৩৫ বছরের সমস্যার সমাধান নিজেরাই করল এলাকাবাসী

বরিশালের মুলাদী উপজেলা সদর থেকে চরকমিশনার গ্রামকে বিচ্ছিন্ন করে রেখেছিল আড়িয়াল খাঁ নদ। উপজেলা সদরের সঙ্গে যোগাযোগের একমাত্র মাধ্যম ছিল নৌকা। তা-ও সব সময় পাওয়া যেত না। ৩৫ বছরে এ সমস্যার সমাধান হয়নি। মেলেনি সরকারি সহযোগিতা।
বাধ্য হয়ে এলাকাবাসী তিন মাস আগে এ সমস্যা সমাধানের উদ্যোগ নেয়। তারা নদের ওপর বাঁশ দিয়ে তৈরি করেছে প্রায় এক কিলোমিটার দীর্ঘ সাঁকো। এতে ওই গ্রামের ছয় হাজার মানুষের দীর্ঘদিনের ভোগান্তি দূর হয়েছে।
চরকমিশনারের বাসিন্দারা জানান, তাঁদের গ্রামটি প্রত্যন্ত এলাকায়। এখানে বড় কোনো বাজার, ছেলেমেয়েদের লেখাপড়ার জন্য মাধ্যমিক বিদ্যালয় ও কলেজ নেই। আড়িয়াল খাঁ নদের ওপারে মুলাদী উপজেলা শহর। সেখানে বিদ্যালয়, কলেজ, সরকারি কার্যালয় ও বাজার আছে। তাই প্রতিদিনই এ গ্রামের কৃষক, শিক্ষার্থীসহ নানা শ্রেণী-পেশার মানুষকে নানা প্রয়োজনে ওপারে আসতে হয়।
গত মঙ্গলবার সরেজমিনে দেখা গেছে, আড়িয়াল খাঁ নদের চরকমিশনার এলাকায় এক কিলোমিটারে সাঁকোটি তৈরি করা হয়েছে। এর হাতল ও পাটাতন সবই বাঁশ দিয়ে তৈরি। এলাকাবাসীর অভিযোগ, এই সাঁকো তৈরিতে কোনো ধরনের সরকারি সহযোগিতা পাওয়া যায়নি।
স্থানীয় বাসিন্দা ও সাঁকো তৈরির প্রধান উদ্যোক্তা আবদুস সত্তার খান বলেন, কয়েক বছর আগে আড়িয়াল খাঁ নদের মূল চ্যানেলটি বন্ধ হয়ে যায়। তাই এই স্থান দিয়ে নৌকা চলাচলেও সমস্যা দেখা দেয়। এতে বরিশাল ও মুলাদী পৌর সদরে যেতে দুর্ভোগে পড়তে হয় এলাকার বাসিন্দাদের। তাই গত বছরের অক্টোবরে এলাকাবাসীর সঙ্গে পরামর্শ করে এখানে একটি সাঁকো নির্মাণের উদ্যোগ নেওয়া হয়। সবাই বাঁশ, রশি ও টাকা দিয়ে সহায়তা করে। সাঁকোটি তৈরিতে প্রায় তিন মাস লেগেছে। এটি তৈরিতে প্রায় তিন হাজার বাঁশ ব্যবহার করা হয়েছে। ১৫-২০ দিন আগে এটি চালু করা হয়েছে।
স্থানীয় মো. নাগর আলী হাওলাদার অভিযোগ করে বলেন, ‘দীর্ঘদিনের এ সমস্যা সমাধানের জন্য ইউপি চেয়ারম্যান, সাংসদসহ সবার কাছে গিয়েছিলাম। কিন্তু কেউ কোনো সাহায্য করেনি। চরকমিশনারের শতাধিক শিক্ষার্থী বর্ষার সময় নৌকা পাড়ি দিয়ে আসতে পাড়ত না। সাঁকো নির্মাণ করায় ওই সমস্যার সমাধান হয়েছে।’
জোনাব আলী ফরাজী (৭৫) বলেন, ‘আগে নৌকার লাইগ্যা (জন্য) ঘণ্টার পর ঘণ্টা বইয়া থাকতে হইত। এহন ২৫ মিনিটে চার পাড় হইয়া এপার আইছ। এই চার (সাঁকো) হওনে এহোন আমাগো এপার আইতে সহজ হইছে।’
কাজিরচর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. শাহজাহান দফাদার বলেন, ‘সাঁকো তৈরি করার জন্য আমরা কোনো সহায়তা করতে পারিনি। এ সাঁকো তৈরির সব ব্যয় বহন করেছে এলাকাবাসী।’

No comments

Powered by Blogger.