টেস্টিস বা অন্ডকোষের সমস্যা

টেস্টিস হচ্ছে পুরম্নষ প্রজনন অঙ্গ। এখানে স্পার্ম বা শুক্রাণু তৈরি হয় এবং এই স্পার্ম বা শুক্রাণুর সঙ্গে মেয়েদের ডিম্বাণুর মিলনের ফলে সনত্মানের জন্ম হয়। এই টেস্টিসের সংখ্যা দুটি।
এর জন্ম পেটের ভিতর। টেস্টিসদ্বয় শিশুর মায়ের পেটে বেড়ে ওঠার সঙ্গে সঙ্গে নিচের দিকে নামতে থাকে এবং সনত্মান ভূমিষ্ঠ হওয়ার পূর্বেই অন্ডকোষ (স্ক্রটাম) থলিতে অবস্থান নেয়।
টেস্টিস বা অন্ডকোষের কি কি অসুখ হতে পারে :
০ টেস্টিস সঠিক স্থানে না আসা, টেস্টিস অন্ডকোষ থলিতে না এসে পেটে বা অন্য কোন স্থানে নামার সময় আটকে যেতে পারে। এই ধরনের অসুখের ফলে টেস্টিসের বৃদ্ধির ব্যাঘাত ঘটে এবং প্রজনন মতা নষ্ট হয়ে যায়। আঘাতপ্রাপ্ত হওয়ায় ঝুঁকি বেড়ে যায়। সবের্াপরি টেস্টিরের ক্যান্সার হওয়ার সম্ভাবনা অনেক বেশি।
অতএব পিতামাতার উচিত এ বিষয়টি গুরম্নত্বের সঙ্গে বিবেচনা করা এবং অতি সত্বর সার্জনের শরণাপন্ন হওয়া। কারণ সময়মতো চিকিৎসা করলে টেস্টিসের স্বাভাবিক বৃদ্ধি ঘটে ও ক্যান্সার হওয়া রোধ হয়।
চিকিৎসা : পরীা-নিরীার মাধ্যমে টেস্টিসের অবস্থান নির্ণয় করা অর্থাৎ টেস্টিস কোথায় আছে তা নিরূপণ করা এবং সঠিক স্থানে নামিয়ে আনাই হচ্ছে এর আসল চিকিৎসা।
০ টেস্টিসের টিউমার : টেস্টিসের জন্মের পর যদি সঠিক জায়গায় না থাকে ঐ টেস্টিসের টিউমার হওয়ার সম্ভাবনা অত্যনত্ম বেশি। এছাড়াও বিভিন্ন কারণে টেস্টিসের টিউমার হতে পারে। টেস্টিসের টিউমার হলেই টেস্টিস হঠাৎ অস্বাভাবিকভাবে বড় হতে থাকে। বেশির ভাগ সময়ই কোন ব্যথা হয় না। টেস্টিসের টিউমার সাধারণত ক্যান্সার হয়ে থাকে। সময়মতো চিকিৎসা না করলে অতি দ্রম্নত বিভিন্ন স্থানে ছড়িয়ে পড়ে এবং মৃতু্য অনিবার্য।
০ হাইড্রোসিল : টেস্টিসের দুটি আবরণ থাকে। যদি এই দুই আবরণের মাঝে পানি জমে তাকে হাইড্রোসিল বলে। বিভিন্ন কারণে টেস্টিসে পানি জমতে পারে। যেমন (ক) জন্মগত কারণ, (খ) ইনফেকশন, (গ) গোদরোগ/ ফাইলেরিয়াসিস, (ঘ) টিউমার বা ক্যান্সার ইত্যাদি।
হাইড্রোসিল হলে কি জটিলতা হতে পারে : ক) অনেক বড় হয়ে চলাফেরায় অসুবিধা হতে পারে।
খ) দৈহিক মিলনের প্রতিবন্ধকতার সৃষ্টি করতে।
গ) ক্যান্সারের কারণে হাইড্রোসিল হলে জীবন নাশের সম্ভাবনা থাকে।
অতএব, সঠিক চিকিৎসার জন্য সার্জনকে দেখান।
০ টেস্টিকুলার টরসন : ৫ বছর থেকে ৩০ বছর বয়স পর্যনত্ম টেস্টিসের এই অসুখ হয়। এই রোগে টেস্টিস পঁ্যাচ খেয়ে যায়, যার ফলে এর রক্ত সঞ্চালন বন্ধ হয়ে যায় এবং টেস্টিসের কার্যমতা হারিয়ে জড়বস্তুতে পরিণত হয়। এই রোগে টেস্টিসের হঠাৎ প্রচ- ব্যথা অনুভূত হয়। দ্রম্নত এই রোগ নির্ণয় ও চিকিৎসা অতীব জরম্নরী। তা না হলে টেস্টিস গ্যাংগ্রিন হয়ে যায়
০ অরকাইটিস বা টেস্টিসের প্রদাহ : ১৪ থেকে ২২ বছর বয়সে এই অসুখ বেশি হয় এতে টেস্টিসের ইনফেকশন হয় এবং প্রচুর ব্যথা ও টেস্টিস ফুলে যায়। রোগীর জ্বর ও প্রস্রাবের জ্বালা-পোড়া হয়। এই রোগের অন্যতম কারণ অবৈধ যৌন সঙ্গম। সঠিক সময় চিকিৎসা না করলে টেস্টিসের কার্যমতা নষ্ট হয়ে যায়।
০ ভেরী কোসিল : টেস্টিসের রক্তনালীর অস্বাভাবিক স্ফীত ও বৃদ্ধির ফলে এই অসুখ হয়। হাঁটাচলা করলে বা অনেকণ দাঁড়িয়ে থাকলে টেস্টিসের উপরের রগ ফুলে উঠে এবং শুয়ে থাকলে আবার মিলিয়ে যায়। সেই সঙ্গে ব্যথাও অনুভব হয়। এ রোগ হলে প্রজনন মতা হ্রাস পেতে পারে। তা ছাড়া আরও অনেক অসুখ যেমন স্পার্মাটোমমিল ও ইপিডিডাইমাল সিস্ট/টিবি ইত্যাদি অসুখ ও টেস্টিস হতে পারে।
অতএব, টেস্টিসের যে কোন ধরনের অস্বাভাবিকতা দেখা দিলেই জরম্নরী ভিত্তিতে সার্জনের শরণাপন্ন হওয়া অবশ্যক।

হাইড্রোসিল
টেস্টিসের বিভিন্ন প্রকার রোগ হয়। তার মধ্যে হাইড্রোসিল একটি কমন অসুখ।
হাইড্রোসিল কি : টেস্টিস বা অ-কোষের দুই আবরণের মাঝে পানি জমলে তাকে হাইড্রোসিল বলে। বিভিন্ন কারণে হাইড্রোসিল হতে পারে। যেমন :
০ জন্মগত হাইড্রোসিল।
০ টেস্টিসের ইনফেকশনের জন্য হতে পারে।
০ গোদরোগ বা ফাইলেরিয়াসিস।
০ টেস্টিসের টিউমার থাকলেও তার কারণে হাইড্রোসিল হতে পারে।
০ জন্মগত হাইড্রোসিল : শিশু জন্মের সময় থেকে টেস্টিসের ফোল নিয়ে জন্ম গ্রহণ করে। এই হাইড্রোসিলের সঙ্গে হার্নিয়াও থাকে। ধীরে ধীরে হাইড্রোসিল বড় হতে থাকে। পেটের সঙ্গে যোগাযোগ থাকে বলে শুয়ে থাকলে অদৃশ্য হয়ে যায়। এই হাইড্রোসিল চিকিৎসা করা অত্যনত্ম জরম্নরী, কারণ এর সঙ্গে হার্নিয়ার সংযোগ থাকে।
০ ইনফেকশনের জন্য হাইড্রোসিল : টেস্টিসের ইনফেকশন হলে এটাকে ইপিডিডাইমো অরকাইটিস বলে। এই ইনফেকশন সাধারণত যৌনবাহিত রোগ। এ জন্য যুবক বয়সেই এই হাইড্রোসিল দেখা যায়। টেস্টিসে প্রচ- ব্যথা ও ফুলে যায়, সঙ্গে বেশ জ্বর ও ব্যথা থাকে। টেস্টিসে এত ব্যথা হয় যে রোগী স্বাভাবিক চলাফেরা করতে পারে না। সাধারণত প্রস্রাবে জ্বালাপোড়া থাকে। এন্টিবায়োটিক, ব্যথানাশক ওষুধ ও বিশ্রাম এই রোগের জন্য অত্যনত্ম জরম্নরী। সময়মতো চিকিৎসা না হলে টেস্টিসে ফোঁড়া হয়ে যেতে পারে।
০ টিউমারের জন্য হাইড্রোসিল : এই ধরনের হাইড্রোসিল অত্যনত্ম ঝুঁকিপূর্ণ। কারণ এ ধরনের হাইড্রোসিল রোগীর কোন প্রকার কষ্ট হয় না। শুধু টেস্টিসের ফোলা আর কিছু নয়।
০ হাইড্রোসিল হলে কি জটিলতা হতে পারে :
_হাইড্রোসিল বড় হয়ে চলাফেরায় অসুবিধা হতে পারে।
_দৈহিক মিলনে প্রতিবন্ধকতার/বাধা সৃষ্টি করতে পারে।
_ক্যান্সারের কারণে হাইড্রোসিল হলে জীবন বিপন্ন হতে পারে।
_জন্মগত হাইড্রোসিলে হার্নিয়াও থাকে। সেই েেত্র হার্নিয়ার জন্য মৃতু্যর ঝুঁকি হতে পারে।
_ইনফেকশনের কারণে হাইড্রোসিল হলে টেস্টিসে পুঁজ জমতে পারে।
_প্রজনন মতা নষ্ট হয়ে যেতে পারে।
অতএব, এই ধরনের সমস্যা হলেই অভিজ্ঞ সার্জনকে দেখিয়ে সঠিক চিকিৎসা নিন।
ডা. এমএ হাসেম ভূঁঞা
অধ্যাপক, সার্জারি বিভাগ
ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতাল
জেনারেল, লেপারোস্কোপিক, কলোরেক্টাল ও ক্যান্সার সার্জন।

সৃজনশীল ও উৎসাহী ডাক্তাররা লিখুন। লিখুন মানুষের নিত্যনৈমিত্তিক শারীরিক ও মানসিক সমস্যা নিয়ে।
লেখা পাঠানোর ঠিকানা : বিভাগীয় সম্পাদক, আপনার ডাক্তার, দৈনিক জনকণ্ঠ, ২৪/এ রাশেদ খান মেনন সড়ক, ঢাকা-১০০০।

No comments

Powered by Blogger.