে। কংগ্রেসের আশা, এই অধ্যাদেশও ভোটের রাজনীতিতে তাদের সুবিধা করে দেবে।

No comments

Powered by Blogger.