পশু দম্পতি-'পুলিশ জানে কাজল মোল্লা কোথায়, কিন্তু ধরছে না'

গৃহকর্মী নির্যাতন-ধর্ষণের দায়ে মামলার ১১ দিনেও কোনো আসামি গ্রেপ্তার নেই। মামলার প্রধান আসামি সাইফুল হাকিম ওরফে কাজল মোল্লা, তার স্ত্রী রেখা ও অন্য দুই আসামি পুলিশের বক্তব্যে 'পলাতক'। মূলত আসামি গ্রেপ্তারে কাপাসিয়া থানা পুলিশের কোনো ভূমিকা চোখে পড়ে না।
এমনকি আসামিদের কেউ কেউ এলাকায় প্রকাশ্যেই ঘুরে বেড়াচ্ছে।
গাজীপুরের কাপাসিয়ায় সংসদ সদস্য সিমিন হোসেন রিমির এপিএস পরিচয়ধারী কাজল মোল্লা, তার স্ত্রী রেখা ও সহযোগী মিলিয়ে চারজনের বিরুদ্ধে উত্তরা পশ্চিম থানায় মামলা হয় দীর্ঘ ১১ দিন আগে। কিশোরী গৃহকর্মী ধর্ষণ ও পৈশাচিক নির্যাতনের ঘটনায় দায়ের হওয়া ওই মামলায় গতকাল রবিবার রাত পর্যন্ত কোনো অগ্রগতি দেখাতে পারেনি পুলিশ। নির্যাতিত কিশোরীর পরিবার বলছে, প্রভাবশালী আসামিদের সঙ্গে পুলিশের নিয়মিত যোগাযোগ রয়েছে। আর পুলিশ বলছে, আসামিদের ধরতে সর্বাত্মক চেষ্টা চলছে।
নির্যাতিত কিশোরীর গ্রামের মানুষজন অভিযোগ করে, আসামিদের কেউ কেউ গ্রামে বীরদর্পে ঘুরে বেড়াচ্ছে। মামলার পর মাত্র এক দিনই উত্তরা পশ্চিম থানা পুলিশকে এলাকায় অভিযান চালাতে দেখা গেছে। এর বাইরে পুলিশের কোনো তৎপরতা নেই। আসামিদের দ্রুত গ্রেপ্তারে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর ঘোষণারও কোনো বাস্তব প্রতিফলন নেই। এ অবস্থায় নির্যাতিতার পরিবার এখন নিজেদের নিরাপত্তা নিয়েই শঙ্কিত।
সরেজমিনে গতকাল রবিবার দুপুরে কাপাসিয়ার বড়টেক গ্রামের বাড়িতে গিয়ে দেখা গেছে, ভয়াবহ নির্যাতনের শিকার মেয়েটির পরিবারের সবার চোখে-মুখে আতঙ্ক। বাড়িটিতে আবার শুরু হয়েছে সরকারদলীয় ক্যাডারদের আনাগোনা। তবে অন্য আসামি আসাদুল্লাহ আসাদ সদর্পে এলাকায়ই রয়ে গেছে। দু-এক দিন পর পর এলাকায় আসছে কাজলের শ্যালক সুমন। প্রকাশ্যে হুমকির বদলে এখন কাজলের ক্যাডাররা নানাভাবে 'আপসের' প্রস্তাব দিচ্ছে। এ জন্য তিন লাখ টাকা ছাড়াও নানা প্রলোভন দেওয়া হচ্ছে। অনেক ক্যাডার বলছে, আপস হলে অনেক লাভ হবে। তিন-চার দিন আগে আপসের জন্য আসাদ দুই লাখ টাকার প্রস্তাব দেয়। গতকাল পর্যন্ত তা আরো এক লাখ টাকা বাড়ানোসহ অনেক সুযোগ-সুবিধার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে।
মেয়েটির বাবা জানান, গতকালও দুজন লোক এসে আপসের জন্য বলে গেছে। বলা হচ্ছে, আদালতে কাজল মোল্লার ঘটনা ওঠার আগেই ধামাচাপা পড়ে যাবে। কাজলের পেছনে অনেক ক্ষমতাধর লোক আছে। পুলিশ জানে কাজল মোল্লা কোথায় আছে; কিন্তু তাকে গ্রেপ্তার করছে না। কারণ তাকে গ্রেপ্তার করার ক্ষমতা পুলিশের নেই। তবে মেয়ের বাবার সাফ কথা, 'আমি মেয়েকে নির্যাতনের বিচার চাই। পশুদের শাস্তি চাই।'
মেয়েটি এখন ওসিসিতে : নির্যাতিত মেয়েটি এখন ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের ওয়ান স্টপ ক্রাইসিস সেন্টারে (ওসিসি)। বাংলাদেশ মহিলা আইনজীবী সমিতির তত্ত্বাবধানে সেখানে তার চিকিৎসা চলছে। এই ঘটনায় উচ্চ আদালতের পরবর্তী আদেশ আগামী ২৮ মার্চ।
থানা পুলিশের দৃশ্যত ভূমিকা নেই : উচ্চ আদালতের নির্দেশনায় উত্তরা পশ্চিম থানায় ধর্ষণ ও পৈশাচিক ঘটনায় মামলা হওয়ার পর উত্তরা পশ্চিম থানা পুলিশ দৃশ্যত অভিযান চালায়। কিন্তু সপ্তাহখানেকের মধ্যেই তাদের তৎপরতায় ভাটা পড়ে। আসামিদের কেউ কেউ গাজীপুরের কাপাসিয়ায় গেলেও পুলিশ আসামিদের 'খুঁজে পাচ্ছে না'। আর কাপাসিয়া থানা পুলিশ এ ঘটনায় বরাবরের মতোই নির্বিকার।
পুলিশের বক্তব্য : স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মহীউদ্দীন খান আলমগীর কিশোরী ধর্ষণ ও নির্যাতনের ঘটনায় জড়িতসহ সহযোগীদের অতি দ্রুত গ্রেপ্তার করা হবে বলে ঘোষণা দেন। এ জন্য পুলিশকে নির্দেশ দিয়েছেন বলেও তিনি সাংবাদিকদের জানান। উচ্চ আদালতের নির্দেশনায় থানায় মামলা দায়েরের পর স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী এই নির্দেশ দেন। কিন্তু স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর এমন নির্দেশ 'নলেজে নেই' বলে মন্তব্য করেছেন গাজীপুরের পুলিশ সুপার আবদুল বাতেন।
কাপাসিয়া থানার ওসি দেলোয়ার হোসেন কালের কণ্ঠকে বলেন, 'মামলার কোনো নথি আমরা পাইনি। নথিপত্র না পাওয়ায় আসামিদের ধরা যাচ্ছে না। আর উত্তরা পশ্চিম থানায় মামলা হয়েছে। তারাই অভিযান চালাচ্ছে। তবে আমরা খোঁজখবর রাখছি, আসামিরা এলাকায় এলে ধরা হবে।' অথচ উত্তরা পশ্চিম থানার ওসি খন্দকার রেজাউল হাসান কালের কণ্ঠকে জানান, গত ২৩ জানুয়ারি এজাহারের কপিসহ গ্রেপ্তারসংক্রান্ত নথিপত্র কাপাসিয়া থানা পুলিশকে পাঠানো হয়েছে।
মামলার তদন্ত কর্মকর্তা উত্তরা পশ্চিম থানার ওসি (তদন্ত) মোহাম্মদ আলী মাহমুদ বলেন, 'মামলা হওয়ার পর আমরা আসামিদের গ্রামের বাড়িসহ উত্তরার বাসায় অভিযান চালিয়েছি। আসামিদের নিকটাত্মীয়দের বাড়িতেও খোঁজা হয়েছে।'

No comments

Powered by Blogger.