রিভিউয়ের শুনানি ২৪ জানুয়ারি- বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলা

 বাংলাদেশের স্থপতি জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হত্যা মামলায় পাঁচ খুনীর সুপ্রীম কোর্টের রায় রিভিউয়ের শুনানি ২৪ জানুয়ারি। রিভিউয়ের শুনানির জন্য প্রধান বিচারপতি মোঃ তাফাজ্জাল ইসলামের নেতৃত্বে চার সদস্যবিশিষ্ট পূর্ণাঙ্গ বেঞ্চ গঠন করা হয়েছে।
বেঞ্চের অন্যান্য সদস্য হলেন বিচারপতি বিজন কুমার দাস (বিকে দাস), বিচারপতি মোঃ মোজাম্মেল হোসেন ও বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহা (এসকে সিনহা)। বৃহস্পতিবার লে. কর্নেল (বরখাসত্ম) সৈয়দ ফারম্নক রহমান এবং লে. কর্নেল (অব) মহিউদ্দিন আহমেদের (আর্টিলারী) আইনজীবী খান সাইফুর রহমান প্রধান বিচারপতির আদালতে শুনানির জন্য সময় চান। তখন রাষ্ট্রপরে প্রধান কেঁৗসুলি এ্যাডভোকেট আনিসুল হক এ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম এবং ড. তৌফিক হাসান এ বিষয়ে বক্তব্য রাখেন। আনিসুল হক আদালতকে বলেন, আমরা এই মামলার জন্য দীর্ঘ ১৩ বছর অপো করেছি। শুনানি যত দ্রম্নত হয় ততই ভাল। খান সাইফুর রহমান বলেন জাজমেন্ট হয়ে গেছে, শুনানির সময় পিছিয়ে দেন। তখন আদালত জানায় আপনারা চেম্বার জজ হয়ে আসুন। ২৪ জানুয়ারি শুনানি করা হবে।
১৯ নবেম্বর বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলার ঐতিহাসিক রায় প্রদান করে আপীল বিভাগের পূর্ণাঙ্গ বেঞ্চ। আপীল বিভাগ কারাগারে আটক দ্রম্নত পাঁচ খুনীর আপিল আবেদন নাকচ করে দেয়। এর ফলে হাইকোর্টের দেয়া ১২ খুনীর মৃতু্যদ-াদেশ বহাল থাকে। হাইকোর্টের তৃতীয় বিচারক বিচারপতি মোঃ ফজলুল করিম যে ১২ খুনীর মৃতু্যদ-াদেশ বহাল রাখেন, তারা হলো লে. কর্নেল (বরখাসত্ম) সৈয়দ ফারম্নক রহমান, লে. কর্নেল (অব) মহিউদ্দিন আহম্মেদ (আর্টিলারি), লে. কর্নের (অব) সুলতান শাহরিয়ার রশিদ খান, লে. কর্নেল (অব) একে এম মুহিউদ্দিন আহম্মেদ (ল্যান্সার), মেজর (অব) বজলুল হুদা_ এরা সবাই ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে আটক রয়েছে। অপর ৬ খুনী বিদেশে পলাতক। এরা হলো লে. কর্নেল (অব) খন্দকার আব্দুর রশিদ, লে. কর্নেল (অব) শরিফুল হক ডালিম, লে কর্নেল (অব) এএম রাশেদ চৌধুরী, লে. কর্নেল (অব) এনএইচএমবি নূর চৌধুরী, ক্যাপ্টেন (অব) আব্দুল মাজেদ, রিসালদার মোসলেহ উদ্দিন। এক খুনী পলাতক অবস্থায় বিদেশে মারা গেছে। লে. কর্নেল (অব) আজিজ পাশা পলাতক অবস্থায় ২০০১ সালে জিম্বাবুইয়েতে মারা গেছে।
কারাগারে আটক পাঁচ খুনীর আবেদনে আপীল বিভাগে শুনানি শেষে ১৯ নবেম্বর রায় প্রদান করে আপীল বিভাগের পূর্ণাঙ্গ বেঞ্চ। এরপর ১৭ ডিসেম্বর আপীল বিভাগের পাঁচ বিচারপতি যথাক্রমে বিচারপতি মোঃ তাফাজ্জাল ইসলাম, বিচারপতি বিজন কুমার দাশ (বিকে দাশ), বিচারপতি মোঃ আব্দুল আজিজ, বিচারপতি মোঃ মোজাম্মেল হোসেন এবং বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহা ৪১২ পৃষ্ঠার রায়ে স্বার প্রদান করেন। রায় স্বারের পর ১৯ ডিসেম্বর ওয়েবসাইট প্রকাশ করা হয়। ২১ ডিসেম্বর রায়ের অনুলিপি আইন মন্ত্রণালয়, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, এ্যাটর্নি জেনারেল কার্যালয়সহ বিচারিক আদালতে পাঠানো হয়। ২২ ডিসেম্বর রায়ের অনুলিপি খুনীদের তিন আইনজীবী খান সাইফুর রহমান, আব্দুর রাজ্জাক খান, ব্যারিস্টার আব্দুলস্নাহ আল মামুনের কাছে হসত্মানত্মর করা হয়। বিচারিক আদালত রায়ের কপি পাওয়ার পর ৩ জানুয়ারি লাল খামে পাঁচ আসামির মৃতু্য পরোয়ানা ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে পাঠানো হয়। মৃতু্য পরোয়ানা কারাগারে পেঁৗছার সঙ্গে সঙ্গে খুনীদের রায় পড়ে শোনানো হয়। নিয়ম অনুযায়ী ৭ দিনের মধ্যে রাষ্ট্রপতির নিকট প্রাণ ভিার আবেদন করতে হয়। সেই ধারা অনুসরণ করে পাঁচ খুনীর মধ্যে তিন খুনী লে. কর্নেল (অব) একেএম মুহিউদ্দিন আহম্মেদ (ল্যান্সার), মেজর (অব) বজলুল হুদা, লে. কর্নেল (অব) মুহিউদ্দিন আহম্মেদ (আর্টিলারি) রাষ্ট্রপতির নিকট প্রাণ ভিার আবেদন করে। রাষ্ট্রপতি ১৭ জানুয়ারি তিন খুনীর আবেদন নাকচ করে দিয়েছেন। সেই হিসেব অনুযায়ী ১৭ জানুয়ারির পর ২১ থেকে ২৮ দিনের মধ্যে তিন খুনীর রায় কার্যকর হওয়ার কথা। অন্যদিকে, দুই খুনী লে. কর্নেল (বরখাসত্ম) সৈয়দ ফারম্নক রহমান ও লে. কর্নেল (অব) সুলতান শাহরিয়ার রশিদ খান রাষ্ট্রপতির কাছে প্রাণভিার আবেদন জানায়নি। তারা সুপ্রীমকোর্টের রায়ের রিভিউয়ের জন্য আবেদন করেছে। রিভিউ প্রক্রিয়া সম্পন্ন হলে পরবতর্ীতে রাষ্ট্রপতির নিকট প্রাণভিার আবেদন করবে।
এর আগে আইনমন্ত্রী ব্যারিস্টার শফিক আহমেদ সাংবাদিকদের বলেছিলেন ঐ দুই খুনীর প্রাণভিার আবেদনের সময় পার হয়ে গেছে। তারা সময়মতো রাষ্ট্রপতির নিকট প্রাণভিার আবেদন করেনি। তবে রাষ্ট্রপরে প্রধান কেঁৗসুলি আনিসুল হক বলেছেন, রিভিউ সম্পন্ন হবার পর দুই খুনী রাষ্ট্রপতির নিকট প্রাণভিার আবেদন করতে পারবে।
এদিকে পাঁচ খুনীর রিভিউ শুনানি ২৪ জানুয়ারি শুরম্ন হচ্ছে। রিভিউ শুনানির পর মাত্র দুই খুনী রাষ্ট্রপতির নিকট মা চাওয়ার সুযোগ পাবে। অন্যদিকে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগার এখন রায় কার্যকর করার জন্য প্রস্তুত। কর্তৃপৰ ইতোমধ্যে সকল প্রক্রিয়া সম্পন্ন করেছে। ফাঁসির মঞ্চও তৈরি করা হয়েছে। পাঁচ খুনীর কনডেম সেল থেকে মাত্র কয়েক গজ দূরেই এই ফাঁসির মঞ্চ। ফাঁসি কার্যকরের জন্য ম্যানিলা রোপ ঘষামাজা করা হয়েছে। জলস্নাদও প্রস্তুত রাখা হয়েছে। কারা কতর্ৃপ সবকিছু অতি গোপনীয়তার সঙ্গে করছে। খুনীদের সকল আইনী প্রক্রিয়া সম্পন্ন করার পর পরই রায় কার্যকর করা হবে। তবে কখন কোথায় রায় কার্যকর করা হবে তা কৌশলগত কারণে কতর্ৃপ আগেভাগে প্রকাশ করবে না। কারা কতর্ৃপ এখন আইনী প্রক্রিয়া সম্পন্ন করার অপোয় রয়েছে।

No comments

Powered by Blogger.