চিত্রনাট্যের ম্যাচ বলেই মাশরাফি বাদ! by তারেক মাহমুদ

ডাগ-আউটে বসে কী নিয়ে যেন কথা বলছিলেন সাকিব আল হাসান আর মাশরাফি বিন মুর্তজা। টেলিভিশনের পর্দায় দৃশ্যটা ভেসে উঠতেই ধারাভাষ্যকার আফসোস করে উঠলেন। আহা রে, চোটে পড়ে খেলতে পারছেন না ঢাকা গ্ল্যাডিয়েটরসের সবচেয়ে বড় দুই ভরসা!
হ্যামস্ট্রিংয়ে চোটের কারণে এর আগের ম্যাচও খেলতে পারেননি সাকিব। আর ঢাকা গ্ল্যাডিয়েটরসের মিডিয়া ম্যানেজারের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, পরশু চট্টগ্রামের এমএ আজিজ স্টেডিয়ামে চিটাগং কিংসের বিপক্ষে ম্যাচটা অধিনায়ক মাশরাফি খেলেননি কোমরের ব্যথার কারণে। কিন্তু কাল মাশরাফি ফাটালেন বোমা। কেন খেলেননি—জানতে চাইলে কাল দুপুরে চট্টগ্রাম থেকে টেলিফোনে বললেন, ‘নিজেও জানি না কেন খেলিনি। আমার ইনজুরির কোনো সমস্যা ছিল না। আমি ফিট ছিলাম।’
মাশরাফি ঢাকা গ্ল্যাডিয়েটরসের অধিনায়ক। ম্যাচের একাদশ ঠিক করায় যেখানে তাঁরই সবচেয়ে বেশি ভূমিকা রাখার কথা, সেখানে নিজের না খেলার সংবাদই নাকি পেয়েছেন টসের ঠিক আগ মুহূর্তে! ‘ওয়ার্ম আপের সময় কোচ এসে বললেন, ম্যাচটা আমি খেলছি না। জানতে চাইলাম, এটা কার সিদ্ধান্ত। কিন্তু কোচ কিছু বললেন না’—বলছিলেন মাশরাফি। জাতীয় দলের সিনিয়র ক্রিকেটারদের একজন, ছিলেন অধিনায়কও। এমন আচরণে রীতিমতো অপমানিতই বোধ করছেন তিনি।
পরশুর ওই ম্যাচ নিয়ে নানা রকম গুঞ্জন আগে থেকেই ছিল। ম্যাচ দেখা অনেকেরই অনুমান, চিটাগং কিংসের ১৪২ রানের জবাবে হাতে ২ উইকেট রেখেও ঢাকার ২০ ওভারে মাত্র ৮৮ রান করাটা ঠিক ক্রিকেটীয় ব্যর্থতার কারণে নয়। এতে ম্যাচ পাতানোর গন্ধ আছে। খেলার আগে হুট করে মাশরাফিকে দল থেকে বাদ দেওয়ার ঘটনা সেই সন্দেহ বাড়িয়ে দিচ্ছে আরও। ঢাকা গ্ল্যাডিয়েটরসের পেসার মাহবুবুল আলমের একটা নো বল, ব্যাটিংয়ে ড্যারেন স্টিভেনসের রানআউট, আরও দু-একজন ব্যাটসম্যানের সহজ ক্যাচ তুলে দেওয়া, টি-টোয়েন্টি পাওয়ার প্লের ৬ ওভারে এবারের বিপিএলের সর্বনিম্ন ১৫ রান ওঠা—এসবও যোগ হচ্ছে সন্দেহের উপকরণের তালিকায়। কেউ কেউ আতশি কাচের তলায় আনছেন টসে জিতে ঢাকা গ্ল্যাডিয়েটরসের পরে ব্যাটিং করার সিদ্ধান্তটাকেও। দলের একটি সূত্রের তথ্য, টসে জিতলে আগে ব্যাটিং করবেন, ড্রেসিংরুমে এমনটাই নাকি বলে রেখেছিলেন মাশরাফি। কিন্তু পরে সবই উল্টে গেছে।
সাবেক এক ক্রিকেটারের কাছ থেকে স্পট ফিক্সিংয়ের প্রস্তাব পাওয়ার ঘটনা ফাঁস করে গত বিপিএল শুরুর আগেও আলোচনায় এসেছিলেন মাশরাফি। অনেকের ধারণা, স্পট ফিক্সিং-ম্যাচ ফিক্সিংয়ের বিরুদ্ধে তাঁর শক্ত অবস্থান সবার জানা বলেই পরশুর ম্যাচে মাশরাফিকে খেলানো হয়নি। তাঁর উপস্থিতিতে হয়তো সাজানো চিত্রনাট্য বাস্তবায়নে সমস্যা দেখা দিত। মাশরাফির না খেলার কারণ সম্পর্কে জানতে চাইলে ওই ম্যাচে ঢাকা গ্ল্যাডিয়েটরসকে নেতৃত্ব দেওয়া মোহাম্মদ আশরাফুল এড়িয়ে গেলেন প্রসঙ্গটা। টেলিফোনে বললেন, ‘এ ব্যাপারে ফ্র্যাঞ্চাইজি কর্তৃপক্ষই ভালো বলতে পারবে।’ ম্যাচে সন্দেহজনক কিছু ঘটেছে কি না—জানতে চাইলে অবশ্য বলেছেন, ‘আমার কাছে ও রকম কিছু মনে হয়নি। আমরা বাজে খেলে হেরেছি।’ দলের ম্যানেজার সানোয়ার হোসেনও ম্যাচে ‘অন্য রকম’ কিছু হয়েছে বলে মনে করেন না। কাল সন্ধ্যায় চট্টগ্রাম থেকে ঢাকার বিমানে ওঠার আগে টেলিফোনে বললেন, ‘আমার মনে হয় না ম্যাচে সন্দেহজনক কিছু ঘটেছে। এ রকম কোনো আলোচনাও তো শুনিনি।’
আশরাফুল-সানোয়ারের চোখে কিছু ধরা না পড়লেও পরশুর ম্যাচ নাকি ভ্রু কুঁচকে দিয়েছে আকসুরও (আইসিসির দুর্নীতি দমন বিভাগ)। সূত্র জানিয়েছে, খেলা শেষে পরশু রাতেই ঢাকা গ্ল্যাডিয়েটরসের লজিস্টিক কর্মকর্তা আরশাদ আনন্দের কাছে ম্যাচ নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করেছেন আকসুর এক সদস্য। তবে কাল রাতে টেলিফোনে সেটা অস্বীকার করলেন আরশাদ, ‘আকসুর কেউ এটা নিয়ে আমার সঙ্গে কথা বলেনি। তবে টুর্নামেন্ট ডিরেক্টর ড্যামিয়েন মজা করে বলছিলেন, কী ব্যাপার...ম্যাচটা এভাবে হেরে গেলে...।’
পরশুর ম্যাচ নিয়ে কৌতূহলী আলোচনা চলছে বিসিবিতেও। বোর্ডের এক শীর্ষ কর্মকর্তা কাল বলছিলেন, ‘শুনছি, ফিট থাকার পরও মাশরাফিকে খেলানো হয়নি। কেন বুঝলাম না...।’ কিন্তু সন্দেহই যদি হবে, বিসিবি কেন সেটি খতিয়ে দেখছে না? বিসিবির অস্থায়ী কমিটির সদস্য ও বিপিএল গভর্নিং কাউন্সিলের সদস্যসচিব ইসমাইল হায়দার দায়িত্বটা দিতে চাচ্ছেন আকুসর ওপরই, ‘আমরা প্রায় আড়াই কোটি টাকা খরচ করে আইসিসির দুর্নীতি দমন বিভাগকে এর সঙ্গে সম্পৃক্ত করেছি। আমাদের বিশ্বাস, কিছু হলে তারা নিশ্চয়ই সেটা খতিয়ে দেখবে।’

No comments

Powered by Blogger.