ট্রেন থেকে ফেলে হত্যা

বৃহস্পতিবার ভোরে চলন্ত ট্রেন থেকে ফেলে ৪ যাত্রীকে হত্যা করেছে ডাকাতরা। ঢাকা-চট্টগ্রাম রেলপথের ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় এ ঘটনা ঘটে। জানা গেছে, ঢাকাগামী তিতাস কমিউটার ট্রেনে যাত্রীবেশী ডাকাতরা এই তা-ব চালায়।
এতে বাধা দিলে চলন্ত ট্রেন থেকে ৫ যাত্রীকে ধাক্কা দিয়ে বাইরে ফেলে দেয়া হয়। এদের মধ্যে শিশু ও নারীসহ ৪ জন ঘটনাস্থলেই মারা যায়। গুরুতর আহত অবস্থায় একজনকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। তার অবস্থা আশঙ্কাজনক। নিরাপদ, আরামদায়ক ও সাশ্রয়ী পরিবহন ব্যবস্থা হিসেবে বাংলাদেশে রেলের যে ভাবমূর্তি গড়ে উঠেছিল, এখন আর তা নেই। গত কয়েক বছর ধরে কর্তৃপক্ষের অবহেলা, অব্যবস্থাপনার কারণে বাংলাদেশের জনপ্রিয় গণপরিবহন রেল আজ হুমকির মুখে। বিশেষজ্ঞদের ধারণা, এই অবস্থা যদি অব্যাহত থাকে, তবে আমাদের দেশে অচিরেই ঐতিহ্যবাহী রেলের অস্তিত্ব বিপন্ন হতে পারে।
সড়ক দুর্ঘটনার তুলনায় রেল দুর্ঘটনা কম। বৃহস্পতিবার তিতাস কমিউটারে ডাকাতরা যেভাবে ৪ যাত্রীকে ট্রেন থেকে ফেলে হত্যা করেছেÑ তাতে রেলভ্রমণ এখন সত্যিই ভীতিকর। যে কোন মুহূর্তে যে কোন রেলযাত্রী ডাকাত বা ছিনতাইকারীর কবলে পড়তে পারেন। এই অবস্থার অবসান হওয়া জরুরী। মানুষ এককালের ‘নিরাপদ ও আরামদায়ক’ পরিবহনব্যবস্থা ট্রেনে ভ্রমণ নিরাপদ হোক এটাই চায়। সুবিধা থাকার কারণে মানুষ এখনও ট্রেনকে বিশেষভাবে পছন্দ করেন। নিরাপত্তাহীনতার কারণে রেলভ্রমণের বিষয়ে যাত্রীদের মধ্যে যেভাবে আতঙ্কের সৃষ্টি হয়েছে, তাতে মনে হয় একটি বিশেষ চক্র রেলের জনপ্রিয়তাকে সম্পূর্ণভাবে খর্ব করতে চায়।
স্বাধীনতার পর দেশে সড়ক ব্যবস্থা ব্যাপকভাবে বিকশিত হয়েছে। অপরদিকে রেল ক্রমেই সঙ্কুচিত হয়েছে। ছিনতাইকারী, সন্ত্রাসীরা ও ডাকাতরা গত কয়েক বছর ধরে রেলে রীতিমতো নৈরাজ্যের সৃষ্টি করেছে। স্বভাবতই প্রশ্ন জাগে, এদের দমন করা হচ্ছে না কেন?
বৃহস্পতিবার তিতাস কমিউটারে এমন ডাকাতি ও হত্যাকা-ের আগে এ ধরনের ঘটনা আরও কয়েকবার ঘটেছে। কিন্তু কর্তৃপক্ষ প্রতিরোধে কার্যকর ব্যবস্থা নেয়নি। নিলে হয়ত এ ধরনের ঘটনার পুনরাবৃত্তি হতো না। এর আগে গত ৮ সেপ্টেম্বর ময়মনসিংহ ও জামালপুর রুটে দুর্বৃত্তরা বিশ্ববিদ্যালয়ের দুই ছাত্রসহ ৪ জনকে হত্যা করেছিল। তারও আগে এ ধরনের ঘটনা ঘটেছে। এ খবর পত্রিকা ও ইলেকট্রনিক মিডিয়ায় গুরুত্বসহকারে প্রচারিত হয়েছে। তবু সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ সচেতন হয়নি। জনগণের দাবি, নিরাপদ রেল ভ্রমণের স্বার্থে প্রতিটি ট্রেনে পর্যাপ্তসংখ্যক রেল পুলিশের ব্যবস্থা করা হোক। দেশের মানুষ নিরাপদে রেল ভ্রমণ করতে চায়।

No comments

Powered by Blogger.