পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলো ভালো চলছে না by ড. মুনীরউদ্দিন আহমদ

১৯২১ সালের ১ জুলাই শিক্ষা কার্যক্রম শুরুর মাধ্যমে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অগ্রযাত্রা শুরু হয়। বিশ্ববিদ্যালয়ের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধনের আগেই উপাচার্য হার্টস কিছু খ্যাতনামা পণ্ডিতকে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকতা ও প্রশাসনিক কাজে নিয়োগ প্রদান করেন।
নতুন উপাচার্য ও নিয়োগপ্রাপ্ত শিক্ষক-কর্মকর্তাদের অক্লান্ত পরিশ্রম, জ্ঞানগরিমা এবং অভিজ্ঞতার আলোকে সূচনা থেকেই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় মানমর্যাদা এবং গৌরবের সঙ্গে তার অগ্রযাত্রা অব্যাহত রাখতে সক্ষম হয়। পূর্ব বাংলার সর্বপ্রথম বিশ্ববিদ্যালয়ে একাডেমিক, প্রশাসনিক ও অন্যান্য কর্মকাণ্ড পরিচালনার জন্য প্রতিষ্ঠা করা হয় আদালত, এক্সিকিউটিভ কাউন্সিল, একাডেমিক কাউন্সিল, অনুষদ ও ইনস্টিটিউট। স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানের গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া ও ঐতিহ্যকে সমুন্নত রাখার জন্য ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় অ্যাক্ট-১৯২০-এ একটি নির্বাচিত প্যানেল থেকে উপাচার্য নিয়োগের বিধান রাখা হয়। একইভাবে অনুষদের শিক্ষকদের প্রত্যক্ষ ভোটে ডিন নির্বাচনের বিধানও সংরক্ষণ করা হয় অ্যাক্টে। ১৯৪৭ সালে পাকিস্তান সৃষ্টির ফলে ঢাকা পূর্ব পাকিস্তানের রাজধানী হলো এবং প্রাদেশিক সরকার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সব ধরনের কর্মকাণ্ডে নগ্নভাবে হস্তক্ষেপ শুরু করল। হুমকির সম্মুখীন হলো বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বায়ত্তশাসন। প্রাদেশিক সরকার বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বায়ত্তশাসন খর্ব করে ১৯৬১ সালে এক অধ্যাদেশ জারি করল। বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার আগ পর্যন্ত দেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলো পরিচালিত হতো এই অধ্যাদেশের মাধ্যমে। এই নিপীড়নমূলক অধ্যাদেশের মাধ্যমে সরকার নগ্নভাবে বিশ্ববিদ্যালয়ের সব কর্মকাণ্ড নিয়ন্ত্রণ করত। বিশ্ববিদ্যালয়ের মুক্তবুদ্ধি চর্চা ও বিকাশের কোনো সুযোগ এবং পরিবেশ ছিল না। শিক্ষকসমাজ এই অধ্যাদেশকে কালাকানুন হিসেবে অভিহিত করে। বিশ্ববিদ্যালয়ের একাডেমিক ও প্রশাসনিক পদগুলোয় নিয়োগ দেওয়া হতো সরকারের প্রত্যক্ষ হস্তক্ষেপের মাধ্যমে। বিশ্ববিদ্যালয়সংক্রান্ত যেকোনো সিদ্ধান্ত গ্রহণের পূর্ণ এখতিয়ার সংরক্ষণ করত প্রাদেশিক সরকার। শিক্ষকদের রাজনৈতিক মত প্রকাশ এবং দলের সঙ্গে সম্পৃক্ততা ছিল নিষিদ্ধ। সরকার সমর্থকদের জন্য এ নিষেধাজ্ঞা প্রযোজ্য ছিল না। বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বায়ত্তশাসন খর্বের এই নিপীড়নমূলক চক্রান্তের বিরুদ্ধে ছাত্র ও শিক্ষকসমাজকে অনেক বিক্ষোভ এবং আন্দোলনে শরিক হতে হয়েছে। ১৯৭১ সালে দেশ স্বাধীন হওয়ার পর বঙ্গবন্ধুর আওয়ামী লীগ সরকার ১৯৬১ সালের অধ্যাদেশ বাতিল করে জারি করেন ১৯৭৩ সালের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় আদেশ। এই আদেশ জারির ফলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে আবার স্বায়ত্তশাসন পুনঃপ্রতিষ্ঠিত হয়।
এমন এক সময় ছিল, যখন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শুধু শিক্ষাদীক্ষার ক্ষেত্রেই নয়, স্বাধিকার প্রতিষ্ঠার আন্দোলনেও এই বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্র-শিক্ষকদের ভূমিকা ছিল অপরিসীম। বায়ান্নর ভাষা আন্দোলন, ঊনসত্তরের ছাত্র আন্দোলন, একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধ এবং নব্বইয়ের স্বৈরাচারবিরোধী সংগ্রামে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-শিক্ষক, কর্মকর্তা-কর্মচারীদের ভূমিকা ও অবদান ছিল অবিস্মরণীয়। অন্যায়-অত্যাচার, জুলম-নির্যাতন, দুর্নীতি, শোষণ-নিষ্পেষণ, স্বৈরতন্ত্র উৎখাত করে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার আন্দোলনে অংশগ্রহণ ও অকাতরে জীবন উৎসর্গ করার ইতিহাস ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মান-মর্যাদা ও গৌরবের ইতিহাস। প্রাচ্যের অঙ্ফোর্ড হিসেবে খ্যাত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় বাংলাদেশের সর্ববৃহৎ এবং সর্বশ্রেষ্ঠ বিশ্ববিদ্যালয় হওয়া সত্ত্বেও দেশ স্বাধীন হওয়ার পর থেকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় তার গৌরব, মান-মর্যাদা ও সুনাম সমুন্নত রাখতে ব্যর্থ হয়। এ সময় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে হত্যা, রাহাজানি, খুনখারাবি হয়েছে, অসংখ্য লাশ পড়েছে, বহুবার অনাকাঙ্ক্ষিতভাবে বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ হয়ে গেছে, সেশনজটে শিক্ষা ও প্রশাসনিক কর্মকাণ্ড মারাত্মকভাবে ব্যাহত ও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, শিক্ষার পরিবেশ দূষিত হওয়া ছাড়াও মানের অবনতি ঘটেছে। এসবের মূলে ছিল স্বাধীনতা-পরবর্তীকালে বিশ্ববিদ্যালয়ে বেপরোয়া ছাত্র-শিক্ষক রাজনীতি, অনেক শিক্ষকের দায়িত্ব ও কর্তব্যকর্মে চরম অবহেলা, ছাত্র-শিক্ষক রাজনীতির পেছনে সরকার ও বিরোধী দলের প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ মদদ দান ও নগ্ন হস্তক্ষেপ, দলীয় অযোগ্য লোকদের প্রশাসনের শীর্ষ পর্যায়ে নিয়োগদান, প্রশাসনিক পর্যায়ে শীর্ষস্থানীয় কর্তাব্যক্তিদের পক্ষপাতমূলক আচরণ, অনিয়ম, দুর্নীতি, স্বেচ্ছাচারিতাসহ বিশ্ববিদ্যালয় আদেশের নির্লজ্জ অপব্যবহার, দলীয়করণের মাধ্যমে শিক্ষক, কর্মকর্তা-কর্মচারী নিয়োগসহ সর্বস্তরে আরো বহু অনিয়ম ও দুর্নীতি। মেধা ও যোগ্যতাকে পাশ কাটিয়ে দলীয় দৃষ্টিকোণ থেকে শিক্ষক, কর্মকর্তা ও কর্মচারী নিয়োগের ঘটনা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে বিরল নয়। এতে দেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর শিক্ষাব্যবস্থা চরমভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হতে থাকে। বিশ্ববিদ্যালয়গুলোয় রাজনীতির নামে স্বাধীনতার পর থেকে যা হয়ে আসছে, তা কোনোভাবেই স্বাধীনতা ও মুক্তিযুদ্ধের অনুকূল নয়। দেশের পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় ও অন্যান্য শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে রাজনৈতিক অস্থিরতা এবং সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের জন্য বিভিন্ন মহল থেকে ছাত্ররাজনীতিকে সরাসরি দায়ী করা হয়। প্রচারমাধ্যম ও বিভিন্ন মহল থেকে ছাত্ররাজনীতি বন্ধ করার আহ্বান জানানো হলেও ছাত্রনেতা ও দলীয় কর্মী ছাড়াও রাজনৈতিক দলগুলোর অবস্থান ছাত্ররাজনীতি বন্ধের বিপক্ষে। ছাত্ররাজনীতির ভবিষ্যৎ কী, আমি জানি না। ছাত্ররাজনীতি থাকবে, না বন্ধ হবে, তাও রাজনৈতিক বিতর্ক। তবে অনেকের মতো আমিও মনে করি, ছাত্ররাজনীতির ওপর নিয়ন্ত্রণ থাকা বাঞ্ছনীয়। যে রাজনৈতিক নেতা-নেত্রী বা দলের নিজেদের যোগ্যতার ওপর আস্থা নেই, নিজেদের রাজনৈতিক কর্মসূচির যৌক্তিকতায় নিজেরাই সন্দিহান, সহায়ক পেশিশক্তি ও স্তাবক ছাড়া চলার উপায় থাকে না বলে তাঁদের ছাত্ররাজনীতির ওপর এত বেশি নির্ভর করতে হয়। ছাত্রছাত্রীরা স্বতন্ত্র সত্তা নিয়ে রাজনীতি করতে পারলে কোনো বাধা ছিল না। কিন্তু তারা যখন জাতীয় দলগুলোর লেজুড়বৃত্তি করতে গিয়ে নিজেদের স্বাধীনতা ও স্বকীয়তা বিসর্জন দিয়ে ফেলে, তখন খারাপ লাগে। খারাপ লাগে আরো যখন দেখি, এই অশুভ ছাত্ররাজনীতির কারণে বিশ্ববিদ্যালয়ের সাধারণ ছাত্রছাত্রী, শিক্ষক, কর্মকতা-কর্মচারীরা জিম্মি হয়ে পড়েন। বিশ্ববিদ্যালয়ের অনেক শিক্ষকও বিভিন্ন জাতীয় রাজনৈতিক দলের অনুগত এবং এসব দলের মতাদর্শে বিভিন্ন দল-উপদলে বিভক্ত হয়ে পড়েছেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের এক শ্রেণীর শিক্ষকের জীবনের মূলমন্ত্রই হলো রাজনীতির মাধ্যমে বিশ্ববিদ্যালয় এবং রাষ্ট্রের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পদে অধিষ্ঠিত হওয়া। রাজনৈতিক আনুগত্য ও সক্রিয় রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড ছাড়া সরকার কোনো সময়ই কোনো শিক্ষককে এসব আকর্ষণীয় পদে বসায় না। সুতরাং দেওয়া-নেওয়ার এই পলিসির সুবাদে সরকার ও বিরোধী দলের সঙ্গে শিক্ষকদের এক আত্মিক সম্পর্ক গড়ে ওঠে। তবে এ প্রচেষ্টায় সবাই আবার সফলতা অর্জন করে না। তার পরও এদের অভীষ্ট লক্ষ্যে পৌঁছানোর জন্য পরিশ্রম, ত্যাগ, তিতিক্ষা ও অধ্যবসায়ের কমতি নেই আমাদের এক শ্রেণীর শিক্ষকের। এই অভীষ্ট লক্ষ্য সামনে রেখে অনেক শিক্ষক শিক্ষা-দীক্ষা, গবেষণা ও অন্যান্য শিক্ষা কার্যক্রমকে উপেক্ষা করে রাজনীতির পেছনেই বেশির ভাগ সময় ব্যয় করেন। তাঁরা প্রতিটি ভোটযুদ্ধে অবতীর্ণ হন, ভোটারদের ঘর-বাড়ি, অফিস, ল্যাব-ক্লাস- সর্বত্র তাড়িয়ে বেড়ান এবং ভোটভিক্ষা করেন। তবে ইদানীং আমাদের শিক্ষকরা বাড়ি-ঘর, অফিস-আদালতে গিয়ে ভোট না চাওয়ার কালচার প্রবর্তন করেছেন, যা সর্বাংশে প্রশংসনীয়। প্রত্যেক প্রার্থী লিফলেট, ভিজিটিং কার্ড ও নির্বাচনী প্যানেল ভোটারদের কাছে পৌঁছানোর নিশ্চয়তা বিধান করেন। এ প্রক্রিয়া সুন্দর কাজ করে বলে আমার মনে হয়েছে।
আজকাল শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ পাওয়ার পরপরই অনেক শিক্ষক বুঝে ফেলেন যোগ্যতা, সততা, নিষ্ঠা, জ্ঞানগরিমা, গবেষণা মুখ্য নয়। রাজনীতি ও দলীয় আনুগত্যই জীবনে উন্নতি ও অগ্রগতির মূল সোপান। তাই তাঁরা তাঁদের দায়বদ্ধতা ও জবাবদিহিতার কথা ভুলে রাজনীতির পেছনে ছোটেন। অভীষ্ট লক্ষ্যে না পৌঁছানো পর্যন্ত তাঁরা থামেন না। রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডের জন্য অনেক শিক্ষক দিনের পর দিন ক্লাসে অনুপস্থিত থাকেন। ছাত্রছাত্রীরা এসব শিক্ষকের পড়ানোর যোগ্যতা নিয়ে হতাশা ব্যক্ত করেন। তাঁরা কী যোগ্যতাবলে শিক্ষক হন, তা নিয়েও ছাত্রছাত্রীরা অনেক সময় প্রশ্ন তোলেন। ছাত্রছাত্রীদের মতে, অনেক শিক্ষক অন্য কাজে বেশি সময় দেন বলে সময়ের অভাবে প্রস্তুতি না নিয়েই ক্লাসে আসেন এবং পড়াতে গিয়ে ছাত্রছাত্রীদের ভালোভাবে পড়াতে পারেন না। তাঁরা প্রায়ই সংক্ষিপ্ত ক্লাস নেন। ১০ মিনিট পরে ক্লাসে ঢুকে ১০ থেকে ১৫ মিনিট আগেই ক্লাস থেকে বেরিয়ে আসেন। যে সময়টুকু পড়ান তাতে ছাত্রছাত্রীরা খুব কমই উপকৃত হন। অনেক শিক্ষক ছাত্রছাত্রীদের প্রশ্নের উত্তর দিতে গিয়ে ঠেকে যান এবং বিরক্ত ও বিব্রত হন। অনেক শিক্ষক আবার সময় বাঁচানোর জন্য অল্প পড়িয়ে পাঠ্যসূচির বাকি অংশ ছাত্রছাত্রীদের পড়ে নিতে বলে দায় সারেন। শিক্ষকদের ফাঁকিবাজি ও দায়িত্বহীনতার জন্য ছাত্রছাত্রীরা প্রতি শিক্ষাবর্ষে ভীষণ ক্ষতিগ্রস্ত হন।
ছাত্র-শিক্ষক রাজনীতি যদি দেশ ও দশের মঙ্গলের জন্য হয়; অন্যায়, অত্যাচার, জুলম, নিপীড়ন ও নির্যাতন প্রতিরোধ, মুক্তি, স্বাধীনতা, গণতন্ত্র সমুন্নত রাখার সংগ্রাম যদি হয় ছাত্র-শিক্ষক রাজনীতির মূলনীতি, তাতে কারো অমত বা অনীহা থাকার কথা নয়। কিন্তু রাজনীতির মাধ্যমে দেশ ও দশের মঙ্গল করতে যে মূল্যবোধ, সহনশীলতা, যুক্তিসংগত আচরণ, পারস্পরিক শ্রদ্ধা ও সম্প্রীতি বোধ, জ্ঞান ও বুদ্ধির দরকার তা আজকাল অনেক ছাত্র-শিক্ষকের মধ্যে পরিলক্ষিত হয় না। পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাজনীতির জন্য জাতীয় পর্যায়ে সরকার ও বিরোধী দলের নেতা-নেত্রীদের সুসম্পর্ক এবং সহনশীল সহাবস্থানের নিশ্চয়তা আমরা সব সময় আশা করি। আমাদের নেতা-নেত্রীদের অকুণ্ঠ দেশপ্রেম থাকা দরকার বলে আমরা মনে করি। তাঁদের আচরণ এবং কর্মকাণ্ড যুক্তিসংগত ও গণতান্ত্রিক হওয়া দরকার। আমাদের দেশের রাজনীতির এক অনন্য বৈশিষ্ট্য হলো, ভিন্নমতালম্বী বা বিরোধীদের প্রতি হিংসা-বিদ্বেষ এবং প্রতিহিংসাপরায়ণতা এবং ন্যায্য অধিকার থেকে বঞ্চিত করে যেকোনোভাবে দাবিয়ে রাখা। এ ধরনের অশুভ তৎপরতা দেশের সর্বস্তরে জম্ম দেয় অনিয়ম, দুর্নীতি, স্বজনপ্রীতি, দায়িত্ব ও কর্তব্যে অবহেলা। দেশের মানুষ বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-শিক্ষক এবং প্রশাসনকে দেখতে চায় পূত-পবিত্র, নিষ্কলঙ্ক-নির্দোষ, দায়িত্ব ও কর্তব্যপরায়ণ, নিরপেক্ষ ও সৎ। কিন্তু বর্তমান সামাজিক, রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক প্রেক্ষাপটে তা পুরোপরি উপেক্ষিত। কারণ আমরা স্বায়ত্তশাসন ভোগ করি; কিন্তু দায়বদ্ধতার কথা ভুলে যাই। আমরা অন্যায় করি অথচ শাস্তি ভোগ করি না। ক্ষমতাধর ব্যক্তি হয়ে ক্ষমতার অপব্যবহার করি, তার পরও কারো কাছে জবাবদিহি করতে হয় না। মূল্যবোধ, নৈতিকতাবোধ এবং নীতি ও আদর্শের ক্ষেত্রে আমাদের অনেক অধঃপতন ঘটেছে। জবাবদিহিতার অভাব আমাদের স্বেচ্ছাচারী করে তুলছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-শিক্ষক ও কর্মকর্তা-কর্মচারী যদি বিশ্ববিদ্যালয়ের নিয়মকানুন এবং নিজের বিবেকের কাছে দায়বদ্ধ থাকেন, বিশ্ববিদ্যালয় পরিবারের সব সদস্যের জবাবদিহিতার ব্যবস্থা থাকে, তেমনি প্রশাসন যদি বিশ্ববিদ্যালয়ের কাছে, সরকারের কাছে এবং দেশবাসীর কাছে বিশ্ববিদ্যালয় পরিচালনার জন্য জবাবদিহি করতে বাধ্য থাকে, তবে বিশ্ববিদ্যালয় ভালো না চলে পারে না। সত্যি কথা হলো, এই দায়বদ্ধতা ও জবাবদিহিতার অভাবে দেশের পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলো ভালো চলছে না। চারদিক থেকে দুর্নাম কুড়াচ্ছে। কিন্তু যুগ যুগ ধরে দেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলো এভাবে চলতে পারে না বা চলতে দেওয়াও যায় না। আমাদের মনে রাখা প্রয়োজন, এ দেশের অসহায় দরিদ্র জনগোষ্ঠীর পয়সায় এসব বিশ্ববিদ্যালয় চলছে। তাই ছাত্র-শিক্ষক প্রশাসনের দায়বদ্ধতা এবং জবাবদিহিতার নিশ্চিতকরণ বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বার্থে, দেশ ও দশের স্বার্থে অত্যাবশ্যক হয়ে পড়েছে।

লেখক : ক্লিনিক্যাল ফার্মাসি ও ফার্মাকোলজি বিভাগ, ঢাবি ও প্রো-ভিসি, ইস্ট ওয়েস্ট ইউনিভার্সিটি
drmuniruddin@yahoo.com

No comments

Powered by Blogger.