পাগলী মূল : আরমান শামসী অনুবাদ : by জাফর আলম

শহরে সে পাগলী নামেই পরিচিত। খালি পায়ে। মাথায় উস্কখুস্ক চুল, সারাদিন শহরের রাসত্মায় ঘুরে বেড়ায়। সারাণ এদিক ওদিক ঘুরতে থাকে। কোথাও স্থির হয়ে এক জায়গায় বসে থাকে না।
সম্ভবত সে এ শহরের বাসিন্দা নয়। দাঙ্গার পর থেকে তাকে এই শহরে দেখা যাচ্ছে না। হয়ত কোন আশপাশের শহর থেকে এই বছরে এসেছে। অদ্ভুত ব্যাপার, পাগলীর সর্বদা হাতের মুঠোয় একটি ছুরি থাকে। কোন কৌতূহলী লোক তার থেকে ছুরিটি কেড়ে নেয়ার চেষ্টা করলে পাগলী হৈচৈ বাধিয়ে দিত আর তাকে মারতে উদ্যত হতো।
ঐ ছুরিটি ছাড়া তার কোন জিনিসের প্রতি আকর্ষণ ছিল না। সে অবশ্য পথচারীদের জন্য তিকর ছিল না। রাসত্মায় ছেলেপেলরা তাকে পাগলী পাগলী বলে উত্ত্যক্ত করলেও কাউকে কিছু বলত না। সে বোবা গাভীর মতো নীরব থাকত। অবশ্য গাভীও তো মাঝে মাঝে হাম্বা হাম্বা করে থাকে কিন্তু গাগলীর মুখে কোন রা ছিল না।
লোকজনের ধারণা, কোন দুর্ঘটনায় সে হয়ত বাকশক্তি হারিয়ে ফেলেছে। রাসত্মায় দুষ্টুু ছেলে দল তাকে উত্ত্যক্ত করত, শাড়ি ধরে হঁ্যাচকা টান মারলে শাড়ি পর্যনত্ম ছিঁড়ে যেত কিন্তু পাগলীর চোখে মুখে রাগের রেশ মাত্র ছিল না বরং মুছকি হেসে উত্ত্যক্তকারী ছেলেদের দিকে তাকিয়ে থাকত।
একদিন আমার সামনে একটি ছেলে পাগলীর দিকে ঢিল ছুড়ে মারল। পাগলীর কপাল ফেটে রক্ত বের হয়। ছেলেপেলেরা ভয়ে পালিয়ে যায় কিন্তু পাগলী মাথায় হাত দিয়ে কপালের আহত স্থান চেপে ধরে ফুটপাতে বসে পড়ে। পথচারী লোকজন পাগলীর কাছে ছুটে আসে। আমি দ্রম্নত পাগলীর কাছে ছুটে যাই, দেখলাম পাগলীর শূন্যে দৃষ্টি মেলে সামনের দিকে তাকিয়ে আছে। সে কাঁদছিল আর তার চেহারায় কোন প্রকার দুঃখ বেদনার চিহ্ন পর্যনত্ম দেখা যায়নি। এমন আহত হলে স্বাভাবিকভাবে আহত ব্যক্তির কপালে বেদনার ছাপ পড়ত আর পাগল হলেও হৈচৈ বাধিয়ে দিত। কিন্তু পাগলীকে নীরব দেখে আমার কষ্ট হয়। কারণ আজ পর্যনত্ম তার মুখের আওয়াজও শুনিনি। ভাবছিলাম, হয়ত আজ পাগলীর কান্নার আওয়াজ শুনতে পাব।
আমার বুকে একটি বাসনা সর্বদা সুপ্ত থাকে। কোন অচেনা অজানা লোকের দেখা হলে যেন মুখের বুলি শুনতে পাই। অচেনা লোকটি আলাপে দেরি করলে আমার উদ্বেগ বেড়ে যায় আর আমার চিনত্মাভাবনায় নানা প্রশ্ন জেগে ওঠে। লোকটির আওয়াজ কেমন হবে, গলার স্বর মোটা নাকি মিহি, ভারি নাকি সুরেলা, যতণ অচেনা লোকটি কথা বলছে না। আমি তার আওয়াজ শোনার জন্য অস্থির থাকি। কোন অনুষ্ঠানে দেখেছি লোকজন আলাপে মত্ত অথচ একজন অচেনা লোক চুপচাপ দাঁড়িয়ে আছে। তার মুখের কথা না শোনা পর্যনত্ম আমি মনোযাতনায় ভুগি। আমার পেশাও তাই। সাংবাদিক হিসেবে আমাকে সর্বদা অজানা অচেনা লোকের সঙ্গে সম্পর্ক গড়ে তুলতে হয়। কারণ আমি একটি দৈনিক পত্রিকার রিপোর্টার। সারাদিন শহরে ঘুরে ঘুরে চটপটি ধরনের পাঠক আকর্ষণীয় খবর আর ঘটনা সংগ্রহ করাই আমার কাজ।
কিন্তু পাগলীর কাছ থেকে কোন খবর সংগ্রাহ করা সম্ভব হয়নি। তাকে আমি মাঝে মাঝে ফলো করি কারণ আমার উদ্দেশ্য হলো, হয়ত একদিন পাগলীর মুখের আওয়াজ শুনতে পাব। আজও তার মুখের আওয়াজ শুনার জন্য তার আশপাশে চক্কর দিচ্ছিলাম। পাগলীর কপাল দিয়ে রক্ত ঝরছে। তাই তার আশপাশে পথচারী লোকজন জড়ো হয়েছে। আমি তার কান্নার আওয়াজ শোনার জন্য অপো করে বিরক্ত হয়ে ঘটনাস্থল ত্যাগ করে চলে যাই।
আমি সেখান থেকে চলে এসেছি ঠিকই কিন্তু পাগলীর বিষয়টি আমার মাথায় ঘুরপাক খাচ্ছিল। তাকে 'পাগলী' খেতাব কেন দেয়া হয়েছে? সে তো পাগলের ন্যায় মানুষের সঙ্গে ব্যবহার করে না, কাউকে আঘাত করে না। হৈচৈ চিৎকারও করে না। তার চোখে মুখে বন্য স্বভাবের চিহ্ন পর্যনত্ম নেই। তার দু'চোখে সর্বদা কানত্মির ছাপ, যেন মন বেদনার ভার সইতে সইতে এই অবস্থা হয়েছে। অবশ্য রাসত্মায় ছেলেপেলের জটলা দেখলে সে হাসে আর দু'চোখে যেন আলো জ্বলে উঠে। মেয়েটির বয়সও তেমন বেশি নয়। ত্রিশ বত্রিশ বছর হবে। কারও কাছে কখনও কিছু চায় না। কেউ খাবার দিলে নীরবে খেয়ে তারপর এদিকে সেদিকে ফুটপাতে ঘুরাঘুরি করতে থাকে, তাও নীরবে। অবশ্য তার চারপাশে বিকৃত মনের লোকজনের ভিড় লেগেই থাকত। অনেক সময় দুর্বলচিত্তের মহিলারা ও ফুটপাতে পাগলীর পাশে বসে থাকতে দেখা গেছে। ওরা তাদের স্বপ্ন পূরণের আশায় পাগলীকে খাতির তোয়াজ করে। সকলের মনের কথা সে নীরবে মনোযোগ সহকারে শুনে আর কিইবা অপরের জন্য করতে পারে যেখানে সে নিজেই বোবার মতো থাকে, কোন কথা বলে না। অবশ্য বসতে বসতে কানত্ম হয়ে পড়লে, সে হাত-পা নাড়াচাড়া করে আর এপাশ-ওপাশ ঘুরে বসে। তখন সমাগত লোকজন বিমূর্ত শিল্পকর্মের সংজ্ঞার ন্যায় তুলির আঁচড়ের অর্থ খুঁজে পায় আর সন্তুষ্ট হয়। অদৃষ্টবাদী সমবেত লোকেরা তার অঙ্গভঙ্গির দিকে সতর্ক দৃষ্টি রাখে। যদি পাগলীর চোখের পলক ছয়বার ওঠানামা করে তাহলে ওরা ভাবে ছয় নম্বর ক্রমিক নম্বর যার তাকে সে ডেকেছে।
তার ভক্তরা তার প্রতি বিশ্বাসে নড়চড় হতে দিতে নারাজ। তাদের হিসাব অনুযায়ী পাগলী ছ'বার চোখের পলক ওঠানামা করেছে অর্থাৎ ছয়কে দুই দিয়ে গুণ দিলে বারো হয়। পাগলী একদিকে এক নাগাড়ে তাকানোর পর কানত্ম হয়ে ডানে-বাঁয়ে ঘাড় কতবার নেড়েছে তারও হিসাব ভক্তরা রাখছে। সে তো সহজে হাসে না আর হাসলে কতবার দাঁত বের করে হেসেছে তার হিসাব রাখছে সমাগত লোকজন।
আসলে পাগলীর রম্নটি, কাপড় অথবা থাকার ব্যাপারে কোন কষ্ট ছিল না। বাড়িতে বন্দী জীবন থেকে সে মুক্ত। রম্নটি আর পরনের কাপড়চোপড় তার ভক্তরা প্রয়োজন মতো তার কাছে পেঁৗছে দেয়।
পাগলীকে দেখে আমার প্রকৃতির লীলাখেলার কথা মনে পড়ে। সৃষ্টিকর্তা একজন অনেক বড় স্রষ্টা। আমার মনে আরও প্রশ্ন জাগে, যখন প্রকৃতি পাগলদের ব্যাপারে এতই যত্নশীল আমাদের মতো বুদ্ধিমানদের কেন মুক্তবিহঙ্গের মতো ছেড়ে দিয়েছে। সংসারে চলছে আমাদের আরেকজনকে পেছনে ফেলে এগিয়ে যাওয়ার প্রতিযোগিতা। পাগল কে_ আমি নাকি আপনি? অদৃষ্টবাদীরা তাদের ইচ্ছা পূরণের আশায় একজন পাগলের দেহের আকার ইঙ্গিত থেকে ভবিষ্যতের ফলাফল বের করতে ব্যসত্ম। অথচ পাগলী মেয়েটি আসলে পাগল না হয়েও আমাদের দৃষ্টিতে পাগল।
একদিন আমি অফিসে কাজ করছি; পিওন এসে বলল, "স্যার পাগলী পাগল হয়ে গেছে।" আমি ফাইল থেকে মাথা তুলে চশমা নাকের নিচে নামিয়ে পিওনের দিকে তীর্যক দৃষ্টিতে তাকাই। সে ঘাবড়ে যায়। তারপর কৈফিয়তের সুরে বলল, "পাগলী রাসত্মায় রাসত্মায় ঘুরে বেড়ায়, তার ছুরি কে জানি চুরি করে নিয়ে গেছে। পাগলী এখন বসে বসে অঝোরে কাঁদছে। এক ভদ্রলোক তার কান্না থামাতে গেলে সে আরও মারমুখী হয়ে ওঠে। পাগলী ভদ্রলোককে ল্য করে পাথর ছুঁড়ে মেরেছে আর রেগে হাতের কাছে যা পায় তা লোকজনের দিকে ছুঁড়ে মারছে। একটি দোকানের কাঁচও ভেঙে গেছে। স্যার ওর পাগলামো বেড়ে গেছে।"
আমি হতভম্ব, জিজ্ঞাসা করি, "সে এখন কোথায়?"
"ফরাসগঞ্জের পাশের গলিতে ফুটপাথে বসে বসে কাঁদছে।"
আমি ছটফট করে চেয়ার থেকে উঠে দাঁড়াই আর পিওনকে আমার টেবিলের ওপর রাখা ফাইলগুলো গুছিয়ে রাখার নির্দেশ দিয়ে বললাম, "আমি এুণি ফিরে আসব।" আমি অফিস থেকে বের হয়ে দ্রম্নত পায়ে ফরাসগঞ্জের দিকে এগিয়ে যাই। ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখি ফুটপাথে মানুষের ভিড়। লোকজন লাফিয়ে লাফিয়ে পাগলীকে এক নজর দেখার চেষ্টা করছে। আমি ভিড় ঠেলে পাগলীর কাছে গিয়ে হাজির হই।
তার মুখ দিয়ে ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কান্নার আওয়াজ বের হচ্ছে।
কিন্তু অদৃষ্টবাদী লোকজন তার কান্না থামানোর চেষ্টা করছিল। ওরা তার মুখে বুলি শোনার জন্য অস্থির ছিল।
অসভ্য লোকজন কেন তার কান্না থামানোর চেষ্টা করছে, সে নীরব হয়ে গেলে তো আমি তার কান্নার আওয়াজ শোনা থেকে বঞ্চিত হব। আমি ভাবছিলাম, কিভাবে পাগলীর সাথে আলাপ শুরম্ন করা যায়। একটি ভারি কণ্ঠ শোনা গেল, "সরে দাঁড়াও, যেতে দাও।" তারপর লোকজনের মাঝে কানাঘুষা চলছিল। "মন্টু এসেছে, মন্টু এসেছে...।"
মন্টু এলাকার নামকরা গু-া। এলাকায় তার আধিপত্য দারম্নণ। অনেক উপরের মতাবান মতাসীন লোকদের সাথে তার ঘনিষ্ঠতা ও যোগাযোগ রয়েছে। ক্রমে মানুষের ভিড় হ্রাস পায়। ভিড় ঠেলে শক্ত সামর্থ্য মন্টু গু-া এগিয়ে যায়। মন্টু যখন জানতে পারে যে, পাগলীর ছুরি চুরি করে নিয়ে গেছে, তাই পাগলী কাঁদছিল। সে অট্টহাসিতে ফেটে পড়ল আর বলল, "আরে পাগলী তোমার ছুরির কি দরকার?"
মন্টু হাতে ভাঁজ করা ছুরি বের করে পাগলীর সামনে মেলে ধরে আর বোতাম টিপার সাথে সাথে পাঁচ ইঞ্চি ফনার ছুরি খুলে যায়। পাগলী ছুরি কেড়ে নেয়ার জন্য ঝাঁপিয়ে পড়ে। মন্টু হাত পেছনে সরিয়ে নিয়ে ছুরি বন্ধ করে পাগলীর দিকে বাড়িয়ে দেয়। এবার পাগলী বাড়িয়ে দেয়া হাত পেছনে নিয়ে যায় আর মন্টুর দিকে কড়া দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে।
মন্টু জানতে চায় : "কি হলো? ছুরি নেবে না?" এর উত্তরে পাগলী জোরে চিৎকার করে কাঁদতে থাকে। মন্টু হেসে বলল, "খোলা ছুরি নিতে চাও। নাও ধরো। অবশ্য দেখো যেন হাত কেটে না যায়।" এর পর মন্টু বোতাম টিপে আবার ভাঁজ করা ছুরি খুলে দেয়। পাগলী খোলা ছুরি দেখে হাত বাড়িয়ে ছুরি মন্টুর কাছ থেকে নিয়ে নেয় এবং সন্দেহের দৃষ্টিতে মন্টুকে দেখতে থাকে।
এরপর পাগলী ওলটপালট করে ছুরিটি দেখতে থাকে। সে ছেঁড়া কাপড়ের একটি টুকরো বের করে ছুরিটি পেঁচিয়ে নেয়, তারপর ছুরিটি বগলদাবা করে চারদিকে শূন্য দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে যেন কোন ঘটনাই ঘটেনি। মানুষের ভিড় আসত্মে আসত্মে কমে আসে। আমিও ঘটনাস্থল ত্যাগ করে অফিসে চলে আসি।
এই ঘটনার পর আমার ব্যসত্মতা বেড়ে যায় এবং আমি পাগলীর কথা এক প্রকার ভুলেই গিয়েছিলাম। দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতির অবনতি ঘটে। দুটি সম্প্রদায়ের মধ্যে বিবাদ বেড়ে যায় আর শহরে দাঙ্গা ছড়িয়ে পড়ে। প্রশাসন শহরে কারফিউ জারি করে। যেহেতু আমি ছিলাম উক্ত দৈনিকের একমাত্র রিপোর্টার, তাই সংবাদ সংগ্রহের জন্য কারফিউ পাশ নিয়ে মোটরসাইকেলে সারা শহর চষে বেড়াই। সেদিন ছিল কারফিউর তৃতীয় দিন। সন্ধ্যাবেলা, সূর্য অসত্ম গেছে। রাসত্মাঘাট জনশূন্য। পুলিশের গাড়ি বিরান সড়কে টহল দিচ্ছে। আমি রেলস্টেশন থেকে শহরের ভেতরের দিকে যাচ্ছিলাম। পথে কারফিউতে জনতার ভিড় দেখে আমি হতবাক। আমি মোটরসাইকেলে ভিড়ের দিকে এগিয়ে যাই। কাছে গিয়ে জানতে পারি, এটা সন্ত্রাসীদের ভিড়, ওরা লোকজনের বাড়ির মালপত্র লুট করে গাড়িতে তুলে নিয়ে যাচ্ছে। পুলিশ ওদের বাধা দিতে গেলে লুণ্ঠনকারী গু-ারা পুলিশের সাথে তর্কে লিপ্ত হয়। ওরা বলছিল, ওরা মন্টুর লোক, ওদের ছেড়ে দেয়া হোক। ইত্যবসরে নীরবতা ভঙ্গ করে একটি মেয়ের আর্তচিৎকার শোনা গেল, "বাঁচাও বাঁচাও" সামনের গলি থেকে মেয়েটির চিৎকার শোনা যাচ্ছিল। চিৎকার শুনে সমবেত লুণ্ঠনকারীরা বিতর্কে ানত্ম দিয়ে গলির দিকে তাকায়। কিছুণ পর আবার হৃদয়বিদারক আর্তচিৎকার শোনা গেল।
চিৎকারের আওয়াজ ক্রমশ বাড়তে থাকে আর দেখলাম চিৎকার ক্রমশ আমাদের দিকে এগিয়ে আসছে। পরিবেশ গম্ভীর আকার ধারণ করে। মন্টু গু-া একটি মেয়েকে অপহরণ করে কাঁধে তুলে নিয়ে আসছে। মেয়েটি কাঁধের ওপর ছটফট করছে আর চিৎকার করছিল।
হঠাৎ যেদিকে থেকে মন্টু গু-া মেয়েটিকে অপহরণ করে নিয়ে আসছিল, সেই গলির দিকে পাগলী ঝড়ের বেগে ছুটে যায়। তার হাতে মন্টুর উপহার দেয়া পাঁচ ইঞ্চি দীর্ঘ খোলা ছুরি, চোখেমুখে রাগ, যেন আগুনের ফুলকি বের হচ্ছে।
হয়তো পাগলীর মুখ দিয়ে চিৎকারের আওয়াজ বের হয়েছিল, তাই মন্টু পেছনে ঘুরে তাকায়। মুহূর্তের মধ্যে পাগলী মন্টুর পথ আগলে দাঁড়ায়। মন্টু কিছু বোঝার আগেই, পাগলীর ছুরির আঘাতে তার পেটে কয়েকটি তের সৃষ্টির হয়েছে। পেট কেটে পেট দিয়ে ফিনকি দিয়ে রক্ত বের হচ্ছে। মন্টুর কাঁধের ওপর থেকে মেয়েটি মাটিতে ছিটকে পড়ে আর মন্টু কাঠখড়ির মতো মাটিতে লুটিয়ে পড়ে। পাগলী বাঘিনীর মতো মন্টু গু-ার বুকে উঠে বসে আর পুলিশ ছুটে এসে ঘটনাস্থলে পেঁৗছার আগেই তার মসত্মক ছুরির আঘাতে দেহ থেকে বিচ্ছিন্ন করে ফেলে।
বাংলাদেশে অনেক উদর্ু কথাশিল্পী আছেন। এদের মধ্যে খ্যাতিমান অনুবাদক ও উদর্ু কথাশিল্পী সৈয়দপুরের আহামদ সাদি, ঢাকার গোলাম মোহাম্মদ, জাকির আজিজী, শাম বারেকপুরী এবং আইয়ুব জওহর প্রমুখ প্রয়াত। জীবিত কথাশিল্পীদের মধ্যে ঢাকায় অবস্থানকারী আরমান শামসী এখনও উদর্ু গল্প রচনায় সক্রিয়। জীবন সংগ্রামে নানা প্রতিকূলতার মাঝেও তিনি তাঁর লেখনী চালিয়ে যাচ্ছেন।
আরমান শামসীর জন্ম ১৯৪৫ সালে ভারতের যুক্ত প্রদেশের বেরিলি জেলার আনোলা গ্রামে। মাত্র তিন বছর বয়সে পিতৃহারা হন। চাকরি ও লেখাপড়া চালিয়ে গেছেন একসঙ্গে। লেখাপড়ার প্রতি গভীর আগ্রহের জন্য ইন্টারমিডিয়েট পাস করেন অনোলা সুভাষ ইন্টারমেডিয়েট কলেজ থেকে। কলকাতায় সেলসম্যানের চাকরি করেছেন এবং আলিগড় থেকে কৃতিত্বের সঙ্গে কামিল পাস করেন। প্রাইভেটে বিএ পরীার প্রস্তুতির সময় '৬৪ সালের দাঙ্গা শুরম্ন হলে ঢাকা চলে আসেন। বাল্যকাল থেকে শিশুদের ম্যাগাজিনে উদর্ু গল্প লেখা শুরম্ন। তাঁর ছোট গল্প ভারতের খ্যাতমান উদর্ু ম্যাগাজিনে নিয়মিত ছাপা হয়। ২০০৩ সালে তাঁর প্রথম উদর্ু গল্প সঙ্কলন "আসনাইকা কারব" (ভালবাসার যাতনা) এবং ২০০৬ সালে 'ডাহ্লন ওভরতা হুয়া সুরজস (ঢাল থেকে উদিত সূর্য) দ্বিতীয় গ্রন্থ প্রকাশিত হয়। 'পাগলী' গল্পটি তার শেষোক্ত গল্প সঙ্কলন থেকে নেয়া হয়েছে।

No comments

Powered by Blogger.