মানুষ হত্যার জন্য খালেদা জিয়ার বিচার হবেঃ শেখ হাসিনা

মানুষ হত্যার জন্য বিরোধীদলীয় নেতা বেগম খালেদা জিয়ার বিচার করার ঘোষণা দিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ‘আপনি জামায়াত-শিবিরের সাথে যুদ্ধাপরাধীদের বাঁচাতে আন্দোলন করছেন।
গাড়িতে হামলা, ভাঙচুর ও মানুষ হত্যা করছেন। এভাবে পুলিশ মেরে, মানুষ হত্যা করে যুদ্ধাপরাধীদের বিচার ঠেকাতে পারবেন না। আর মানুষ হত্যার বিচারও বাংলার মাটিতেই হবে।’

গতকাল রোববার বিকেলে কামরাঙ্গীরচর বেড়িবাঁধের পাশে  কোম্পানিঘাট মাঠে মহানগর আওয়ামী লীগ আয়োজিত এক জনসভায় তিনি এ কথা বলেন। কামরাঙ্গীরচর এলাকার সংসদ সদস্য আইন প্রতিমন্ত্রী অ্যাডভোকেট কামরুল ইসলামের সভাপতিত্বে এতে আরো উপস্থিত ছিলেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও স্থানীয় সরকারমন্ত্রী সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম, আওয়ামী লীগ নেতা নসরুল হামিদ বিপু, ঢাকা জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি বেনজির আহমেদ, ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি এম এ আজিজ, সাধারণ সম্পাদক মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া প্রমুখ।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, যুদ্ধাপরাধীদের বিচার আমাদের নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি। আমরা কথা দিয়েছিলাম, মতায় গেলে যুদ্ধাপরাধীদের বিচার করব। আপনারা ভোট দিয়েছিলেন। আমরা আমাদের কথা  রেখেছি। যুদ্ধাপরাধীদের বিচার হচ্ছে। একজনের রায়ও হয়েছে। অন্যদের বিচার শেষ হবে। আন্দোলনের নামে অরাজকতা করে কেউ যুদ্ধাপরাধীদের বিচার বন্ধ করতে পারবে না।

যুদ্ধাপরাধীদের বাঁচাতে বিরোধীদলীয় নেতা বেগম খালেদা জিয়া মানুষ পুড়িয়ে মারছেন অভিযোগ করে শেখ হাসিনা বলেন, ‘আপনার স্বামী যুদ্ধাপরাধীদের প্রতিষ্ঠা করতে চেয়েছিলেন। আপনি এখন তাদের বিচার বন্ধ করতে মানুষকে পুড়িয়ে মারছেন।’

বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের সময় দেশে শান্তি ছিল না মন্তব্য করে শেখ হাসিনা বলেন, ‘তখন দেশ জঙ্গিবাদ, সন্ত্রাস ও খুনের দেশে পরিণত হয়েছিল। আমরা মতায় আসার পর জঙ্গিবাদ ও সন্ত্রাস বন্ধ করেছি।’

বিরোধীদলীয় নেতা বেগম খালেদা জিয়াকে ইঙ্গিত করে তিনি আরো বলেন, ‘ছেলেমেয়েরা লেখাপড়ায় ভালো ফল করছেÑ এটা তার ভালো লাগে না। তিনি মনে করেন, আমি পাস করি নাই, তোরা পাস করবি কেন? কারণ তিনি শুধু উর্দু ও অংকে পাস করেছিলেন। এ জন্য তিনি চান না আমাদের ছেলেমেয়েরা সব বিষয়ে পাস করুক।’

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা চাই ছেলেমেয়েরা শিতি হয়ে দেশ- বিদেশে কাজ করুক। এ জন্য স্কুল-কলেজ প্রতিষ্ঠার পাশাপাশি কম্পিউটারসহ বিভিন্ন শিা উপকরণ সময়মতো শিার্থীদের হাতে  পৌঁছে দিচ্ছি।’

এ সময় সরকারের বিভিন্ন উন্নয়ন কর্মকাণ্ড তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমাদের কাজ ও ল্য হচ্ছে জনগণের সেবা করা। আওয়ামী লীগ মতায় আসে মানুষের উন্নয়ন করার জন্য। আমরা ুধা ও দারিদ্র্যমুক্ত বাংলাদেশ গড়ে তুলতে চাই। মানুষের উন্নয়ন করতে চাই।’

এ সময় প্রধানমন্ত্রী আবারো সবাইকে নৌকায় ভোট দেয়ার আহ্বান জানিয়ে বলেন, আপনারা নৌকায় ভোট দিয়ে স্বাধীনতা  পেয়েছিলেন, দেশের উন্নয়ন পেয়েছিলেন। আমি আপনাদের কাছে আবারো নৌকায় ভোট চাই। আপনারা নৌকায় ভোট দেবেন।

তিনি কামরাঙ্গীরচরকে ‘চরম অবহেলিত জনপদ’ উল্লেখ করে বলেন, রাজধানীর পাশেই কামরাঙ্গীরচর ছিল যেন প্রদীপের নিচে অন্ধকার। বন্যা হলেই ডুবে যেত। গত চার বছরে সত্যিকার উন্নয়ন হয়েছে এখানে। নদীভাঙন রোধে ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে, বুড়িগঙ্গার দূষণ দূর করতে সম হয়েছি। শুধু কামরাঙ্গীরচর নয়, আমরা সারা দেশেই উন্নয়ন করেছি।’

তিনি বলেন, ‘বিএনপি যখন মতায় ছিল, তখন এই এলাকায় সন্ত্রাস,  চাঁদাবাজি এবং জঙ্গিবাদ, বোমাবাজি ছিল। এখন তা নেই।’

এর আগে প্রধানমন্ত্রী কামরাঙ্গীরচরের একটি হাইস্কুল, তিনটি প্রাথমিক বিদ্যালয়, একটি কমিউনিটি স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সসহ বেশ কিছু স্থাপনা উদ্বোধন করেন এবং পুলিশকে গাড়ি দেন।

গণতন্ত্রবিরোধী শক্তিকে প্রতিহত করতে সেনা কর্মকর্তাদের প্রতি আহ্বান

বাসস জানায়, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সংবিধান ও গণতন্ত্রবিরোধী যেকোনো কর্মকাণ্ড সকল শক্তি দিয়ে প্রতিহত করতে সেনাবাহিনীর ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের নির্দেশ দিয়েছেন।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘অনেক ত্যাগ ও সংগ্রামের বিনিময়ে দেশে আজ গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। আমি আশা করি, আপনারা সংবিধান ও গণতন্ত্রবিরোধী যেকোনো কর্মকাণ্ড সকল শক্তি দিয়ে প্রতিহত করবেন।’

তিনি গতকাল সকালে ঢাকা ক্যান্টনমেন্টে সেনা সদর দফতরের অফিসার্স মেসে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর জেনারেলবৃন্দের সভায় ভাষণকালে সেনাবাহিনীর পিঠে সওয়ার হয়ে কোনো স্বার্থান্বেষী মহল যাতে দেশের উন্নয়ন ও অগ্রযাত্রা ব্যাহত করতে না পারে, সেদিকে সর্বোচ্চ দৃষ্টি দেয়ারও আহ্বান জানান।

শেখ হাসিনা জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তাদেরকে নৈতিকতা, সততা এবং কর্তব্যপরায়ণতার উদাহরণ হিসেবে নিজেদের অধঃস্তনদের সামনে উপস্থাপন করে তাদের শ্রদ্ধা ও আনুগত্য অর্জনের পরামর্শ দেন। একই সাথে তিনি অধঃস্তনদের প্রয়োজনীয়তা, আশা-আকাক্সা ও চিন্তা-ভাবনার দিকেও নজর দেয়ার পরামর্শ দেন।

অনেক সময় কুচক্রী মহল হীন স্বার্থে সশস্ত্র বাহিনীর সদস্যদের মধ্যে বিভ্রান্তি সৃষ্টির চেষ্টা করে এ কথা উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘অধঃস্তনরা যাতে এ ধরনের বিরূপ  প্রোপাগান্ডার শিকার না হন, সেদিকে আপনাদের ল রাখতে হবে।’

২০০৯ সালের ২৫ ও ২৬ ফেব্র“য়ারি পিলখানায় সংঘটিত হত্যাযজ্ঞে শহীদ ৫৭ জন প্রতিশ্র“তিশীল সেনা কর্মকর্তার প্রতি গভীর শ্রদ্ধা নিবেদন এবং তাদের রূহের মাগফিরাত কামনা করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এই হত্যাকাণ্ডের বিচার প্রচলিত আইনে হওয়ায় সেনাবাহিনীর প্রতি ন্যায়পরায়ণতার প্রশ্নে জনগণের আস্থা আরো বৃদ্ধি পেয়েছে।

প্রধানমন্ত্রীর প্রতিরা উপদেষ্টা মেজর জেনারেল (অব:) তারিক আহমেদ সিদ্দিকী, সেনাবাহিনীপ্রধান জেনারেল ইকবাল করিম ভূঁইয়া, প্রধানমন্ত্রীর মুখ্যসচিব শেখ মো: ওয়াহিদ উজ জামান, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সচিব মোল্লা ওয়াহেদুজ্জামান, প্রতিরাসচিব খন্দকার মো: আসাদুজ্জামান ও প্রেসসচিব আবুল কালাম আজাদ অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন।

No comments

Powered by Blogger.