কালের কণ্ঠের পথচলা by আব্দুল মান্নান

কালের কণ্ঠের চতুর্থ বছরে পদার্পণে প্রথমে পত্রিকার সব সংবাদকর্মীকে অভিনন্দন জানাচ্ছি। তাঁদের মেধা ও অক্লান্ত শ্রমের বিনিময়ে আমরা প্রতিদিন ভোরে একটি তাজা পত্রিকা হাতে পেয়ে থাকি। আমাদের হাত পর্যন্ত পৌঁছাতে নানা ধাপে অনেকের শ্রমের সমন্বয় ঘটে- তাঁদের সবার প্রতি আন্তরিক শুভেচ্ছা।
প্রতিদিন আমি যে কয়েকটি পত্রিকা পাই ও পাঠ করি, এর মধ্যে কালের কণ্ঠ অন্যতম। আমি মনে করি, পত্রিকাটি আধুনিকমনস্ক ও ভালো খবর দিতে পারে আমাদের। পাঠকের চাহিদা পূরণে কালের কণ্ঠ সক্ষম বলে মনে করি। তবে কিছু ক্ষেত্রে আরো মনোযোগী হওয়া দরকার বলে মনে করি। যেমন- আন্তর্জাতিক রিপোর্ট মানে ও পরিমাণে আরো বৃদ্ধি করা যেতে পারে।
আমাদের দেশ একটি ব্যতিক্রম দৃষ্টান্ত পত্রিকা প্রকাশনার বিষয়ে। ছোট, দরিদ্র ও শিক্ষার হার খুব সন্তোষজনক নয়। তবু শুধু রাজধানী শহর থেকে অসংখ্য পত্রিকা বেরোয় প্রতিদিন। তাই পত্রিকাগুলোর পাঠক ধরে রাখা একটি ব্যাপার বটে। এদিক দিয়ে কালের কণ্ঠ সফল বলতে পারি। এখনো পত্রিকাটি পাঠক ধরে রাখতে পারছে। তাহলে নিশ্চয়ই পাঠকের চাহিদা পূরণে কালের কণ্ঠ দায়িত্বশীল ভূমিকা পালন করছে, তা বলা যায়। বাজারে টিকে থাকাটাও পত্রিকার একটি সফলতার চিহ্ন। আর এ সফলতা ধরে রাখতে হলে পাঠকের পছন্দ-অপছন্দের প্রতি নির্মোহ দৃষ্টি রাখতে হবে। খবর খবরই হতে হবে, তাতে উদ্দেশ্যমূলক বক্তব্য বা রং চড়ানো ঠিক নয়। কালের কণ্ঠ আগামী দিনেও তার বর্তমান গুণাগুণ বজায় রেখে আরো অগ্রগতির দিকে নজর দেবে, তা আমাদের প্রত্যাশা। কালের কণ্ঠ কোনো দলীয় পত্রিকা নয় বলে আমার মনে হয়। এ জন্য পত্রিকাটির বস্তুনিষ্ঠতা, পরিচ্ছন্নতা, পক্ষপাতহীনতা আশা করে তার পাঠক। বর্তমানে সংসদ যেহেতু কার্যকর নয়, তাই মিডিয়ার ভূমিকার ওপর অনেকাংশ নির্ভর করে গণতান্ত্রিক পরিবেশ রক্ষার ভার। তাই বলা যায়, পত্রিকাগুলোর দায়িত্ব অনেক বেড়েছে। সংবাদ লেখায় ও সংবাদ বিশ্লেষণের মধ্যে বা সম্পাদকীয় ও উপসম্পাদকীয়তে এমন লেখাই কাম্য, যা গণতন্ত্রচর্চা ও গুণমান বৃদ্ধিতে সহায়ক হয়।
বিশ্বে সর্বত্রই দেখা যায় পত্রিকাগুলো চালান করপোরেট মালিকরা। এতে ভালো-মন্দ দুটি দিকই আছে। ভালো দিকটি হলো, ব্যয়বহুল পত্রিকা প্রতিষ্ঠানের জন্য পুঁজির দুশ্চিন্তা থাকে না, যদি কোনো করপোরেট মালিক তা চান। মন্দ দিকটি হলো, অর্থ লগ্নি করে যদি পত্রিকার মালিক তাঁর নিজের চিন্তাভাবনা, বাণিজ্য বা ব্যক্তিগত স্বার্থ সম্পর্ক চাপিয়ে দেন, তাহলে তা নিশ্চয়ই ভালো দিক নয়। তাই যদি কোনো পুঁজি-মালিক সত্যি সামাজিক দায়বদ্ধতাবোধ থেকে বা দেশের স্বার্থ বিবেচনা করে পত্রিকা প্রকাশনায় আসেন, তাহলে পত্রিকায় কী যাবে, পাঠক কী চান ইত্যাদি দেখার দায়িত্ব পেশাদার সাংবাদিকদের হাতে ছেড়ে দেওয়া উচিত।
আজকের পাঠক অনেক সচেতন। অনেক পত্রিকা বাজারে বেরোয়। সাপ্তাহিক, পাক্ষিক, মাসিক ছাড়াও অসংখ্য দৈনিকসহ ইংরেজি দৈনিক, সাপ্তাহিক, পাক্ষিকও রয়েছে। সহজেই একটি পত্রিকার দুর্বলতা চেনা যায়। কোন জাতের নিউজ কোন পত্রিকায় মান-মাত্রা মতো আসছে না, কোন পত্রিকার ভাষা-বাচন সুন্দর, নির্ভুল বা তার বিপরীত ইত্যাদি পাঠকরা সহজে যাচাই করে নিতে পারে। তাই অবশ্যই কোনো পত্রিকা পাঠকের চাহিদা পূরণে ব্যর্থ হলে টেকা মুশকিল। আমি মনে করি, কালের কণ্ঠ কর্তৃপক্ষ সে বিষয়ে সচেতন।
আগামী এক বছর আমাদের দেশের রাজনীতিতে খুব গুরুত্বপূর্ণ সময়। সামনে দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচন। অথচ কোন পদ্ধতিতে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে, তা নিয়ে ঐকমত্যে পৌঁছতে পারেনি রাজনৈতিক দলগুলো। এ অবস্থায় দেশজুড়ে অস্থিরতা ও শঙ্কা বিরাজ করছে মানুষের মনে। যেকোনো মূল্যে গণতন্ত্রের স্বাভাবিক পথচলাকে নিষ্কণ্টক রাখতে হবে। এ জন্য এ সময় মিডিয়ার গণতান্ত্রিক শক্তিশালী ভূমিকা থাকা দরকার। মানুষ রাজনীতির পথনির্দেশনা ও পরামর্শও দাবি করে দেশের সংকটকালে। গণতন্ত্র রক্ষায় মিডিয়া বা পত্রিকাগুলোর ভূমিকা তাই খুবই মূল্যবান। গত তিন বছরের মতো আগামীতেও কালের কণ্ঠ সেই ভূমিকা পালন করবে বলে মনে করি।
(অনুলিখন)
লেখক : শিক্ষাবিদ

No comments

Powered by Blogger.