হুমায়ূনশূন্যতা একুশে গ্রন্থমেলায়- এখনো সব স্টলে নম্বর লাগানো হয়নি by শফিকুল ইসলাম

জনপ্রিয় কথাসাহিত্যিক হুমায়ূন আহমেদের শূন্যতা বিরাজ করছে বাংলা একাডেমীর অমর একুশে গ্রন্থমেলায়। প্রিয় লেখকের নতুন বইয়ের খোঁজে বিভিন্ন প্রকাশনীর স্টলে ভিড় জমাচ্ছেন ক্রেতারা।
বিশেষ করে হুমায়ূন আহমেদের বেশির ভাগ বই প্রকাশ করেছে অন্য প্রকাশে সব সময় ভিড় লেগেই থাকে। স্টলের ওপরে লেখা রয়েছে ‘নয়ন তোমারে পায় না দেখিতে, রয়েছ নয়নে নয়নে’। বাক্যটির ‘তোমারে’ হলেন বরেণ্য কথাসাহিত্যিক হুমায়ূন আহমেদ। মৃত্যুর আগে সময় পেলেই গ্রন্থমেলায় ছুটে আসতেন তিনি। বইমেলার অনেকটা স্থানজুড়েই থাকতেন তিনি। গেল বছর তিনি লাখো ভক্তকে কাঁদিয়ে চলে গেছেন না ফেরার জগতে। অচিন দেশে চলে যাওয়া হুমায়ূন আহমেদ এবারো গ্রন্থমেলায় আছেন। তবে সশরীরে নয়। এবার বাংলা একাডেমীর অমর একুশে গ্রন্থমেলা বরেণ্য এই লেখকের নামে উৎসর্গ করা হয়েছে। তাই বিশিষ্ট এই লেখকের বই কেনার জন্য বিভিন্ন স্টলে ভিড় জমাচ্ছেন ক্রেতারা।

এ দিকে গ্রন্থমেলার সব স্টলে এখনো নম্বর লাগানো হয়নি। অথচ গ্রন্থমেলার নীতিমালা অনুযায়ী মেলা শুরুর দিন থেকেই মেলায় স্টল নম্বর লাগানোর দায়িত্ব আয়োজক সংস্থা বাংলা একাডেমীর।

হুমায়ূনকে স্মরণ : এবার হুমায়ূন আহমেদ গ্রন্থমেলায় সশরীরে না থাকলেও তাকে স্মরণ করতে ভোলেননি তার বই প্রকাশকেরা। গ্রন্থমেলার বিভিন্ন প্রকাশকের স্টলের ওপর নানা কথা ও ছন্দ লেখা রয়েছে তাকে নিয়ে। নানা আলোচনা-উপস্থাপনায়ও বড় একটি অংশ দখল করে আছেন তিনি। গ্রন্থমেলায় কাকলী প্রকাশনী হুমায়ূন আহমেদের বেশ কিছু পুরনো বই আবারো মেলায় এনেছে। সব কিছুতে মনে হয়, এবারের মেলাটাও হুমায়ূনময়। কিন্তু তারপরও মেলায় আসা হুমায়ূনভক্তরা এ লেখকের শূন্যতা অনুভব করছেন। অন্য প্রকাশের মোজাম্মেল হক শিশির জানান, হুমায়ূন স্যারের এখন পর্যন্ত দুইটি নতুন বই মেলায় এসেছে। তা ছাড়া আগের বইগুলোও ভালো বিক্রি হচ্ছে।

লাগানো হয়নি স্টল নম্বর : গ্রন্থমেলার চতুর্থ দিনেও সব স্টলের নম্বর টাঙানো হয়নি। অমর একুশে গ্রন্থমেলার বিভিন্ন চত্বরে ঘুরে এ দৃশ্য চোখে পড়ে। এ ক্ষেত্রে পছন্দের স্টলে যেতে বিড়ম্বনায় পড়েন ক্রেতারা। তারা একে অপরকে স্টল নম্বর জিজ্ঞেস করেন। এরপর যেতে পারেন পছন্দের স্টলে।

মেলার অবস্থা : গতকাল রোববার ছিল বইমেলার তৃতীয় দিন।  বেলা ৩টায় মেলা শুরু হয়। একই দিনে এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষা শুরু হওয়ায় শুরুতে লোক সমাগম ছিল কম। সন্ধ্যার পর মেলা বেশ জমে ওঠে। বিক্রিও হয় ভালো।

মেলার নতুন বই : অমর একুশে গ্রন্থমেলার তৃতীয় দিনে মেলায় মোট ৯৫টি নতুন বই এসেছে। এর মধ্যে ঐতিহ্য এনেছে কাইজার চৌধুরীর গল্পের বই সেরাগল্প ২০১১, সাহাদাত পারভেজের ফটো অ্যালবাম শতবর্ষের পথিক এবং প্রকৌশলবিষয়ক কামাল পাশার বই নির্মাণ করি সুন্দর বাড়ি, অন্য প্রকাশ এনেছে হুমায়ূন আহমেদের আত্মকথা হিজিবিজি ও ভ্রমণসমগ্র, আনিসুজ্জামান রচিত হুমায়ূন আহমেদ স্মারকগ্রন্থ, কাকলী প্রকাশনী এনেছে সুমন্ত আসলামের কিশোর উপন্যাস জিনিয়াস জিনিয়ান, আগামী প্রকাশনী এনেছে আনিসুজ্জামানের মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক গ্রন্থ মুক্তিযুদ্ধ এবং তারপর, ওয়াহিদা নূর আফজার উপন্যাস বিতংস, দীপিকা ঘোষের ধূসর প্রেমের গোধূলী, এ কে শেরামের উপন্যাস পথভ্রষ্ট পথিক, সূচীপত্র এনেছে ফারাজী লুৎফর রহমানের একাত্তর তোমায় ভুলব না ইত্যাদি।

মোড়ক উন্মোচন : গতকাল গ্রন্থমেলার নজরুল মঞ্চে নতুন পাঁচটি বইয়ের মোড়ক উন্মোচন করা হয়। এর মধ্যে দি রয়েল পাবলিশার্স এনেছে দর্পণ কবীরের ফেরারী বসন্ত, বনলতা এনেছে রিনা সরকারের উপন্যাস কষ্ট, ভাষা প্রকাশ এনেছে দিলদার হোসেনের সঙ্গীতের প্রিয় মানুষেরা, পিপিএমসি থেকে মো: আজম হিরার মানুষের দেশে পরী, অঙ্কুর প্রকাশনী থেকে রাশেদ রাফির শিশু ফুল।

মেলামঞ্চে গতকাল : গ্রন্থমেলার তৃতীয় দিনে বিকেল ৪টায় মেলার মূল মঞ্চে ‘বাংলাদেশের সমাজ ও সংস্কৃতির রূপান্তরের ধারা’ শীর্ষক সেমিনার অনুষ্ঠিত হয়। এতে প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন অধ্যাপক মেঘনা গুহঠাকুরতা। আলোচনায় অংশ নেন রবিউল ইসলাম ও মুজতবা আহমেদ মুরশেদ। সভাপতিত্ব করেন ইতিহাসবিদ সিরাজুল ইসলাম।

প্রাবন্ধিক বলেন, বর্তমান বাংলাদেশকে বুঝতে হলে আত্মস্থ করতে হবে এর আবহমান ভাষাগত, ধর্মীয় ও আঞ্চলিক বৈচিত্র্যকে। বাংলাদেশের আধুনিক সত্তা যুগ যুগ ধরে এই ভূখণ্ডের উদার মানবিক বোধের চর্চা ও অন্তহীন রূপান্তরের ফসল। এই পরিপ্রেতি থেকেই বাংলাদেশের সমাজ ও সাংস্কৃতিক রূপান্তরের ধারাকে অনুধাবন করতে হবে। আলোচকরা বলেন, এককালের কৃষিকেন্দ্রিক বাঙালি সমাজ-সংস্কৃতির মানুষ এখন জীবিকার প্রয়োজনে সারা পৃথিবীতে ছড়িয়ে পড়েছে। আমাদের সমাজ, সংস্কৃতিতে এর প্রভাব খতিয়ে দেখা প্রয়োজন। এ ছাড়া প্রযুক্তির বিস্ফোরক বিকাশ আমাদের গ্রাম-নগর উভয় অঞ্চলের রূপান্তরকে ভিন্নতর মাত্রা দিয়েছে।

ইতিহাসবিদ সিরাজুল ইসলাম বলেন, সমাজ-সংস্কৃতির রূপান্তরের প্রশ্ন কোনো একমাত্রিক আলোচনার বিষয় নয়। এর সাথে অনিবার্যভাবে সংশ্লিষ্ট দেশের অর্থনীতি, রাজনীতি ও অন্যান্য আনুষঙ্গিক পরিসর। তবে চিরায়ত বাঙালি সংস্কৃতির বৃহত্তর পট থেকেই আমরা সংগ্রহ করতে পারি সমকালীন সঙ্কট উত্তরণের পথনির্দেশনা।

সবশেষে সন্ধ্যায় সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে আবৃত্তি করেন আবৃত্তিশিল্পী লায়লা আফরোজ ও এস এম মাহিদুল ইসলাম। সঙ্গীত পরিবেশন করেন কণ্ঠশিল্পী রেজওয়ানা চৌধুরী বন্যা, মিতা হক, পাপিয়া সারোয়ার, তপন মাহমুদ, ফাহিম হোসেন চৌধুরী এবং মহিউজ্জামান চৌধুরী।

মেলামঞ্চে আজ : আজ সোমবার বিকেল ৪টায় গ্রন্থমেলার মূল মঞ্চে অনুষ্ঠিত হবে ‘প্রযুক্তি বিপ্লব ও মুদ্রিত বইয়ের ভবিষ্যৎ’ শীর্ষক আলোচনা। অনুষ্ঠানে প্রবন্ধ উপস্থাপন করবেন জাকারিয়া স্বপন। আলোচনায় অংশ নেবেন অসীম সাহা, মোস্তফা জব্বার ও মজিদ মাহমুদ। সভাপতিত্ব করবেন সামসুল বারি।

No comments

Powered by Blogger.