পাহাড়ে সংঘাতে ইন্ধন দিচ্ছে কারা? by মোয়াজ্জেমুল হক

পার্বত্য চট্টগ্রামে ঐতিহাসিক শান্তি চুক্তির অব্যবহিত পর থেকে এ এলাকাকে নতুন করে অশান্ত করে রাখতে ষড়যন্ত্রের বীজ বপন হয়েছে। আর এর নেপথ্যে রয়েছে পাহাড়ী-বাঙালী উভয় সমপ্রদায়ের সহিংসতার উগ্র মনোভাবাপন্ন পৃথক পৃথক গোষ্ঠী।
আবার এদের ইন্ধন যোগাচ্ছে কয়েকটি দাতা সংস্থা ও দেশী-বিদেশী বেশকিছু এনজিওর স্থানীয় এ দেশীয় কর্মকর্তা কর্মচারীরা। পাশাপাশি বর্তমান সরকারবিরোধী রাজনৈতিক দলগুলোর নেতাকর্মীদের বিচ্ছিন্ন অংশের ভূমিকাও অত্যন্ত ন্যক্কারজনক। ফলে পাহাড়ে বিপ্তিভাবে পাহাড়ী-বাঙালী সংঘর্ষ, অগি্নসংযোগ, হত্যা, ধর্ষণসহ উত্তাপ সৃষ্টির নানা ঘটনাবলীর জন্ম নিচ্ছে। এ খবর দায়িত্বশীল বিভিন্ন সূত্রের।
সূত্র জানায়, শানত্মি চুক্তির পর ভূমি বিরোধ পাহাড়ের মূল সমস্যা হিসেবে চিহ্নিত হলেও এ বিরোধকে সামনে রেখে উভয় সমপ্রদায়ের উগ্র মনোভাবাপন্নরা কারণে অকারণে রক্তের হোলি খেলায় লিপ্ত হয়ে দেশের গ-ি ছাড়িয়ে বিদেশীদের দৃষ্টি আকর্ষণে যে তৎপরতা চালাচ্ছে তা কোন অবস্থাতেই দেশ ও জাতির জন্য সুখকর নয়।
সমপ্রতি বাঘাইছড়ি ও খাগড়াছড়িতে সহিংস সংঘর্ষের ঘটনার পর ষড়যন্ত্রকারীরা এ দুই স্থানের ঘটনাকে অতিরঞ্জিত করে তথ্য প্রযুক্তির সহজলভ্যতার সুযোগে যেভাবে ছড়িয়ে দিয়েছে তাতে দেশের ভাবমূর্তিতে আঘাত হেনেছে। এরই মধ্যে জাতিসংঘ প্রধান, ইইউ ঘটনার নিন্দা জানিয়েছে অতিরঞ্জিত তথ্য অবহিত হয়ে। সামরিক জানত্মার দমন নিপীড়নে নিষ্পেষিত মিয়ানমারে বৌদ্ধ ভিুরা এ ঘটনার প্রতিবাদে মিছিল সমাবেশ করেছে। একটি সাহায্য সংস্থার স্থানীয় প্রতিনিধিদের প েপুড়ে যাওয়া ঘরবাড়ির মালিকদের ৩ লাখ টাকা হারে সাহায্য দেয়ার প্রতিশ্রম্নতি দেয়াতে ঘটনার পরে অনেকে নিজেদের বাড়িতে নিজেরা আগুন দিয়েছে বলেও জোরালো অভিযোগ রয়েছে। কারণ তির চেয়ে সাহায্যের পরিমাণ বহুগুণে বেশি ঘোষিত হয়েছে বলে। এভাবেই সহিংসতা ছড়িয়ে যাচ্ছে পাহাড়ে।
সূত্র জানায়, দীর্ঘ দু'দশকেরও বেশি সময়ের রক্তয়ী সংঘাতের পর ১৯৯৭ সালের ২ ডিসেম্বর সম্পাদিত ঐতিহাসিক পার্বত্য শানত্মি চুক্তির পর চুক্তিবিরোধীদের সমর্থিত সরকার মতায় আসার কারণে চুক্তি বাসত্মবায়নের অগ্রগতি থমকে গিয়ে সমস্যা দিনে দিনে ঘনীভূত হয়ে ব্যাপকতর রূপ নেয়। ঐ সময়ে বাঙালীদের প েসমঅধিকার পার্বত্য বাঙালী ছাত্র পরিষদ, পার্বত্য গণপরিষদ এবং পাহাড়ীদের একাংশের সমর্থিত ইউপিডিএফের ব্যানারে শুরম্ন হয় শানত্মি চুক্তিবিরোধী তৎপরতা। যার রেশ এখনও থামেনি। তবে উগ্র বাঙালীদের প েএখন শানত্মি চুক্তির বিরোধিতার বদলে সমঅধিকারের সেস্নাগান তোলা হচ্ছে। পাসত্মরে, ইউপিডিএফের প েশানত্মি চুক্তির বিরোধিতার পাশাপাশি পার্বত্য চট্টগ্রামে পূর্ণ স্বায়ত্তশাসন প্রতিষ্ঠার দাবিতে সোচ্চার রয়েছে। শানত্মি বাহিনীর ব্যানারে যারা দীর্ঘ দু'দশক যুদ্ধে লিপ্ত ছিল তাদের সংগঠন জনসংহতি সমিতির (জেএসএস) প থেকে শুরম্ন থেকেই ইউপিডিএফকে সন্ত্রাসী, চাঁদাবাজ আখ্যা দিয়ে তাদের নিষিদ্ধ করার দাবি করা হয়েছে দফায় দফায় এবং তা এখনও অব্যাহত আছে। কিন্তু বিভিন্ন সরকার এ দাবির প েকোন সিদ্ধানত্ম গ্রহণ করেনি।
এদিকে, পাহাড়ের বিভিন্ন অংশে ইউপিডিএফ, জেএসএস-এর নেতাকমর্ী নামে সন্ত্রাসীরা যে হারে চাঁদাবাজিতে লিপ্ত রয়েছে তা শানত্মিপ্রিয় পাহাড়ী-বাঙালী উভয় সমপ্রদায়ের জনগোষ্ঠীর জন্য চরম উৎকণ্ঠার বিষয়ে পরিণত হয়ে আছে। বাঙালী সন্ত্রাসীরা তাদের স্বার্থে যেমন মাঠে তৎপর, তেমনি পাহাড়ী সন্ত্রাসীরাও মাঠে নেমে আনাচে কানাচে এমন অপতৎপরতায় লিপ্ত হয়েছে যা স্থিতিশীলতাকে বিপর্যসত্ম করে রেখেছে।
এদিকে, কিছু দেশী বিদেশী বিভিন্ন পত্রিকা পার্বত্য চট্টগ্রাম সম্পর্কে এমন এমন কাল্পনিক ঘটনা প্রকাশ করছে যা বিব্রত করছে পাহাড়ের শানত্মিপ্রিয় মানুষের স্বাভাবিক জীবনযাত্রাকে। এসব অপপ্রচারকে পুঁজি করে মানুষকে আতঙ্কিত করে পরিস্থিতিকে আরও ঘোলাটে করার কূটকৌশলে লিপ্ত হয়েছে ষড়যন্ত্রকারীরা।
বিভিন্ন সূত্র মতে, ১৯৯৭ সনের ২ ডিসেম্বর যখন সরকার ও জেএসএস-এর সঙ্গে পার্বত্য শানত্মিচুক্তি সম্পাদিত হয়, তখন থেকেই মূলত নতুন করে ষড়যন্ত্রের নীলনকশা রচিত হয়। একটি মহল নিজেদের স্বার্থ হাসিলে ও তাদের গুরম্নত্ব অনুধাবনের জন্য পাহাড়ের বিভিন্ন শ্রেণীর জনগোষ্ঠীকে পৃষ্ঠপোষকতা করতে শুরম্ন করে। আরেকটি মহল গোপনে ইন্ধন যোগানো শুরম্ন করে শানত্মি চুক্তিবিরোধী পাহাড়ি সংগঠন ইউপিডিএফকে। শানত্মি চুক্তির পর পার্বত্যবাসীর প্রত্যাশা ছিল স্থিতিশীল শানত্মি প্রতিষ্ঠা। আর কারও জীবনহানি ঘটবে না, বাড়িঘর সহায় সম্পত্তিতে অগি্নসংযোগের ঘটনা ঘটবে না, নিজ ঠিকানা থেকে অন্যত্র চলে যেতে হবে না। কিন্তু শানত্মি চুক্তির একযুগ পরে এসেও আগেকার অশানত্ম পাহাড় অশানত্মই হয়ে গেল। এর অনত্মর্নিহিত রহস্যের কথা শানত্মিপ্রিয় পাহাড়বাসীর মনে অজানাই রয়ে গেছে এখনও।
পাহাড়ের বিশেস্নষকদের বিভিন্ন সূত্র মতে পার্বত্য চট্টগ্রাম নিয়ে করণীয় সরকারী সুনির্দিষ্ট নীতি অবাসত্মবায়ন হয়ে থাকার কারণে পাহাড়ে বার বার সহিংসতার ঘটনা ঘটছে। পরিলতি হচ্ছে, সরকার পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে পার্বত্য চট্টগ্রাম নিয়ে নীতিনির্ধারণের েেত্রও পরিবর্তন ঘটছে। ফলে পার্বত্য চট্টগ্রামের স্থিতিশীল পরিবেশ সৃষ্টিতে বারে বারেই বাধাগ্রসত্ম হচ্ছে। এছাড়া পাহাড়ে মাঠপর্যায়ে কর্মরত সেনাসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর উর্ধতন কর্মকর্তাদের মনোভাবের সঙ্গে কেন্দ্রের সিভিল ও সেনা প্রশাসনের কর্তা ব্যক্তিদের বিভিন্নভাবে মত পার্থক্যের কারণে ঘটনার মূলে হাত পড়ছে না। এছাড়া উভয় প্রশাসনের সমন্বয়হীনতাও রয়েছে নানা পর্যায়ে। ফলে অব্যাহতভাবে সমস্যা জটিল থেকে জটিলতর হচ্ছে। শানত্মি চুক্তির যথাযথ বাসত্মবায়ন, পাহাড়ী-বাঙালীদের মধ্যে ভূমি বিরোধ নিষ্পত্তি এবং পুনর্বাসিত বাঙালীদের জন্য কার্যকর ব্যবস্থা করা হতো তাহলে পাহাড়ের শানত্মি বিনষ্টের কোন কারণই খুঁজে পাওয়া যেত না বলে সূত্রগুলোর অভিমত।

No comments

Powered by Blogger.