অভিমত- এ কোন্ অরণ্যে এসে পড়লাম আমরা? by মো: রাশেদুল ইসলাম

একটা কথা মনে পড়ে গেল, ‘আশাবাদীর পক্ষে আর কিছুই নেই কেবল হতাশা ছাড়া। আমাদের সামাজিক নিরাপত্তা বলি আর অর্থনৈতিক মুক্তি বলি, এ দেশে এখন সেটা যেন আলাদীনের জাদুর কাঠির গল্প।
চার দিকে হতাশা ছাড়া কোনো ভালো খবর নেই, দেশ আছে সরকার আছে, জনগণ শিক্ষিত হচ্ছে, তাহলে এত সমস্যা কেন আমাদের? বাংলাদেশে গরিব কৃষক কিন্তু আজো কৃষিপণ্যের ন্যায্যমূল্য পান না, যেখানে সারা দেশের মানুষের মুখে খাওয়া তুলে দেন এই কৃষকেরাই। কত কষ্ট তারা করে। পোশাক শিল্পের শ্রমিকেরা রাত নেই দিন নেই সব সময় কষ্ট করে, আর প্রবাসী শ্রমিকেরা দেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিকে সচল রাখে। তাহলে সমস্যা কোথায়? খুব কষ্টের সাথে বলতে হয়, যত নষ্টের গোড়া সপ্তাহখানেক আগে যোগাযোগমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেছেন, বাংলাদেশের রাজনীতিতে এখন বিষের ছোড়াছুড়ি। তিনি বলেছেন, শরীরের শক্তি কমে গেলে মুখের শক্তি বেড়ে যায়। দেশের ভেতরে সাধারণ মানুষের কথা বলার মনে হয় কেউ নেই। আছে সুশীলসমাজ। তারাও সে দুই দলের কিছু সমর্থক মাত্র। আমাদের প্রধানমন্ত্রীর কথা শুনলে মানুষের গায়ের চামড়া পড়ে যাওয়ার উপক্রম হয়। মানুষের যদি একবার লজ্জা চলে যায় যতই বলেন না কেন, আর ফিরে আসবে না।

খুব অবাক লাগে যখন প্রধানমন্ত্রী নিজেই বলেন, দেশের ভেতরে সব বিদ্যুৎ বন্ধ করে আগের অবস্থায় ফিরিয়ে নিলে মনে হয় মানুষ খুশি হবে। কী আশ্চর্য ব্যাপার! তিনি আরো বলেন, সব সময় বিদ্যুৎ থাকলে মানুষ লোডশেডিং কী, সেটিই ভুলে যাবে। কাকে বলব লজ্জার কথা। অনেক নেতা ভর্তিবাণিজ্য করে ঘুষ খায়, ছাত্রলীগ দিয়ে দেশের নারীদের ইজ্জত হনন করে। খুনির আসামিকে মাফ করে দেয়। প্রিয় পাঠক, একটু ভেবে দেখবেন কি, ৭০ বছরের মাথায় এসে যদি নতুন করে ব্যাংক দিতে চায়, তারা এই টাকা দিয়ে কী করবে? আওয়ামী লীগ তাদের শেষ দুই বছরে দেশে নতুন করে কেন ব্যাংক লাইসেন্স দিতে যাবে? আমাদের অর্থনীতিতে এত ব্যাংকের প্রয়োজন নেই। হাজারো সমস্যা পড়ে আছে। গ্যাস সঙ্কট, বিদ্যুৎ নেই, ঢাকা শহরের যানজট আর নাগরিকদের নিরাপত্তাহীনতাÑ কোথায় শান্তি? শান্তি কোথায়ও নেই। ৬ এপ্রিল রাজধানীর মিরপুরে ছিনতাইকারীদের হাত থেকে দুই নারীকে বাঁচাতে গিয়ে নিহত হলেন হজরত আলী। ২৫ মার্চ প্রথম আলোয় এই আমাদের ঢাকা শিরোনামে খবরে দেখলাম মিরপুরের সড়কে এক লোক পড়ে রক্ত মাখা অবস্থায় পড়ে আছে। রাস্তায় কেউ তাকে সাহায্য করছে না, সে অচেতন। মিরপুর কলেজের ছাত্র মুস্তাক চাকরির পরীক্ষা দিয়ে আসছে। অচেতন মানুষটাকে নিয়ে গেলেন হসপিটালে। পরে জানতে পারলেন, তিনি ছিলেন স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের উপসচিব। আমাদের গর্ব হয় তার মানবতাবোধ দেখে। এত দুঃখকষ্টের মাঝেও আমাদের দেশের কৃষকেরা খাদ্যে স্বনির্ভর করছেন। আমাদের এই হতাশার কারণ কিন্তু সরকারের নেতৃত্বের ব্যর্থতার কারণে। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, আপনার দায়িত্ব আপনার মন্ত্রীরা কিভাবে দেশ চালায় এর তদারকি করা। ছাত্রলীগকে নিয়ন্ত্রণ করুন, অন্যায়ের বিচার করুন। দেশে শান্তি প্রতিষ্ঠায় আপনি এগিয়ে আসুন আর নিজের ভুলে লজ্জিত হয়ে জনগণের কাছে ক্ষমা চান। দেশ আপনাকে মনে রাখবে অন্যথায় জনগণের ভোটে সব ‘সুদে আসলে’ ফেরত দিতে হবে।

লেখক : সিডনি প্রবাসী

rashed2srabon@yahoo.com

No comments

Powered by Blogger.