বাংলাদেশের প্রকাশনা ॥ আশা ও আশাভঙ্গের বাণিজ্যকথা by ইকবাল আজিজ

বাংলাদেশের প্রকাশনা এখন আর একেবারে শিশু অবস্থায় নেই; বরং তা রীতিমতো পরিপক্ব। বিপুলসংখ্যক প্রকাশক এই শিল্পে নিয়োজিত; প্রতিবছর বিশেষ করে ফেব্রম্নয়ারি মাসে একুশের বইমেলায় তারা নিজ নিজ প্রকাশনার স্টল নিয়ে স্বগৌরবে হাজির হন।
পনেরো কোটি মানুষের এই দেশটিতে বই কেবলমাত্র মুষ্টিমেয় কিছু মানুষের অবসরকালীন সঙ্গী নয়। বরং তা শিল্প-সাহিত্যের অন্যতম মাধ্যম ও একটি লাভজনক ব্যবসা। লাভজনক বললাম এ কারণে যে, পাঠ্যপুসত্মক প্রকাশনার বাইরে বাংলাদেশে নিদেনপৰে সৃজনশীল প্রকাশকদের সংখ্যা বর্তমানে ছোট-বড় মিলিয়ে আনুমানিক তিন শ'। এর মধ্যে প্রায় ১০০ প্রকাশককে সত্যিকার পেশাদার, দৰ ও মানসম্পন্ন বলা যায়। একটি বিষয় লৰ্য করেছি, বাংলাদেশে বরাবরই প্রকাশনা সম্পর্কে কিছু বলতে গেলে 'প্রায়' অথবা 'আনুমানিক' শব্দটি ব্যবহার করতে হয়। কারণ বাংলাদেশের সাংস্কৃতিক জগতের অন্য সব ৰেত্রের মতো এখানেও বিশৃঙ্খলা ও নৈরাজ্য বিরাজ করছে এক বিশাল বিধ্বংসী অট্টহাসি হয়ে। বাংলাদেশের চলচ্চিত্রে যেমন ধ্বংসের লীলাখেলা; তেমনই আমাদের প্রকাশনাশিল্পেও আজ অবধি কোন সুশৃঙ্খল নিয়মকানুন বা নজরদারি নেই। অথচ আমাদের গ্রন্থ জগৎ ও গ্রন্থ উন্নয়ন বিষয়ে বহুদিন ধরে 'জাতীয় গ্রন্থকেন্দ্র' নামে একটি স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠান আছে। কিন্তু দেশের আরও অনেক আধা সরকারি বা স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানের মতো 'জাতীয় গ্রন্থকেন্দ্র'ও একটি যথাযথ ও কার্যকর প্রতিষ্ঠান হিসেবে গড়ে উঠতে পারেনি। এদেশের প্রকাশনা জগত ও জাতীয় গ্রন্থকেন্দ্র যেন দুটি সম্পূর্ণ ভিন্ন পৃথিবী_একটির সঙ্গে অন্যটির কোন সংযোগ নেই। প্রকাশকদের সঙ্গে এই প্রতিষ্ঠানের একটি ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক গড়ে উঠলে হয়তো প্রকাশনা জগতের বর্তমান অবস্থা সম্পর্কে সঠিক খবর পাওয়া যেত।
জাতীয় গ্রন্থকেন্দ্রের সাথে আমার যোগাযোগ অনেক পুরনো এবং তা কিছুটা স্মৃতিকাতর ও আনন্দময়। ১৯৮০ সালে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে আমার শিৰাজীবন শেষ হলো। তখন আমার তারম্নণ্য এবং এক অবাধ সাহিত্যজীবন লাভ করেছিলাম রাজধানীতে এসে। এ সময় আমার প্রথম চাকরি লাভ করেছিলাম খুব সহজে। জাতীয় গ্রন্থকেন্দ্র আমার প্রথম কর্মস্থল। পরিচালক ফজলে রাবি্ব তাঁর প্রতিষ্ঠানের 'গ্রন্থ উন্নয়ন প্রকল্পে' একজন গবেষণাকর্মী হিসেবে আমায় কাজে লাগিয়েছিলেন। ছোটবেলা থেকে বই আমার অন্যতম প্রিয় বস্তু, তাই চাকরিটা বড় ভাল লেগেছিল। প্রায় সারা মাসই মফস্বলে ঘুরে বেড়াতাম প্রকল্পের কাজে।
পাঠকের 'বইপড়া' বিষয়ে নানা ধরনের তথ্য জোগাড় করতাম। এ কাজে প্রথম গিয়েছিলাম চাঁদপুর, হাজীগঞ্জ, চট্টগ্রাম, রাঙ্গামাটি ও কক্সবাজার। প্রকল্পের কাজের সাথে ভ্রমণও ছিল বড় আনন্দময়। তখন মফস্বলে বইয়ের দোকানে পাওয়া যেত বাংলাদেশে বেনামি প্রকাশকের ঠিকানায় প্রকাশিত অজস্র ভুলে ভরা ভারতীয় বাংলা উপন্যাস। বাংলাদেশের বই হিসেবে যা পাওয়া যেত, তা ছিল মূলত ধর্মীয় বই ও ডিটেকটিভ বই। বাংলাদেশের এ দু'ধরনের বই মফম্বলে ব্যাপক বিক্রি হতো। তখনও হুমায়ূন আহমেদ, মুহাম্মদ জাফর ইকবাল কিংবা ইমদাদুল হক মিলনের বই এভাবে ছড়িয়ে পড়েনি মফস্বলের বাজারে। ডিটেকটিভ বইয়ের মধ্য প্রায় একচেটিয়া ছিল সেবা প্রকাশনীর মাসুদ রানা, কুয়াশা ও অন্যান্য বই। এ ছাড়া প্রচুর বিক্রি হতো রোমেন আফাজ লিখিত দসু্য বনহুর। 'গ্রন্থ উন্নয়ন প্রকল্পের' আওতায় বাংলাদেশের ব্যাপক এলাকা আমি ঘুরেছিলাম। তখন রাজধানীর সাহিত্য আড্ডা ছেড়ে এভাবে বাইরে ঘুরে বেড়াতে অনেক সময় বিরক্তিবোধ হতো; কিন্তু এখন স্বপ্নময় তারম্নণ্যে ঘুরে বেড়ানোর সেই দিনগুলোর কথা ভেবে এক আশ্চর্য প্রশানত্মি অনুভব করি। মানিকগঞ্জের ঘিওর, দৌলতপুর থেকে শুরম্ন করে চাঁপাইনবাবগঞ্জ, সিরাজগঞ্জ, গাইবান্ধা, রংপুর প্রভৃতি জেলার শহর ও প্রত্যনত্ম এলাকায় প্রকৃতি ও মানুষের সানি্নধ্য গভীরভাবে উপভোগ করেছি। মানুষের ভালবাসাও পেয়েছি অপ্রত্যাশিতভাবে। ঘুরেছি দেশের অনেক সাধারণ পাঠাগারে। চাঁপাইনবাবগঞ্জের একটি প্রাচীন পাঠাগারে গিয়েছি, লাইব্রেরিয়ান মহাশয় আমাকে তাঁর অনত্মরের স্বতঃস্ফূর্ত আবেগে বুকে জড়িয়ে ধরেছেন। তিনি আমাকে বলেছিলেন চাঁপাইয়ের অতিশয় অনন্য আঞ্চলিক ভাষায়, 'ভাই, আপনি কতো দূর থেইকে আইসেছেন। ঢাকা থেকে কেউই আসতে চায় না। আপনাকে যে কী বুইলে ধন্যবাদ দিবো, ভাষা খুঁইজে পাইছি না। সেই যে ঢাকা থেইকে মিস্টার পার্কার আইসেছিলেন, তারপর আর কেউ আসেনি। ভাই, বইয়ের পাঠক মরে গেলছে। পাঠককে আবার জাগাতে হবে।' এতদিন পরও চাঁপাইনবাবগঞ্জের সেই গ্রন্থগারিকের কথা এখনও মনে আছে, আর মনে আছে তাঁর সেই সুমধুর আঞ্চলিক বাচনভঙ্গি।
তখন মফস্বলে ঘুরে ঘুরে বুঝেছিলাম, বাংলাদেশের প্রকাশনা জগতে একটি বিশাল শূন্যতা বিরাজ করছে। ভাল প্রকাশক নেই, ভাল বই নেই; তাছাড়া ভাল লেখক বলে এ দেশে যারা পরিচিত তারা খুব কম লেখেন এবং সাধারণ পাঠক তাদের কারোই নাম জানেন না। তখন কাজী আনোয়ার হোসেন ছাড়া এদেশে কোন গদ্যকারই পাঠকের কাছে পেঁৗছাতে পারেননি। ১৯৮২ সালের বাংলাদেশের গ্রন্থজগতের কথা আমার এখনও মনে আছে। কেমন নিষ্প্রাণ ও অনুর্বর প্রকাশনা জগত। প্রায় তেরো মাস জাতীয় গ্রন্থ কেন্দ্রে চাকরি আমি অন্যত্র চলে গিয়েছিলাম। এরপর আমাদের চোখের সামনে বাংলাদেশের প্রকাশনা জগতে রীতিমতো বিপস্নব সম্পন্ন হয়েছে। গত ২৮ বছরে শিৰা ও সংস্কৃতির বিকাশের সাথে সাথে দেশের সর্বসত্মরে একদল মনোযোগী পাঠকের আবির্ভাব হয়েছে_যাদের মধ্যে একটি উলেস্নখযোগ্য অংশ মেধাবী ও রম্নচিশীল। দেশে পাঠকের সংখ্যা এত বেশি বৃদ্ধি পেয়েছে যে, পশ্চিমবঙ্গ থেকে প্রকাশিত সকল ধরনের বাংলা বইয়ের প্রধান ক্রেতা ও পাঠক এখন নিঃসন্দেহে বাংলাদেশের মানুষ। পাশাপাশি বাংলাদেশেও প্রকাশিত হচ্ছে নানা ধরনের অজস্র বই। তবে যত বেশি বই বের হচ্ছে, সেই তুলনায় বইয়ের মান বাড়েনি। এখানে মান বলতে লেখার মান এবং সাহিত্য ও শিল্পমানের কথাই বোঝাতে চাইছি। বাংলাদেশে প্রকাশিত বইয়ের বাঁধাই, প্রচ্ছদ, ছাপা, কাগজ ও অঙ্গসৌষ্ঠব উন্নত হয়েছে; কিন্তু বেশিরভাগ বইয়ের সাহিত্যমান ও শিল্প অতি নিম্নমানের। অর্থাৎ গত প্রায় তিরিশ বছরে দেশে বইয়ের চাহিদা যে হারে বেড়েছে; ঠিক সেই হারে বাড়েনি মানসম্পন্ন লেখকের সংখ্যা। গত চলিস্নশ বছর আমাদের সাহিত্যের সেরা লেখকদের আমরা হারিয়েছি; অনেকেই অপরিণত বয়সে পৃথিবী ছেড়ে বিদায় নিয়েছেন এবং আমাদের সাহিত্য জগতকে নিঃস্ব করে গেছেন।
বাংলাদেশে প্রকাশনা শিল্প এখন বাণিজ্যিক দিক দিয়ে যথেষ্ট গুরম্নত্বপূর্ণ। ১৯৮২ সালে 'বইপড়া' বিষয়ে উপাত্ত সংগ্রহের কাজে মাঠে নেমে যে অবস্থা দেখেছিলাম, এখন সেই অনুজ্জ্বল অবস্থা নেই। এখন প্রতি বছর বইমেলার সময় বিপুলসংখ্যক বই প্রকাশিত হচ্ছে। আজ থেকে ২৮ বছর আগে বাংলাদেশে সত্যিকার জনপ্রিয় লেখক ছিলেন তিনজন। তারা হলেন_ 'অবাঞ্ছিত' উপন্যাসের লেখক আকবর হোসেন, মাসুদ রানা সিরিজের লেখক কাজী আনোয়ার হোসেন এবং 'দসু্য বনহুর' এর লেখক রোমেনা আফাজ। এছাড়া তখন যেসব 'বিদগ্ধ লেখক' ছিলেন তাদের পরিচিতি ছিল কেবলমাত্র সুধী সমাজের মধ্যে। আর এখন এ দেশে হুমায়ূন আহমেদ, মুহাম্মদ জাফর ইকবাল, ইমদাদুল হক মিলন, আনিসুল হকসহ কমপৰে এক ডজন লেখক গড়ে উঠেছেন যারা এ দেশের প্রকাশনা শিল্পকে বাণিজ্যিকভাবে ধরে রেখেছেন।
আমি বলতে চাই, এরা বিশ্বায়নের আগ্রাসনের বিরম্নদ্ধে স্থানীয় প্রকাশনা শিল্পকে বাঁচিয়ে রেখেছেন। এসব প্রকাশনা শিল্পকে কেন্দ্র করে কত কম্পিউটার, কত ছাপাখানা, কত অপারেটর, কত ছাপাখানার কর্মী, কত শিল্পী, কত বই বাঁধাইয়ের কারিগর, কত বইয়ের দোকানদার এবং তাদের কেন্দ্র করে কত পরিবার আজ এ দেশে একটি সুস্থ-সচ্ছল জীবন ফিরে পেয়েছে। এছাড়া এখনকার আধুনিক প্রকাশনাকে ঘিরে দেশে গড়ে উঠেছে কত প্রিন্টিং, প্যাকেজিং, পেস্নট নির্মাণ, কালার প্রসেসিং এ রকম কত খাত।
বাংলা একাডেমীর অমর একুশের বইমেলা এখন কেবল জাতির মনন ও ভালবাসার প্রতীক নয়; বরং তা এক সুবিশাল বাণিজ্য। এবারের বইমেলা বিষয়ে যে পরিসংখ্যান পাওয়া গেছে, সেই অনুযায়ী এবারের মেলায় প্রায় ২১ কোটি টাকার বই বিক্রি হয়েছে। মেলায় বই প্রকাশিত হয়েছে ৩ হাজার ৩৫৪টি। এর মধ্যে সর্বাধিক প্রকাশিত হয়েছে কাব্যগ্রন্থ_৮০৭টি। এরপর উপন্যাস বেরিয়েছে ৫৮১টি, গল্প ৩৭৮টি, প্রবন্ধ ২৫৫টি, শিশুসাহিত্য ১২৯টি, জীবনী ১৩৪টি, মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক গ্রন্থ ১১০টি। গত বছর ২০০৯ সালে একুশের বইমেলায় মোট বই বেরিয়েছিল ২ হাজার ৭৪১টি। ২০০৮ সালে বই বেরিয়েছে ২৫৭৮টি এবং ২০০৬ সালে ২১০২টি। এ হিসাব থেকে দেখা যাচ্ছে, প্রতি বছরে লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে বইয়ের প্রকাশনা। তবে বইয়ের গুণগতমান তেমন বাড়েনি। সত্তর দশকের এক সমকালীন কবিবন্ধুকে জিজ্ঞেস করলাম, তিনি এবার মেলা থেকে কী বই কিনেছেন? বন্ধুটি খুব বিষণ্নভাবে বললেন, "মাত্র দুটি বই কিনেছি। প্রায় দেড় শ' বছর আগে লেখা দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুরের অতি পুরনো 'আত্মজীবনী'র নতুন বাংলাদেশী সংস্করণ। বইটি বের করেছে বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্র। অন্য বইটি হলো মুনতাসীর মামুনের লেখা পূর্ববঙ্গের এককালীন ইংরেজ সিভিলিয়ানদের স্মৃতিচারণমূলক রচনা সংকলন, বইটির নাম 'কোই হ্যায়।' প্রকাশক ঢাকার 'সময় প্রকাশন' নামে একটি অভিজাত প্রকাশনা সংস্থা।" বন্ধুটিকে আমি একজন ভাল পাঠক বলে জানি। তিনি কিনেছেন মাত্র দুটি বই।
তবে আমাদের ভাগ্য ভাল, নানান রম্নচির পাঠক আছে বলেই মেলা চলছে। বিক্রি হচ্ছে বিপুলসংখ্যক বই। প্রকাশনা শিল্পকে কেন্দ্র করে বিপুলসংখ্যক মানুষের জীবন ও জীবিকা সুসম্পন্ন হয়েছে। তবে মনে হয় এ ব্যবসাটি এখনও সুশৃ্ঙ্খল ও স্বচ্ছ নয়। প্রকাশনা শিল্পের আলোকিত দিকের পাশাপাশি একটি হতাশাজনক দিকও রয়েছে। ফেব্রম্নয়ারি মাসে বাংলা একাডেমী আয়োজিত একটি আলোচনাসভায় যোগ দিয়েছিলাম। অনুষ্ঠানে 'বাংলাদেশের প্রকাশনা' বিষয়ে একটি প্রবন্ধ পাঠ করেন বদিউদ্দিন নাজির। বিশিষ্ট প্রকাশনা সংস্থা ইউনিভার্সিটি প্রেস লিমিটেডের (ইউপিএল) স্বত্বাধিকারী মহিউদ্দিন আহমদের সভাপতিত্বে আলোচক হিসেবে ছিলাম আমি এবং আমার দুই বন্ধু বিমল গুহ ও ম. মনিরম্নজ্জামান। এ অনুষ্ঠানে হাজির থেকে একটি ধারণা হলো, দেশে বিদ্যমান প্রকাশনা শিল্প সংক্রানত্ম কোন সঠিক ও পূর্ণাঙ্গ তথ্য-উপাত্তই সরকারের কাছে নেই। অর্থাৎ বাংলাদেশে আজ অবধি বৈজ্ঞানিক পদ্ধতি অনুসরণ করে জাতীয় গ্রন্থপঞ্জি তৈরি হয়নি। জাতীয় গ্রন্থকেন্দ্র আনত্মর্জাতিক মানের গ্রন্থপঞ্জি তৈরিতে পুরোপুরি ব্যর্থ হয়ছে।
আসলে বাংলাদেশে বেসরকারী পর্যায়ে বর্তমানে যে বিশাল প্রকাশনা শিল্প গড়ে উঠেছে তার সঙ্গে সরকারের কোন সুপরিকল্পিত ও সুস্পষ্ট সহযোগিতার সম্পর্ক আজ অবধি গড়ে ওঠেনি। বদিউদ্দিন নাজির তাঁর প্রবন্ধে আমাদের প্রকাশনা জগতের একটি কঠিন বাসত্মবতার কথা উলেস্নখ করেছেন। তিনি বলেছেন, ঢাকা শহরে বর্তমানে কোন নির্ভরযোগ্য প্রম্নফরিডার পাওয়া যায় না। কথাটি অতিশয় সত্য। লেখাপড়ার মান কমে যাওয়ায় এমনটি হয়েছে। কিংবা কোন সুশিৰিত ব্যক্তি এখন 'প্রম্নফরিডার' হতে চান না। যদিও প্রম্নফরিডার পদবি এখন নেই, বলা হয় 'সম্পাদনা সহকারী।' মহিউদ্দিন আহমদ জানালেন সবচেয়ে বিস্ময়কর একটি তথ্য। বর্তমানে সারাদেশে একজনও মানসম্পন্ন ইংরেজী জানা প্রম্নফরিডার পাওয়া যায় না। ইউপিএল যেসব ইংরেজী বই প্রকাশ করে অনেক যত্ন সহকারে, সেখানেও মাঝে মাঝে ভুল বের হয় এবং এ কারণে তাঁদের লজ্জার সম্মুখীন হতে হয়। অবশ্য এখন সারাদেশেই শুদ্ধভাবে বাংলা ও ইংরেজী জানা লোক দুর্লভ হয়ে উঠেছে। এৰেত্রে আমার প্রসত্মাব হলো, দেশে মানসম্পন্ন প্রকাশনা শিল্পের স্বার্থেই শুদ্ধভাবে বাংলা ও ইংরেজী জানা প্রম্নফরিডার গড়ে তোলার জন্য বাংলা একাডেমী থেকে নিয়মিত স্বল্পমেয়াদী ও দীর্ঘমেয়াদী কর্মশিবিরের আয়োজন করতে হবে।
এছাড়া আমাদের বিশৃঙ্খল প্রকাশনা শিল্পের জন্য একটি সুশৃঙ্খল বিধিব্যবস্থা গড়ে তোলা দরকার। এৰেত্রে সরকারী হসত্মৰেপ দরকার। সৃজনশীল বইয়ের প্রকাশনাকে অবিলম্বে 'শিল্প' বলে ঘোষণা করা হোক। প্রকাশক ও লেখকদের মধ্যে সম্মানজনক সুসম্পর্ক থাকা দরকার।
বাংলাদেশে প্রকাশিত সেরা বইসমূহ ইংরেজীতে অনুবাদ ও বিদেশে বিপণনের ব্যবস্থা করতে হবে। এ দেশে মহীউদ্দিন আহমেদ (ইউপিএল) কিংবা মফিদুল হকের (সাহিত্য প্রকাশ) মতো সুশিৰিত ব্যক্তিরা প্রকাশনা শিল্পের সঙ্গে জড়িত আছেন। এ ছাড়া বাংলা একাডেমীও প্রতিবছর অনেক গুরম্নত্বপূর্ণ বই প্রকাশ করে থাকে। আমরা চাই বাংলাদেশের প্রকাশনা শিল্পের উন্নয়নে সরকারী সহযোগিতা ও ব্যবস্থাপনা। বালাদেশের প্রকাশনা শিল্প বিকশিত হোক এবং এখানকার বই ছড়িয়ে পড়ুক সারাবিশ্বে। এই শুভ কামনা প্রতিটি বাঙালীর হৃদয়ের গভীর থেকে উৎসারিত।

No comments

Powered by Blogger.