জেনারেলদের সতর্ক থাকতে বললেন প্রধানমন্ত্রী-গণতন্ত্রবিরোধী কর্মকাণ্ড সব শক্তি দিয়ে ঠেকাতে হবে

সেনাবাহিনীর পিঠে সওয়ার হয়ে কোনো স্বার্থান্বেষী মহল যাতে দেশের উন্নয়ন ও অগ্রযাত্রা ব্যাহত করতে না পারে সে ব্যাপারে সতর্ক থাকার জন্য সেনাবাহিনীর ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের প্রতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আহ্বান জানিয়েছেন।
গতকাল রবিবার সেনাবাহিনীর জেনারেলদের এক অনুষ্ঠানে তিনি বলেছেন, সংবিধান ও গণতন্ত্রবিরোধী যেকোনো কর্মকাণ্ড সব শক্তি দিয়ে প্রতিহত করতে হবে। এ ছাড়া জেনারেলদের অধস্তনদেরও কোনো মহল যাতে বিভ্রান্ত করতে না পারে সে দিকে লক্ষ্য রাখতে হবে। সেনা সদর দপ্তরের অফিসার্স মেসে 'বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর জেনারেলস কনফারেন্স ১/২০১৩' উপলক্ষে দিকনির্দেশনামূলক বক্তব্যে প্রধানমন্ত্রী এমন আহ্বান জানালেন। গতকাল সকালে ঢাকা সেনানিবাসে অনুষ্ঠানটির আয়োজন করা হয়।
আইএসপিআর জানায়, সভায় প্রধানমন্ত্রী জেনারেলদের উদ্দেশে বলেন, 'শত বাধা সত্ত্বেও যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের আওতায় আনা হয়েছে এবং যা মোটেই সহজ কাজ ছিল না, যদিও বিচারে বাধাদান ও বিচার বন্ধে প্রতিনিয়ত বিশৃঙ্খলা তৈরির চেষ্টাসহ রাষ্ট্রবিরোধী ষড়যন্ত্র চলছে।' এ জন্য তিনি সবাইকে সজাগ থাকার আহ্বান জানান। তিনি বলেন, 'অনেক ত্যাগ, তিতিক্ষা ও সংগ্রামের বিনিময়ে দেশে আজ গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা হয়েছে। আমি আশা করি, আপনারা সংবিধান ও গণতন্ত্রবিরোধী যেকোনো কর্মকাণ্ড সব শক্তি দিয়ে প্রতিহত করবেন।'
শেখ হাসিনা বলেন, 'সেনাবাহিনীর চেইন অব কমান্ড সমুন্নত রাখবেন। জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তাদের নৈতিকতা, সততা এবং কর্তব্যপরায়ণতার উদাহরণ হিসেবে নিজেদের অধস্তনদের সামনে উপস্থাপন করতে হবে। অধস্তনদের শ্রদ্ধা ও আনুগত্য অর্জন করতে হবে। তাঁদের সব প্রয়োজনীয়তা, আশা-আকাঙ্ক্ষা ও চিন্তা-ভাবনার দিকে লক্ষ্য রাখতে হবে। অনেক সময় কুচক্রী মহল হীনস্বার্থে ভিত্তিহীন তথ্য ছড়িয়ে সশস্ত্র বাহিনীর সদস্যদের মধ্যে বিভ্রান্তি সৃষ্টির চেষ্টা করে। আপনাদের অধস্তনরা যাতে এই ধরনের বিরূপ প্রপাগান্ডার শিকার না হন সে দিকে লক্ষ্য রাখতে হবে।'
গত বছরের ৭ ফেব্রুয়ারি সেনাবাহিনীর জেনারেল কনফারেন্সেও প্রধানমন্ত্রী সেনাবাহিনীকে সংবিধান এবং গণতন্ত্রবিরোধী যেকোনো কর্মকাণ্ড সর্বশক্তি দিয়ে প্রতিহত করার আহ্বান জানিয়েছিলেন। গতবারের একই অনুষ্ঠানে তিনি বলেন, 'বাংলাদেশের সংবিধান এবং গণতান্ত্রিক সরকারের প্রতি (সবার) পূর্ণ আনুগত্য থাকতে হবে। সংবিধান এবং গণতন্ত্রবিরোধী যেকোনো কর্মকাণ্ড সর্বশক্তি দিয়ে প্রতিহত করতে হবে। সংবিধান ও গণতন্ত্রকে সমুন্নত রাখতে হবে।' সেই অনুষ্ঠানে তিনি ধন্যবাদ জানিয়ে বলেন, গণতান্ত্রিক ধারা ব্যাহত করার অপচেষ্টা হয়েছিল এবং সেনাবাহিনী তা নস্যাৎ করে দেয়।
গতকালের অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বর্তমান সরকার সেনাবাহিনীর উন্নয়ন, সম্প্রসারণ ও আধুনিকায়নে বিশ্বাসী। সেই লক্ষ্য সামনে রেখে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে। এরই ধারাবাহিকতায় প্রয়োজনীয় খসড়া জাতীয় প্রতিরক্ষা নীতি ও সেনাবাহিনী ফোর্সেস গোল-২০৩০ নির্ধারণের কার্যক্রম প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। প্রধানমন্ত্রী জেনারেলদের উদ্দেশে বলেন, সশস্ত্র বাহিনীর উন্নয়নে সম্প্রতি রাষ্ট্রীয় ঋণচুক্তির আওতায় রাশিয়া থেকে এক বিলিয়ন মার্কিন ডলারের সমরাস্ত্র ক্রয়ের চুক্তি হয়েছে। এটি ভবিষ্যতে সশস্ত্র বাহিনীর সক্ষমতা বৃদ্ধিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।
শেখ হাসিনা বলেন, তাঁর সরকারের বর্তমান মেয়াদে দেশে-বিদেশে সেনাবাহিনীর যৌথ প্রশিক্ষণ কার্যক্রম বেড়েছে। প্রশিক্ষণ এলাকার সীমাবদ্ধতার কথা চিন্তা করে চর কেরিং-এর ৯ হাজার একর জমি সেনাবাহিনীকে দিতে ভূমি মন্ত্রণালয়কে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। সেনাবাহিনীর আধুনিকায়নে ফোর্সেস গোল ২০৩০-এর আলোকে রিয়াল এস্টেট মাস্টারপ্লান চূড়ান্ত করা হয়েছে বলেও জানান প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, এরই মধ্যে সিলেটের সালুটিকর ও কঙ্াজারের রামুতে একটি করে পূর্ণাঙ্গ সেনানিবাস স্থাপনের জন্য যথাক্রমে ৯২০.৭৮ একর এবং ৬৫৭.১৭ একর জমি সেনাবাহিনীর কাছে হস্তান্তরের প্রস্তাবনা মন্ত্রণালয়ে সক্রিয় বিবেচনাধীন।
প্রধানমন্ত্রী জানান, সেনাবাহিনীর সদস্যদের আবাসিক সমস্যা সমাধানে চলতি অর্থবছরই ৩৬৩ কোটি টাকা পুনঃউপযোজনের মাধ্যমে মোট ৯৭টি প্রকল্প বাস্তবায়িত হচ্ছে। এ প্রকল্পগুলো বাস্তবায়িত হলে ২০১৫ সালের পর সেনানিবাসগুলোতে বাসস্থানের ঘাটতি উল্লেখযোগ্যভাবে হ্রাস পাবে বলে তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন।
প্রধানমন্ত্রী পার্বত্য চট্টগ্রামে থানছি ও রুমা ব্রিজ নির্মাণ, বনানী ওভারপাস প্রকল্প এবং বেগুনবাড়ী খালসহ হাতিরঝিল সমন্বিত উন্নয়ন প্রকল্পের কাজ সম্পন্নের জন্য সেনাবাহিনীর ইঞ্জিনিয়ারিং কোর ও স্পেশাল ওয়ার্ক অর্গানাইজেশনকে ধন্যবাদ জানান। তিনি বলেন, চট্টগ্রামের বহদ্দারহাট জংশনে নির্মাণাধীন ফ্লাইওভার প্রকল্পের কাজও স্পেশাল ওয়ার্ক অর্গানাইজেশনকে হস্তান্তরের বিষয় প্রক্রিয়াধীন।
প্রধানমন্ত্রী ২০০৯ সালের ২৫ ও ২৬ ফেব্রুয়ারি পিলখানায় সংঘটিত হত্যাযজ্ঞে শহীদ ৫৭ জন প্রতিশ্রুতিশীল সেনা কর্মকর্তার প্রতি গভীর শ্রদ্ধা নিবেদন এবং তাঁদের আত্মার মাগফিরাত কামনা করেন। তিনি বলেন, 'সেনাবাহিনী সেদিন কোনো রকম হটকারিতার পথে না গিয়ে বিরল ধৈর্যের পরিচয় দিয়েছিল। এতে নিয়মানুবর্তী বাহিনী হিসেবে দেশ-বিদেশে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর প্রশ্নাতীত নির্ভরযোগ্যতা প্রতিপন্ন হয়েছে।'
প্রধানমন্ত্রীর প্রতিরক্ষা উপদেষ্টা মেজর জেনারেল (অব.) তারিক আহমেদ সিদ্দিকী, সেনাবাহিনী প্রধান জেনারেল ইকবাল করিম ভূঁইয়া, প্রধানমন্ত্রীর মুখ্যসচিব, প্রতিরক্ষাসচিব ও প্রেসসচিব অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন।

No comments

Powered by Blogger.