নীল আকাশে মিশেছে নীলগিরি by নাজনীন তৌহিদ

সৌন্দর্যর্ের্র লীলাভূমি পুরো বাংলাদেশ, এক একটি জেলা, অঞ্চল এক একটির চেয়ে সুন্দর। পুরো দেশ ঘুরে এলেও তৃষ্ণার্ত মনের তৃষ্ণা থেকেই যাবে। যাঁরা বেড়াতে চান সমতলে তাঁদের জন্য রয়েছে যেমন জাদুঘর, মসজিদ, মন্দির, গির্জা, অরণ্য আরও কত কি তেমনি যাঁরা আকাশ ছুঁয়ে নিতে চান তাঁদের জন্য রয়েছে আকাশছোঁয়া ভাললাগা, আর এই ভাললাগা অনুভব করতে চাইলে আপনাকে যেতে হবে পাহাড়ঘেরা ভূমিতে।
হঁ্যা, আমি চট্টগ্রামের কথা বলছি, চট্টগ্রামের ভেতরই রয়েছে সৌন্দয্যর্ের এক একটি তুলনাহীন অঞ্চল। তেমনি একটি বান্দরবান। পূর্বে মিয়ানমার, পশ্চিমে চট্টগ্রাম ও কক্সবাজার উত্তরে পার্বত্য চট্টগ্রাম আর দেিণ মিয়ানমার ও বঙ্গোপসাগর বান্দরবানে আসাটা আজকাল কঠিন কোন ব্যাপার নয়। এবার বান্দরবান থেকে ৪৭ কি.মি. দণি-পূর্বে যেতে হবে পাহাড়ের চূড়ায় চূড়ায় অসম্ভব ভাললাগার সড়ক চুম্বুক রেঞ্জে। উঁচু থেকে উঁচুতে আরও উঁচুতে চলবে আপনার গাড়ি অথচ আপনি চারদিকের পাহাড়ের সৌন্দর্য্যে এতটাই বিমোহিত থাকবেন যে কত উঁচুতে চলছেন বুঝতেই পারবেন না। কেবল পেছনে ফেলে আসা পথের দিকে তাকালে বলে দেবে কি সর্পিলভাবে নির্মিত পাহাড়ি পথ, এতটা ভয়ঙ্কর পথ পাহাড়ী চূড়া বেয়ে চললাম কেমন করে।
চিম্বুক চূড়া পাড়ি দিয়ে একটি বেল্টে চলতে চলতে আরও ১৯ কি. মি. পথ চলার পরে যে জায়গাটিতে আসবেন এতণ তারই কথা চলছিল। আদিবাসীরা এই উঁচু পাহাড়গুলোতে ঘর বেঁধে থাকে; কি ভয়ঙ্কর সাহস তাদের। কখনও দেখবেন তাঁরা এই পাহাড় চূড়ায় গরম্ন চরাচ্ছে, বন্য ফল সবজি কুড়াচ্ছে, কি নির্বিঘ্নে বসবাস তাদের। কোথাও কোথাও তারা দলবদ্ধভাবে ঘরের পাশে ঘর করে থাকে তখন তাদের এই বসতবাড়িগুলোকে এক একটি পাড়া বলে, এমনি একটি পাড়ার নাম কাপ্রম্নপাড়া। এ চিম্বুক বেল্টের উপরে কাপ্রম্নপাড়া এলাকাতেই আধুনিক স্থাপত্যে নির্মিত হয়েছে হিল রিসোর্ট নীলগিরি। সমতল থেকে প্রায় ২৫ শ' ফুট উপরে এই নীলগিরি। নীলগিরির উপরে নির্মিত অসম্ভব রকমের সুন্দর তিনটি কটেজ। এখানে কেউ হেলিকাপ্টারেও আসতে পারেন। রয়েছে একটি হেলিপ্যাড। সবচেয়ে উপরে দুটো কটেজ নাম মেঘদূত আর আকাশনীল। আর এদের একধাপ নিচে রয়েছে আরেকটি কটেজ নীলাঙ্গনা। উপরে তৈরি হচ্ছে একটি ক্যাফে। এখানে স্বল্পকালীন দীর্ঘকালীন সবধরনের থাকার ব্যবস্থা রয়েছে। তবে পুরো পাহাড়ী দৃশ্য পেতে হলে কম করে একদিন একরাত থাকতে হবে কেন না ভাললাগাটা বিকেলে শুরম্ন হয়। অসম্ভব বাতাস, ক্রমে ক্রমে সূর্য নেমে আসে, পাহাড়ের আড়ালে ডুবে যায়। তারপর ধীরে ধীরে সন্ধে নামে। কি যে মনোরম দৃশ্য তা বলে বোঝানো যাবে না। রাতে পাহাড়ও ঘুমিয়ে পড়ে চারদিকে অন্ধকার নামে। তাই আপনাদের বিনোদনের জন্য রয়েছে টেলিভিশন ডিশ লাইনসহ। শীতকালে গরম পানির ব্যবস্থাও রয়েছে। থাকা-খাওয়া সব ব্যবস্থা রয়েছে পরিচ্ছন্ন আর আতিথেয়তায় ভরা পরিবেশে। রাত কেটে যাবে সারাদিনের ভাবনায়। তারপর আসবে সবচেয়ে ভাললাগার আরেকটি চমক। সে জন্য খুব সকালে ঘুম থেকে উঠতে হবে আপনাকে। চারদিকে তাকিয়ে আপনার কাছে অচেনা মনে হবে বরফে ঢেকে গেছে গোটা পাহাড়ী অঞ্চল। যতদূর চোখ যাবে শুধু মনে হবে সাদা শাড়ির অাঁচলে ঢাকা পড়েছে সমসত্ম পাহাড় চূড়া কিন্তু যখনই জানবেন ওগুলো সব মেঘ। আনন্দে শিহরিত হবে মন। মেঘ কি তবে ছোঁয়া যায়। হঁ্যা, মেঘের নিম্নসত্মরটা পর্বত চূড়ায় আটকা পড়েছিল। সকালের রোদ ফুটতেই মেঘগুলো ধীরে ধীরে ঘুম ভেঙ্গে উড়তে থাকে আকাশে, সে দৃশ্য অসম্ভব রকমের সুন্দর। এত সুন্দরভাবে মেঘের সঙ্গে বসবাস আর কোথায় পাবেন বলুন। আমি নিজের দেশের কথা বলছি। আগে কেওক্রাড়াডংকে সর্বোচ্চ শৃঙ্গ বলা হতো। তবে এখন নতুন আবিষ্কৃত তাজিং ডংকে প্রথম ধরা হচ্ছে তাই সে হিসেবে নীলগিরির স্থান তৃতীয়। তবে সৌন্দর্যে নীলগিরি সর্বোত্তম।
নীলগিরির উত্তর-পশ্চিম কোণে কেওক্রাড়াডং। উত্তর-পশ্চিম কোণে রম্নমা আর উত্তরে চিম্বুক। নীলগিরি হীল রিসোর্ট উদ্বোধন হয় ২০০৬ সালের ২৫ জানুয়ারি। সবার অবগতির জন্য এই স্থানের সৌন্দর্য কিভাবে উপভোগ করা যায় তাই এর বুকিং সম্বন্ধে একটু অবগত করছি। আগে বুকিং দিতে চাইলে ৫০% টাকা নীলগিরি বুকিং ফান্ড সঞ্চয়ী হিসাব নং ১০১৩২/৫৬, সোনালী ব্যাংক, বান্দরবান শাখা, বান্দরবান ব্যাংকে টিটি করতে হবে। টিটি ফর্ম এবং অবশিষ্ট ৫০% এখানে এসে কর্তব্যরত ব্যক্তিকে হসত্মানত্মর করতে হবে।
রম্নমপ্রতি ভাড়া স্বল্পকালীন বিরতি তিন'শ টাকা পর্যটকদের জন্য পাঁচ হাজার টাকা।
তবে নীলঙ্গনায় ভাড়া কিছুটা কম।
নীলগিরি দেখার সুবাদে আপনি ঘুরতে পারেন পুরো বান্দরবান, নাইৰ্যাংছড়ি, আলিকদম, রম্নমা, বলিপাড়া, থানচি। সৌন্দর্যপিপাসু মনে ছুঁয়ে যাক নীল আকাশ, মিশে যাক ভাললাগাটুক নীলগিরির অপূর্ব সৌন্দর্যে।

No comments

Powered by Blogger.