সন্ত্রাস প্রতিবাদের ভাষা হতে পারে না- জামায়াতের হিংসাত্মক কর্মকাণ্ড

জামায়াতে ইসলামী ও তাদের ছাত্রসংগঠন ইসলামী ছাত্রশিবিরের হিংসাত্মক কর্মকাণ্ড গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক কর্মসূচির সম্পূর্ণ পরিপন্থী। তাদের আচার-আচরণে উগ্র গোপন সংগঠনের লক্ষণ প্রকাশ পাচ্ছে কি না, সেটা জরুরি ভিত্তিতে খতিয়ে দেখা প্রয়োজন।
নিবন্ধনকৃত একটি রাজনৈতিক দল হিসেবে জামায়াতের শান্তিপূর্ণ সভা-সমাবেশের অধিকার আছে। এমনকি চলমান যুদ্ধাপরাধের বিচার সম্পর্কে ভিন্নমত প্রকাশের যে সংবিধানসম্মত অধিকার রয়েছে, তা-ও আমরা অস্বীকার করি না। কিন্তু তাদের ভুলে গেলে চলবে না যে তারা প্রাতিষ্ঠানিকভাবেই যুদ্ধাপরাধের দায়ে অভিযুক্ত। জামায়াতের কয়েকজন শীর্ষস্থানীয় নেতা বিচারের কাঠগড়ায়। বিচারের বিষয়টি সম্পূর্ণ আদালতের এখতিয়ারভুক্ত। সেখানে অভিযুক্ত ব্যক্তিরা আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ পাচ্ছেন, কিন্তু বিচার-প্রক্রিয়ার চূড়ান্ত পর্যায়ে এসে জামায়াত-শিবির দেশে যে অরাজক পরিস্থিতি সৃষ্টি করেছে, তা আমাদের বিচারব্যবস্থা ও রাষ্ট্রের ওপর আঘাত বলেই মনে করি।
রাজশাহীতে পুলিশের রাইফেল কেড়ে নিয়ে সেই রাইফেলের বাঁট দিয়ে পুলিশকে পেটানো, মতিঝিলে আক্রান্ত পুলিশকে আদিম বন্যতায় বাঁশ দিয়ে খোঁচানো এবং নারায়ণগঞ্জে রাস্তায় ভূলুণ্ঠিত পুলিশের ওপর নিষ্ঠুর নির্যাতনের মতো ঘটনাবলি ইঙ্গিত দিচ্ছে যে স্বাধীনতাবিরোধী এই দল পরিকল্পিতভাবে সংবিধান ও আইনসম্মত পথ পরিহার করে দেশের বিরুদ্ধে অঘোষিত যুদ্ধ শুরু করেছে। তাদের এই সন্ত্রাসী তৎপরতা কঠোর হাতেই দমন করতে হবে।
আমাদের আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী, বিশেষ করে পুলিশ ক্ষেত্রবিশেষে অসহিষ্ণু ও বাড়াবাড়ি আচরণ করে থাকে। কিন্তু সাম্প্রতিক কালে পুলিশের অবিরাম মার খাওয়ার ঘটনায় দেশবাসী উদ্বিগ্ন। জামায়াত-শিবিরের এই উগ্র ও বেআইনি কর্মকাণ্ডের প্রতি প্রধান বিরোধী দলের সমর্থন সেই উদ্বেগ আরও বাড়িয়ে দিয়েছে। বলার অপেক্ষা রাখে না, যুদ্ধাপরাধের বিচারের প্রক্রিয়া নস্যাৎ করতেই জামায়াত-শিবির হিংসাত্মক তৎপরতা চালাচ্ছে। দেশের প্রচলিত আইনে নিবন্ধিত কোনো দল দাবিদাওয়া পূরণে সহিংস পথ নিতে পারে না। জামায়াত-শিবির এখন পদ্ধতিগতভাবে পুলিশ বাহিনীর কর্তৃত্ব চ্যালেঞ্জ করছে কি না, সেই প্রশ্নই বড় হয়ে উঠেছে। আইনের আওতায় থেকে রাষ্ট্রীয় কর্তৃপক্ষকে এই সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড প্রতিহত করতে হবে। জামায়াত-শিবিরের চলমান সহিংসতা মোকাবিলায় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে আরও পরিকল্পিত পদক্ষেপ নিতে হবে। একই সঙ্গে মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচারে গঠিত আন্তর্জাতিক ট্রাইব্যুনালের নিরাপত্তাব্যবস্থাও যাতে পর্যাপ্ত থাকে, সে ব্যাপারেও সরকারের অব্যাহত নজরদারি থাকতে হবে।
ডিএমপির কমিশনার গতকাল বলেছেন, জামায়াত-শিবির যদি শান্তিপূর্ণভাবে তাদের কর্মসূচি পালন করে, তাহলে পুলিশ বাধা দেবে না। তাঁর এই বক্তব্য জনগণের কাছে যাতে বিশ্বাসযোগ্য হয়, তা পুলিশ বাহিনীকে আচরণ দিয়েই প্রমাণ করতে হবে। ট্রাইব্যুনালের বিচার-প্রক্রিয়া সম্পর্কে যুক্তিসংগত সমালোচনা ও ভিন্নমত প্রকাশ সংবিধানস্বীকৃত। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ওপর চড়াও হয়ে বা যানবাহনে আগুন দেওয়া কখনোই প্রতিবাদের ভাষা হতে পারে না। আমরা সব রাজনৈতিক দলের কাছেই দায়িত্বশীল আচরণ আশা করি।

No comments

Powered by Blogger.