সমঅধিকারের দৃঢ় অঙ্গীকারে নারী দিবস পালিত

 সমঅধিকার ও সমসুযোগ প্রতিষ্ঠার দৃঢ় অঙ্গীকারের মধ্য দিয়ে বিশ্বের অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশেও আন্তর্জাতিক নারী দিবস ঘোষণার শতবর্ষ পূর্তি উদ্যাপিত হয়েছে সোমবার।
'সম-অধিকার, সমান সুযোগ, সবার জন্য অগ্রগতি'_ এই প্রতিপাদ্যকে সামনে রেখে পালিত হয়েছে আনত্মর্জাতিক নারী দিবস। ১৯১০ সালে প্রথম আনত্মর্জাতিক নারী দিবস পালিত হয়েছিল। বাংলাদেশে শততম এই নারী দিবস পালিত হলো এমন এক সময়, যখন নারীর রাজনৈতিক ৰমতায়নে বাংলাদেশের অগ্রগতি সারা বিশ্বে প্রশংসিত হচ্ছে। দিবসটি উপলৰে সরকারী ও বেসরকারী বিভিন্ন সংগঠন নানা কর্মসূচী পালন করেছে।
আনত্মর্জাতিক নারী দিবস উপলৰে মহিলা ও শিশুবিষয়ক মন্ত্রণালয় বঙ্গবন্ধু আনত্মর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে অনুষ্ঠানের আয়োজন করে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এই অনুষ্ঠানের উদ্বোধন করে নারীর ৰমতায়নে তাঁর সরকারের বিভিন্ন পদৰেপের বর্ণনা করেন। এ সময় প্রধানমন্ত্রী ১৯৯৭ সালের নারী উন্নয়ন নীতিমালা পুনর্বহালের দৃঢ় প্রত্যয় ব্যক্ত করেন। তিনি বলেন, বাংলাদেশে নারীর ৰমতায়নে উলেস্নখযোগ্য সাফল্য হলেও শুধু নারী হওয়ার কারণে যেন আর কোন নারী নিযর্াতিত না হয়, সে বিষয়ে সরকার সচেষ্ট থাকবে। নারীর সমঅধিকারের বিরম্নদ্ধে যে সমনত্ম আইন আছে তা বাতিল করার কথাও বলেন প্রধানমন্ত্রী। পরে তিনি স্মারক ডাকটিকেট অবমুক্ত করেন। পরে মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান ও 'নারীর অগ্রযাত্রার ১০০ বছর' বিষয়ক ডকুমেন্টারি প্রদর্শন করা হয়। দিবসটি উপলৰে দেশের ৬১টি নারী ও মানবাধিকার সংগঠনের সমন্বয়ে গঠিত 'সামাজিক প্রতিরোধ কমিটি' কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে নারী সমাবেশের আয়োজন করে। সমাবেশে অবিলম্বে ১৯৯৭ সালে ঘোষিত জাতীয় নারী উন্নয়ন নীতি নারী সমাজের দাবি অনুযায়ী হালনাগাদ করে পূর্ণ বাসত্মবায়ন করা এবং এজন্য সুনির্দিষ্ট খাত অনুযায়ী বাজেটে বরাদ্দ রাখার দাবি জানানো হয়। এছাড়া জাতীয় সংসদে সংরৰিত আসন সংখ্যা বাড়ানো, নারীদের জন্য আলাদা ও পূর্ণাঙ্গ মন্ত্রনালয় গঠন, সিডও সনদের ২ ও ১৬/ ১(গ) ধারার সংরৰণ প্রত্যাহার করে পূর্ণ অনুমোদন, উত্তরাধিকার আইন সংস্কার করে পিতামাতার সম্পত্তিতে ছেলেমেয়ে উভয়ের সমঅংশদারিত্ব নিশ্চিত করা, মৌলবাদ ও জঙ্গীবাদ কর্মকা-ে নারীদের যুক্ত করার প্রবণতা রোধে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া, অবিলম্বে '৭১-এর যুদ্ধাপরাধীদের বিচার শুরম্নর দাবিসহ ২৫টি দাবি তুলে ধরা হয়। মহিলা পরিষদের সভাপতি আয়শা খানমের সভাপতিত্বে সমাবেশে বক্তব্য রাখেন মানবাধিকার কর্মী সুলতানা কামাল, নারী নেত্রী খুশী কবির, শিরীন আকতার, মেহের আফরোজ চুমকি এমপি, শাহীন আনাম। সমাবেশ শেষে বর্ণাঢ্য র্যালি বের হয়। র্যালিটি প্রেসকাবে এসে শেষ হয়। এ ছাড়া সামাজিক প্রতিরোধ কমিটির উদ্যোগে বাংলা একাডেমী প্রাঙ্গণে দিনব্যাপী মেলার আয়োজন করা হয়। বিকেলে শিশু একাডেমী মিলনায়তনে নারী উদ্যোক্তাদের অংশগ্রহণে ছয়দিনব্যাপী হসত্মশিল্প মেলা শুরম্ন হয়। মেলায় নারী উদ্যোক্তাদের তৈরি পণ্যসামগ্রী প্রদর্শন করা হয়। স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদফতর আগারগাঁওয়ে এলজিইডি মিলনায়তনে "এলজিইডিতে জেন্ডার প্রাতিষ্ঠানিকীকরণ" শীর্ষক সেমিনারের আয়োজন করে। এতে বক্তব্য রাখেন স্থানীয় সরকার পলস্নী উন্নয়ন ও সমবায়মন্ত্রী সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম। এলজিইডির প্রধান প্রকৌশলী ওয়াহিদুর রহমানের সভাপতিত্বে সেমিনারে আশরাফুল ইসলাম বলেছেন, বাংলাদেশে কিছু কিছু ৰেত্রে নারীরা এগিয়েছেন বটে, কিন্তু সামষ্টিক অর্থে বাংলাদেশের নারীরা এখন পর্যনত্ম আশানুরূপ অগ্রগতি অর্জন করতে পারেননি। তিনি বলেন, ২০২১ সালের মধ্যে আমাদের দেশটাকে মাঝারি আয়ের দেশে পরিণত করতে হলে জাতীয় জীবনের সর্বৰেত্রে নারীদের সম্পৃক্ততা ও সহযোগিতা যেমন প্রয়োজন, তেমনি নারী উন্নয়নের জন্যও প্রয়োজন রাজনৈতিক সদিচ্ছায় লালিত ইতিবাচক পদৰেপ।
আনত্মর্জাতিক নারী দিবস উপলৰে জাতীয় সংসদের বিরোধীদলীয় নেতা ও বিএনপি চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়া গুলশানের লেক শো রেস্টুরেন্টে বিভিন্ন পেশার নারীদের সঙ্গে মতবিনিময় করেন। এ সময় তিনি বলেছেন, বর্তমান সরকার নারীর ৰমতায়নের কথা বলে। কিন্তু এ সরকারের আমলেই শতকরা ২০ ভাগ নারী নির্যাতিত হয়েছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উইমেন এ্যান্ড জেন্ডার স্টাডিজ বিভাগের উদ্যেগে সকালে অপরাজেয় বাংলার পাদদেশ থেকে র্যালি বের করা হয়। র্যালির নেতৃত্ব দেন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক। র্যালি শেষে কলাভবন চত্বরে পরিবেশিত হয় নাটক 'ডলস্ হাউজ।' নারী উদ্যোগ কেন্দ্র দুপুরে নারী ক্রীড়াবিদদের নিয়ে বিশাল র্যালি বের করে। র্যালিটি মুক্তাঙ্গন থেকে শুরম্ন হয়ে প্রেসকাব ঘুরে সিরডাপ ভবনে এসে শেষ হয়। বাংলাদেশ জাতীয় মহিলা আইনজীবী সংস্থা বিকেলে ধানমন্ডির রবীন্দ্র সরোবর মুক্তমঞ্চে বর্ণাঢ্য অনুষ্ঠানের আয়োজন করে। সমাজতান্ত্রিক মহিলা ফোরাম ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ডা. মিলন চত্বরে দিনব্যাপী কোটেশন ও আলোকচিত্র প্রদর্শনী, বর্ণাঢ্য র্যালি, আলোচনাসভা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করে। কোটেশন ও আলোকচিত্র প্রদর্শনীর উদ্বোধন করেন শিৰাবিদ অধ্যাপক কাজী মদিনা।
আনত্মর্জাতিক নারী দিবস উপলৰে দুপুরে ঢাকা মহানগর পুলিশ রাজারবাগ পুলিশ মিলনায়তনে নারী পুলিশদের সংবর্ধনা দেয়। আমরাই পারি পারিবারিক নির্যাতন প্রতিরোধ জোটের 'আমরাই পারি ক্যাম্পেইন' আয়োজিত বেগম রোকেয়ার জন্মস্থান রংপুরের পায়রাবন্দ এবং বেগম সুফিয়া কামালের জন্মস্থান বরিশালের শায়েসত্মাবাদ থেকে শুরম্ন হওয়া শোভাযাত্রা সোমবার ঢাকায় শেষ হয়েছে। রাঁধুনী বিকেল সাড়ে তিনটায় বঙ্গবন্ধু আনত্মর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে 'রাঁধুনী কীর্তিমতী সম্মাননা ২০০৯ প্রদান করেছে। এবার এ সম্মাননা পেয়েছেন বিলকিস আক্তার সুমী, ঝর্ণাধারা চৌধুরী এবং রাশিদা বেগম। এ ছাড়া এই বছর আনত্মর্জাতিক নারী দিবসের শতবর্ষ পূর্তি উপলৰে প্রথমবারের মতো আজীবন সম্মাননা পুরস্কার দেয়া হয়। 'বেগম' পত্রিকার মাধ্যমে বাংলাদেশে নারীর অগ্রযাত্রায় ভূমিকা রাখার জন্য কীর্তিমতী নূরজাহান বেগম আজীবন সম্মাননা পুরস্কার পান। এ পুরস্কার প্রদান করেন কথাসাহিত্যিক রাবেয়া খাতুন। অন্য সম্মাননা তুলে দেন সঙ্গীত শিল্পী রম্ননা লায়লা, নারী উদ্যোক্তা রোকেয়া কাদের খান, চ্যানেল আইয়ের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ফরিদুর রেজা সাগর এবং স্কয়ার কনজুমার প্রডাক্টস লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক অঞ্জন চৌধুরী। নারী উদ্যোগ কেন্দ্র বিকেলে সিরডাপ মিলনায়তনে ক্রীড়াঙ্গনের নারীদের আজীবন সম্মাননা ও আলোচনাসভার আয়োজন করে। জাতীয় কন্যাশিশু এ্যাডভোকেসি ফোরাম সকাল ১১টায় বাংলাদেশ শিশু একাডেমী মিলনায়তনে আলোচনাসভার আয়োজন করে। জাতীয় গার্মেন্টস শ্রমিক ফেডারেশন সকালে মুক্তাঙ্গনে নারী শ্রমিকদের নিরাপদ মাতৃত্বের দাবিতে শোভাযাত্রা বের করে। ধরিত্রী ফাউন্ডেশন সকালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসি সড়কদ্বীপে দলিত উৎসব নাটক প্রদর্শন করে। সুশাসনের জন্য প্রচারাভিযান (সুপ্র) সকাল ১১টায় জাতীয় জাদুঘরের সামনে মানববন্ধন ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করে। জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ফিন্যান্স বিভাগের উদ্যোগে বিভাগের সেমিনার কৰে আলোচনাসভার আয়োজন করা হয়। বিভাগীয় চেয়ারম্যান মঞ্জুর মোর্শেদ ভঁূইয়ার সভাপতিত্বে আলোচনাসভায় বক্তব্য রাখেন সহযোগী অধ্যাপক রম্নবিয়া বেগম, প্রভাষক আকরামুজ্জামান প্রমুখ।
দিবসটি উপলৰে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের নারী কর্মকর্তা কর্মচারীদের নিজ হাতে লাল গোলাপ দিয়ে শুভেচ্ছা জানিয়েছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডা. দীপু মনি। পরে মন্ত্রণালয়ের কনফারেন্সে রম্নমে সকল নারী কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের নিয়ে নারী দিবসের কেক কাটেন তিনি। এ সময় তিনি আরও দৰতা ও বিচৰণতার সঙ্গে দায়িত্ব পালনের জন্য নারী কর্মকর্তা কর্মচারীদের প্রতি আহবান জানান। এ ছাড়া বাংলাদেশের প্রথম নারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিসেবে দীপু মনিকে চ্যানেল আইয়ের পৰ থেকে বিশেষ সম্মাননা দেয়া হয়। জাতীয় গণতান্ত্রিক লীগের উদ্যোগে কল্যাণপুরের নিজস্ব কার্যালয়ে আলোচনাসভার আয়োজন করা হয়। সংগঠনের সভাপতি এম এ জলিলের সভাপতিত্বে সভায় প্রধান অতিথি ছিলেন ভাষাসৈনিক, প্রবীণ সাংবাদিক বাহাউদ্দিন চৌধুরী।

No comments

Powered by Blogger.