উখিয়ার অরণ্যে জঙ্গী ঘাঁটি- ১৬ সংগঠনের দু'শ' কিমি জুড়ে নেটওয়ার্ক

কাপ্তাই সংলগ্ন বাংলাদেশ-মিয়ানমার সীমানত্মে অরতি প্রায় পৌনে ২শ' কিলোমিটার এলাকাজুড়ে জঙ্গী নেটওয়ার্কের ব্যাপক বিস্তৃতি ঘটেছে। গড়ে উঠেছে বিচ্ছিন্নভাবে বেশকিছু ক্যাম্পও।
আগামীতে যে কোন সময় দেশে নাশকতা সৃষ্টির সুদূরপ্রসারী পরিকল্পনা নিয়ে জঙ্গীদের এ অবস্থান সৃষ্টি হয়েছে। বিশেষ করে সরকার যুদ্ধাপরাধীদের বিচার কাজ শুরম্ন করতে তৎপর হওয়ায় জঙ্গীদের প্রস্তুতিও জোরালো হয়েছে বলে বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে।
সূত্রে জানানো হয়, দেশজুড়ে সরকারের কঠোর তৎপরতার কারণে বিভিন্ন জঙ্গী সংগঠন তাদের প্রশিণের জন্য বেছে নিয়েছে কাপ্তাই সংলগ্ন সীমানত্মের পাহাড়ি এলাকাকে। র্যাব-পুলিশ নজরদারির বাইরে থেকে এদের তৎপরতার খবর ইতোমধ্যে গোয়েন্দা সংস্থার কাছে পেঁৗছেছে। সরকারের সর্বোচ্চ পর্যায়ে এ বিষয়ে ইতোমধ্যে অবহিতও করা হয়েছে।
কাপ্তাই উপজেলার সনি্নহিত পাহাড়ী এলাকায় বিভিন্ন শ্রেণীর লোকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, নিষিদ্ধ জঙ্গী সংগঠন হরকত-উল-জিহাদ (হুজি), হরকত-ই-তৈয়বা, হরকত-উল-মুজাহিদ, হিযবুত তাওহিদ, মিয়ানমারের ন্যাশনাল ইউনাইটেড ফ্রন্ট অব আরাকান, আরাকান রোহিঙ্গা ইন্টেলিজেন্স ফোর্স, ইফতেদাতুল আল মুসলেমিন, রোহিঙ্গা সলিডারিটি অর্গানাইজেশন, আরকান রোহিঙ্গা ন্যাশনাল অর্গানাইজেশন, ইসলামি তুলবা মুভমেন্টসহ ১৭ জঙ্গী সংগঠন দুর্গম পাহড়ী এলাকায় গেরিলা প্রশিণ দিচ্ছে। ২৬টিরও বেশি প্রশিণ কেন্দ্র গড়ে তোলা হয়েছে। কাপ্তাইয়ের নারাংগিরি ১নং কৃষিফার্ম, ডলুছড়ি, আরাছড়ি, শিলছড়ির দুর্গম পাহাড়ী এলাকা এবং রাজস্থলি, সীমানত্মবতর্ী এলাকা রাঙ্গুনিয়া, হাটহাজারী, সাতকানিয়া এবং পার্বত্যাঞ্চলের বান্দরবান, খাগড়াছড়ি, কক্সবাজার, উখিয়ায় জঙ্গী তৎপরতা সম্পর্কে গত সপ্তাহে সরকারের উচ্চ পর্যায়ে আলাদাভাবে প্রতিবেদন জমা দেয়া হয় বলে গোয়েন্দা সংস্থার একটি সূত্রে জানানো হয়েছে। সূত্র আরও জানায়, যুদ্ধাপরাধের বিচার কাজ শুরম্ন হলে জঙ্গী হামলার পাশাপাশি স্বাধীনতাবিরোধীরা দেশে বিশৃঙ্খল পরিস্থিতির সৃষ্টি কিংবা দেশকে অশানত্ম করতে অপতৎপরতা চালাতে পারে- এ আশঙ্কার কথা সরকারকে জানিয়ে দেয়া হয়েছে।
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে রাঙ্গামাটি পুলিশের উর্ধতন এক কর্মকর্তা বলেন, "যুদ্ধাপরাধীদের বিচার কাজ শুরম্ন হলে স্বাধীনতাবিরোধী প নানা ধরনের ষড়যন্ত্র করতে পারে, এটা আমরাও আশঙ্কা করছি। বিচার কাজ বাধাগ্রসত্ম করতে এরা জঙ্গী অপতৎপরতাসহ নানান ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হতে পারে। সে হিসেবে ব্যবস্থা নিতে ইতোমধ্যে সরকারের হাইকমান্ড থেকে নির্দেশ এসেছে। কাপ্তাইসহ পার্বত্য চট্টগ্রাম ও সীমানত্ম এলাকাগুলোতে আইনশৃঙ্খলা রাকারী বাহিনীকে সতর্ক অবস্থায় রাখা হয়েছে। নারাংগিরির শিানুরাগী চাইল্য প্রু মারমা জানান, সরকার সমপ্রতি কাপ্তাই সেনাবাহিনীর ৬৫ ব্রিগেডসহ ক্যাম্পগুলো প্রত্যাহার করার পর এসব দুর্গম পাহাড়ী জঙ্গলে জঙ্গী তৎপরতা প্রতিনিয়ত বৃদ্ধি পাচ্ছে। ফলে সরকারকে বিষয়টি নিয়ে অনুসন্ধান করার দাবি জানান তিনি।
কাপ্তাই সীমানত্মবর্তী দুর্গম পাহাড়ী জনপদ বান্দরবান জেলা পুলিশ সূত্রে জানা যায়, গত সাড়ে তিন মাসের ব্যবধানে সেখান থেকে সন্দেহভাজন বাংলাদেশী জঙ্গী ও রোহিঙ্গা মিলিয়ে দেড় শতাধিক ব্যক্তিকে গ্রেফতার করা হয়েছে। মাটিরাঙ্গার একটি ক্যাম্প থেকে গ্রেফতার করা হয়েছ ৫ জনকে। বান্দরবান সীমানত্মবতর্ী কক্সবাজারের পুলিশ সুপার সাখাওয়াত হোসেন জানান, গত কয়েক মাসে সেখানে সন্ত্রাসী ও জঙ্গী তৎপরতার আলামত সৃষ্টি হয়েছে বলে জানতে পেরেছেন। গত ১৬ সেপ্টেম্বর ঘুনধুমের ধলা পাহাড়ে জঙ্গীদের গেরিলা প্রশিণ ক্যাম্পে অভিযান চালিয়ে জিহাদী বই-পুসতক পাওয়া গেছে। তবে কাউকে গ্রেফতার করা সম্ভব হয়নি।
গোয়েন্দা সূত্রে জানা গেছে, কাপ্তাইয়ের পার্শ্ববতর্ী সীমানত্ম মিয়ানমার-বাংলাদেশের তুমব্রম্নু যোগাইন্না থেকে থানছি পর্যনত্ম দু'শ' একাত্তর কিলোমিটারের মধ্যে এক শ' বাহাত্তর কিলোমিটার এলাকা অরতি। ঐ এলাকার গহীন পাহাড়ী জঙ্গলেই প্রশিণ ক্যাম্পগুলো গড়ে উঠেছে। এদের নেটওয়ার্ক অত্যনত্ম শক্তিশালী। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের অভিযানের আগেই তাদের কাছে সংবাদ পেঁৗছে যায়। মুহূর্তের মধ্যেই তারা স্থান ত্যাগ করে আরও গভীরে চলে যায়। ফলে বিভিন্ন সময় অভিযান চালিয়ে প্রশিণের স্থান নির্দিষ্ট করা গেলেও প্রশিক বা লিডারদের ধরা যায় না। উখিয়ার এক পাহাড়ী নেতার সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, বান্দরবানের নাই্যংছড়িতে জঙ্গী প্রশিণ ক্যাম্প গড়ে উঠেছিল। পরবতর্ীতে চট্টগ্রামের রাঙ্গুনিয়ার কোদালা ও উত্তর রাঙ্গুনিয়ার দুর্গম জনপদেও প্রশিণ ক্যাম্প গড়ে উঠেছিল। এ সময় কাপ্তাই গোয়েন্দা সংস্থার তৎপরতায় রাঙ্গুনিয়া থানা পুলিশ কোদালার টুককিলস্না বড়ো পাহাড় এলাকার আশপাশ থেকে তুষার নামে এক কিশোরকে অস্ত্রসহ গ্রেফতার করে। ২০০৫-২০০৬ সালের বিডিআর ও পুলিশের অভিযানে নাই্যংছড়িতে ৮টি প্রশিণ ক্যাম্পের সন্ধান পাওয়া যায় এবং সে সব ক্যাম্প থেকে বিভিন্ন অত্যাধুনিক অস্ত্র আটক করা হয়। পরবতর্ীতে কিছুদিন যেতে না যেতেই গত কয়েক মাস ধরে আবারও জঙ্গীদের অপতৎপরতা চোখে পড়ছে বলে স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে। স্থানীয় জসীম ও আরিফ নামে দু'যুবক দাবি করে, এলাকায় কিছুদিন ধরে অচেনা লোকজনের ঘুরপাক ল্য করা যাচ্ছে। তারা কোথায় যাচ্ছে, কোন্ এলাকা থেকে এসেছে কেউ জানে না। তাদের সন্দেহ_ বাইশারী, আলীখিয়ং, পানছড়ি, দুছড়ি, তমব্রম্নু ও ঘুনধুমের দুর্গম পাহাড়ী জঙ্গলে প্রশিণ চলছে।
স্থানীয় ব্যবসায়ী মোঃ লোকমান হোসেন জানান, এসব এলাকা থেকে কয়েক দফায় অস্ত্রসহ মিয়ানমার আরাকান জঙ্গী এবং বাংলাদেশী বিভিন্ন জঙ্গী সংগঠনের সদস্যরা ধরা পড়েছে। প্রতিনিয়ত কাপ্তাই-বান্দরবান সড়ক ও বিভিন্ন দুর্গম জনপদে মিয়ানমার থেকে অবৈধভাবে আসা রোহিঙ্গারা কোন কাজকর্ম না পেয়ে এ সব জঙ্গী সংগঠনের সঙ্গে যুক্ত হচ্ছে বলে তিনি দাবি করেন।

No comments

Powered by Blogger.