সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে বইমেলা

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বাংলা একাডেমী আয়োজিত অমর একুশে গ্রন্থমেলা সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে স্থাানান্তরের পক্ষে মত প্রকাশ করেছেন। প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, ‘একুশে বইমেলার জন্য বাংলা একাডেমী চত্বর এখন অনেক সীমিত হয়ে গেছে।
তাই কিছু গবেষণাধর্মী বইয়ের স্টল, আলোচনা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান বাংলা একাডেমীতে রেখে মূল বইমেলা সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে চলে আসতে পারে। প্রধানমন্ত্রী শুক্রবার বাংলা একাডেমী প্রাঙ্গণে ‘অমর একুশে গ্রন্থমেলা’ উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে এ কথা বলেন। প্রধানমন্ত্রীর এ বক্তব্যে লেখক, প্রকাশক ও পাঠকদের মতামতই প্রতিধ্বনিত হয়েছে। বাংলা একাডেমীর এই বইমেলা আমাদের জাতীয় সাংস্কৃতিক উৎসবে পরিণত হয়েছে। একে নিছক অন্য সব বইমেলার সঙ্গে তুলনা করা ঠিক নয়। এই মেলাকে ঘিরে বাঙালী আবেগ ও উৎসাহ এখন ভিন্ন মাত্রা পেয়েছে। আমাদের ভাষাপ্রেম ও সাংস্কৃতিক চেতনার স্বতঃস্ফূর্ত প্রকাশ এই মেলা। বাংলা একাডেমী প্রাঙ্গণে যখন এই মেলার প্রথম আয়োজন শুরু হয়েছিল, তখন প্রকাশক, পাঠকের সংখ্যা এত বেশি ছিল না। সেসময় বইয়ের স্টলের স্থান সঙ্কুলানে অসুবিধা হতো না। গত দু-তিন দশক ধরে বইয়ের স্টল ও ক্রেতার সংখ্যা বহুগুণ বেড়েছে। অন্যদিকে বাংলা একাডেমীর নতুন কার্যালয় ও অন্যান্য অবকাঠামো নির্মাণের কারণে একাডেমীর প্রাঙ্গণ এখন আগের তুলনায় সঙ্কুচিত হয়েছে। তাই দীর্ঘদিন ধরে লেখক, প্রকাশক ও পাঠকদের অনেকেই দাবি জানিয়েছিল, এই ঐতিহ্যবাহী বইমেলাকে ঐতিহাসিক সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে স্থানান্তরের জন্য। অমর একুশের ভাষা শহীদদের স্মরণে আয়োজিত এই বইমেলাটি ঐতিহাসিক সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে স্থানান্তরিত হলে এই মেলার গুরুত্ব ও সৌন্দর্য অনেকখানি বেড়ে যাবে বলে অনেকের ধারণা।
প্রধানমন্ত্রী তাঁর ভাষণে বলেছেন, ‘বাংলা একাডেমী বইমেলা সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে স্থানান্তরের উদ্যোগ নিলে সরকার সম্ভাব্য সব ধরনের সহযোগিতা দেবে।’ তবে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে গত কয়েক বছর ধরে নেশাক্ত ও ভবঘুরেদের আশ্রয়স্থল হিসাবে গড়ে উঠেছেÑএদের উচ্ছেদ দরকার। প্রধানমন্ত্রী সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে ভবিষ্যতের ‘অমর একুশে গ্রন্থমেলা’ বিষয়ে তাঁর স্বপ্নের কথা বলতে গিয়ে বলেছেন, ‘স্বাধীনতা অর্জন করতে পেরেছি বলেই আমরা বাঙালীরা বিশ্বে মর্যাদার আসনে অধিষ্ঠিত। নতুন প্রজন্মের সেই স্বাধীনতার ইতিহাস জানা দরকার। নতুন প্রজন্ম যখন সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে ‘অমর একুশে গ্রন্থমেলায়’ যাবে, তখন তারা বিজয়স্তম্ভ ও শিখা চিরন্তন দেখবে। তারা জানবে, তারা স্বাধীন।’
একুশে বইমেলাকে ঘিরে প্রধানমন্ত্রী স্বপ্ন ও প্রত্যাশা সফল হোকÑএটাই সবার প্রত্যাশা। তবে মেলা আয়োজন করতে গিয়ে সোহরাওয়ার্দীর উদ্যানের বাগান, জলাধার ও অন্যান্য অবকাঠামোর যাতে ক্ষতি না হয় সে বিষয়টিও মাথায় রাখতে হবে। মেলায় অবস্থানকারী লেখক, পাঠক ও প্রকাশকদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা দরকার। বইমেলা আরও সমৃদ্ধ হোক। একই সঙ্গে দেশে একটি জ্ঞানভিত্তিক আধুনিক গণতান্ত্রিক সমাজ গড়ে উঠুকÑএটাই প্রত্যাশা।

No comments

Powered by Blogger.