বায়ান্ন বাজার তিপ্পান্ন গলি

সৈয়দ সোহরাব মাঘ মাসের প্রথম সপ্তাহ চলে গেছে। আজ শুক্রবার ৯ তারিখ। মাঘের শীত যে কি, রাজধানীবাসী এবার হাড়ে হাড়ে টের পেয়েছে তা, মাঘের এই প্রথম সপ্তাহেই। কথায় আছে না 'মাঘের শীতে বাঘ কাঁপে'_তারই প্রমাণ পেল এবার নগরবাসী।
এ সময়ে নগরবাসিন্দারা কয়েক দিনতো সূর্যেরই দেখা পায়নি। ঘন কুয়াশায় আচ্ছন্ন হয়ে ছিল নগরী। জীবনের তাগিদে যাঁরাই পথে নেমে এসেছেন, তাঁদেরই কনকনে শীতে কেঁপে কেঁপে চলাচল করতে হয়েছে পথে। সবারই পরনে ছিল একাধিক শীতবস্ত্র। কুয়াশার মাত্রা এত বেশি ছিল যে, কোথাও কোথাও মনে হয়েছে যেন গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি পড়ছে। তবে গত সপ্তাহের মধ্যে বৃহস্পতিবারটি ছিল একটু অন্যরকম। এদিন কুয়াশার প্রভাব ছিল কম, সকাল থেকেই সূর্য আলো বিলিয়েছে, দিনে শীতও ততটা অনুভূত হয়নি। তবে সন্ধ্যার পরে শীতের মাত্রা আবার বেড়েছে কিছুটা।
এই হাড় কাঁপানো শীত মাথায় নিয়েই আজ শুক্রবার থেকে শুরম্ন হচ্ছে তিন দিনব্যাপী বিশ্ব এজতেমা। এতে অংশ নিচ্ছে দেশ-বিদেশের লাখ লাখ ধর্মপ্রাণ মুসলিস্ন। সৃষ্টির্কতার সন্তুষ্টি লাভের আশায় আবহাওয়ার প্রতিকূলতা জয় করে শত শত, হাজার হাজার মাইল পথ পাড়ি দিয়ে তাঁরা এসেছে এই বিশ্ব জামাতে। বানের মতোই আজ মুসলিস্নদের ঢল নামবে টঙ্গীর তুরাগ নদীর পাড়ে। মুসলিস্নর এই কাফেলায় শামিল হবে নারী, পুরম্নষ, শিশু, বুড়ো সবাই। হজের পরেই স্থান পাওয়া মুসলিম বিশ্বের দ্বিতীয় এই বৃহত্তম জমায়েতে অংশ নিতে অনেকে আবার ২/৩ দিন আগেই এসে হাজির হয়েছে তুরাগ পাড়ে। এঁদের মধ্যে বিদেশীরাও আছেন। নিচে কার্পেট উপরে ত্রিপল দিয়ে এজতেমা প্রাঙ্গণ ঘিরে ফেললেও হিমেল হাওয়ায় নাকাল হতে হচ্ছে মুসলিস্নদের। সবাই, নিজেকে হাত মোজা, পা মোজাসহ একাধিক শীতবস্ত্রে ঢেকে নামাজ, কোরান তেলাওয়াত ও জিকির আসকার করছেন অথবা ইসলামী বয়ান শুনছেন। ষাটোর্ধ বৃদ্ধরাও এই হাড় কাঁপানো শীতে আপাদমসত্মক ঢেকে জবুথবু অবস্থায় নিজের, দেশের ও বিশ্বের মঙ্গল কামনায় করছেন প্রার্থনা। তবে এত শীতেও কারও মধ্যেই কোন অনুশোচনা নেই, এই ভেবে যে কেন এখানে এলাম। দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে বাস, লঞ্চ আর ট্রেনে চেপে এখনও আসছে লাখ লাখ মানুষ। আজ, কাল এবং আখেরী মোনাজাতের দিনও মানুষের ঢল থাকবে তুরাগ পাড়মুখী। এজতেমায় যাওয়ার জন্য নগরীর অনেকে অতিরিক্ত শীতবস্ত্রও কেনাকাটা করেছেন। আর এই বিক্রির মধ্যে কম্বলের চাহিদাই ছিল বেশি।
নতুন বছর এলেই মেধা ও মননের প্রতীক বাংলা একাডেমীর র্কম চাঞ্চল্য বেড়ে যায়। কারণ পয়লা ফেব্রম্নয়ারি থেকে শুরম্ন হয় বাঙালীর ঐশ্বর্যের মেলা অমর একুশের বইমেলা । এ মেলার গোছগাছ নিয়ে এই জানুয়ারিতেই মহাব্যসত্ম সময় পাড় করতে হয় বাংলা একাডেমীকে। এখন চলছে তাদের স্টল বরাদ্দের কাজ, তবে তাও প্রায় সম্পন্ন করে এনেছে তারা। এ পর্যনত্ম ২৬৪টি প্রতিষ্ঠানকে ৩৭২টি স্টল দিয়েছে। আরও কিছু প্রতিষ্ঠানকে স্টল বরাদ্দ দেবে, তবে তা কোনভাবেই ৪২০টির বেশি হবে না বলেও জানালেন একাডেমীর পরিচালক (মিডিয়া) আনোয়ার মুন্সি। আর এই মেলাকে ঘিরে বাঙালীর উচ্ছ্বাসের কমতি নেই। কারণ মাতৃভাষার মর্যাদা রৰায় এ মাসেই বীর বাঙালী বুকের তাজা রক্ত ঢেলে দিয়েছিল রাজপথে। সেই মাতৃভাষায় লেখা বইয়ের মেলা নিয়ে তাই বাঙালীর আবেগও বেশি।
রাজধানী ঢাকার সব পথে এখন বারো মাসই পিঠা পাওয়া যায়। ঝড়, বৃষ্টি, শীত কোন কিছুই বাধা হয়ে দাঁড়াতে পারে না এতে। আর শীত তো হলো পিঠা-পায়েসেরই সময়, তাই এ সময় ৫০ বা ১০০ গজ দূর দূরেই থাকে পিঠার দোকান। শীতে কাঁপতে কাঁপতে এসব দোকানে দাঁড়িয়ে নারী-পুরম্নষ খাচ্ছে ভাপা, চিতই, তেলের পিঠা ইত্যাদি। অনেকে আবার কিনে বাসায়ও নিয়ে যাচ্ছে। নগরীতে এখন বারো মাস সব পিঠা পাওয়া গেলেও ভাপা পিঠাটা শুধু এই শীতেই পাওয়া যায়। তাই এ সময় নগরবাসিন্দাদের বাসায় কিনে নিয়ে বা পথে দাঁড়িয়েই ভাপাসহ অন্যান্য পিঠা খেতে দেখা যায়। নগরীর শিল্পকলায় এই পিঠা নিয়ে শুরম্ন হয়েছে একটি উৎসবও।

No comments

Powered by Blogger.