চিহ্নিত ৫ হাজার- ভবনের অবৈধ অংশ ভাঙ্গা হবে- * ভূমিদসু্যদের অব্যাহত হুমকির মুখেও হার্ডলাইন- * মার্চ-এপ্রিলেই পূর্বাচলে ৩ হাজার পস্নট হসত্মানত্মর- * ২৬ মার্চ বিজয় সরণি-তেজগাঁও লিঙ্ক রোড উন্মুক্ত হচ্ছে

রাজন ভট্টাচার্য অনুমোদনের বাইরে অবৈধভাবে বর্ধিত অংশ নিয়ে নির্মিত পাঁচ হাজার ভবন চিহ্নিত করেছে রাজউক। এসব ভবন মালিকদের বিরম্নদ্ধে হার্ডলাইনে যাচ্ছে সংশিস্নষ্ট কতর্ৃপৰ। নেয়া হবে আইনগত ব্যবস্থা।
গুঁড়িয়ে দেয়া হবে নির্মিত ভবনের অবৈধ অংশ। দ্রম্নত সময়ের মধ্যে রাজধানীতে শুরম্ন হচ্ছে এই অভিযান। রাজউক বলছে, মূল ভবনের সঙ্গে অবৈধ অংশ নির্মাণ করায় মালিকদের বিরম্নদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা নেয়া হবে। ভবন মালিকরা যতই শক্তিশালী হোক না কেন, আইনের আওতায় আনা হবে তাদের। অভিযান পরিচালনার জন্য ইতোমধ্যে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের সঙ্গে কয়েক দফা বৈঠক করেছে রাজউক। এছাড়া পস্নট বিক্রির জন্য অবৈধ প্রকল্পের বিজ্ঞপ্তি প্রকাশকারী প্রতিষ্ঠানের বিরম্নদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে। সার্বিক উন্নয়নে রাজধানীকে ঢেলে সাজাতে নেয়া হয়েছে নতুন-নতুন বেশ কয়েকটি পরিকল্পনা।
রাজউক সূত্রগুলো বলছে, চিহ্নিত পাঁচ হাজার ভবনের মধ্যে অনেক ভবন আছে যেগুলো পস্ন্যান পাস করে নিজেদের মতো করে ভবন নির্মাণ করা হয়েছে। পরিকল্পনার বাইরে গিয়ে বদলে দেয়া হয়েছে ভবনের আদল। এ কারণে অনেক ভবন এখন ঝুঁকিপূর্ণ। অনেক ভবনে অনুমোদনের বাইরে অবৈধভাবে বাড়তি অংশ নির্মাণ করা হয়েছে। কৌশলে প্রতারণার আশ্রয় নিয়েছে ভবন মালিকরা। অথচ প্রচারণা চালানো হচ্ছে, রাজউকের অনুমতি নিয়ে স্থাপনা নির্মাণের। গ্যারেজের বিষয়টি বাধ্যতামূলক করা হলেও অনেক ভবনে নিয়ম মানা হয়নি। গ্যারেজ ছাড়াই ভবন নির্মাণ করা হয়েছে। বেশিরভাগ ৰেত্রে গ্যারেজ আবাসিক রম্নম হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে। বেশি অর্থ লাভের আশায় কোথাও-কোথাও গ্যারেজ পরিণত হয়েছে বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানে। চিহ্নিত পাঁচ হাজার ভবনের মধ্যে রয়েছে সরকারী, বেসরকারী, স্বায়ত্তশাসিত ও ব্যক্তি মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠান। এর মধ্যে আছে বাণিজ্যিক ও আবাসিক ভবন বেশি। চিহ্নিত ভবনগুলোর মধ্যে প্রথম পর্যায়ে মূল সড়কের পাশে নির্মিত অনুমোদনহীন ভবনগুলোর বিরম্নদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে। পর্যায়ক্রমে সবগুলোই আসবে আইনের আওতায়। যেসব অনুমোদিত ভবনের সঙ্গে বর্ধিত অংশ নির্মাণ করায় জনস্বার্থে ব্যাঘাত সৃষ্টি হচ্ছে সেসব ভবনের বর্ধিত অংশ ভেঙ্গে ফেলা হবে। গুরম্নত্বপূর্ণ স্থাপনার বর্ধিত অংশ ভাঙ্গার বিষয়ে মন্ত্রণালয়ে আলোচনা করা হবে। মন্ত্রণালয়ের সিদ্ধানত্ম পেলেই ব্যবস্থা। এছাড়া মূল ভবনের সঙ্গে নির্মিত অবৈধ অংশ ভাঙ্গা না হলে পরবতর্ীতে নতুন ভবন নির্মাণকারী মালিকরা এ ব্যাপারে আরও উৎসাহী হতে পারে। যে কারণে স্থাপনা গুরম্নত্বপূর্ণ হলেও জরিমানা করে মুক্তি দেয়া হবে কিনা? বিষয়টি নিয়ে ভাবছে রাজউক কতর্ৃপৰ। ঢাকা মহানগর পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, সম্প্রতি ভিআইপি সড়কের পাশে গ্যারেজ ছাড়া প্রায় অর্ধশত ভবনের তালিকা আনুষ্ঠানিকভাবে রাজউকের কাছে হসত্মানত্মর করেছে মহানগর পুলিশ। গ্যারেজ ছাড়া ভবন মালিকদের বিরম্নদ্ধে ব্যবস্থা নিতে ঢাকা মহানগর পুলিশের পৰ থেকে সুপারিশ করা হয়েছে। পুলিশ বলছে, রাজধানীতে যানজটের অন্যতম কারণ ভিআইপি সড়কের পাশে আবাসিক ও বাণিজ্যিক বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের নিজস্ব পার্কিং ব্যবস্থা না থাকা। এ কারণে এসব ভবনের সামনে যত্র-তত্র গাড়ি পার্কিং প্রতিদিনের নিয়মিত চিত্র। রাসত্মা দখল করে গাড়ি পার্কিংয়ের কারণে যানজট বাড়ছে। ঢাকা মহানগর ট্রাফিক কর্মকর্তারা বলছেন, মহানগরীতে যানজট নিরসনে যখন নানা পরিকল্পনা বাসত্মবায়ন করা হচ্ছে তখন সঙ্কট সমাধানে অন্যতম বাধা অবৈধ পার্কিং। এ অবস্থার অন্যতম কারণ রাসত্মার পাশে থাকা অনেক ভবনের নিজস্ব পার্কিং ব্যবস্থা না থাকা। রাজউক বলছে, ডিএমপির পৰ থেকে দেয়া প্রসত্মাবনা গুরম্নত্বের সঙ্গে বিবেচনা করা হচ্ছে।
এখানেই শেষ নয়, বিভিন্ন প্রচার মাধ্যমে অনুমোদনহীন যেসব প্রকল্প বিক্রির প্রচারণা চালানো হচ্ছে এসব প্রতিষ্ঠানের বিরম্নদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেবে রাজউক। তাঁরা বলছেন, প্রকল্পের অনুমোদন ছাড়াই বিজ্ঞাপন প্রচার করা অবৈধ। আগের অবস্থা থেকে পরিবর্তন ঘটেছে রাজউকের। কমেছে দুর্নীতি। ঢেলে সাজানোর প্রত্যয় নিয়ে নতুনভাবে কাজ শুরম্ন হয়েছে বর্তমান সরকারের আমলে। এ ৰেত্রে প্রকল্প করার জন্য বৈধ কাগজপত্র নিয়ে এলে অনুমোদন না পাওয়ার কোন কারণ নেই। রাজউকের দাবি নিয়ম অনুযায়ী প্রকল্প জমা দেয়ার ৪৫ দিনের মধ্যে ৭৩ ভাগ পরিকল্পনা চূড়ানত্ম অনুমোদন পাচ্ছে। জনবল সঙ্কট থাকলেও এখন মাসের পর পরিকল্পনা অনুমোদনে গ্রাহকদের হয়রানির কোন কারণ নেই। রাজউক সূত্রে জানা গেছে, পস্নট ব্যবসায় নিয়োজিত উদ্যোক্তাদের মধ্যে ৭৩ প্রতিষ্ঠান রাজউকের নিবন্ধিত। জমা আছে ২৪টি আবেদন। প্রক্রিয়াধীন দু'টি। এছাড়া পাঁচটি প্রতিষ্ঠানকে প্রিলিমিনারি অনুমোদন দেয়া হয়েছে। এগুলোর মধ্যে রয়েছে বসুন্ধরা গ্রম্নপের ইস্ট ওয়েস্ট প্রপার্টিজ, স্বর্ণালী আবাসন প্রকল্প ইস্টার্ন গ্রম্নপের বনশ্রী, পলস্নবী ও মায়াকুঞ্জ।
শুক্রবার সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময় অনুষ্ঠানে রাজউক চেয়ারম্যান প্রকৌশলী নুরম্নল হুদা জানান, ২০৩০ সালকে সামনে রেখে নতুন নতুন পরিকল্পনা নেয়া হচ্ছে। রাজউককে প্রকৃত সেবাধর্মী প্রতিষ্ঠানে রূপ দেয়ার অঙ্গীকার করেন তিনি। বলেন, রাজউক নিয়ে মানুষের মনে যেসব ভ্রানত্ম ধারণা আছে তা ভেঙ্গে দিতে চাই। চারদলীয় জোট সরকারের আমলে রাজউকের ভাবমূর্তি অনেকাংশেই প্রশ্নবিদ্ধ ছিল। নতুন পরিকল্পনায় উপহার দিতে চাই সুন্দর ও পরিচ্ছন্ন নগরী। তিনি বলেন, রাজউককে ঢেলে সাজাতে ভেতরে ও বাইরে থেকে নানা প্রতিবন্ধকতার শিকার হতে হচ্ছে। আমি প্রধানমন্ত্রীকে তিন বার দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি নেয়ার কথা বলেছি। নিজের নিরাপত্তার জন্য সরকার থেকে এখন গানম্যান নিয়ে চলতে হয়। তিনি বলেন, যারা রাজউকের সংশিস্নষ্টদের সঙ্গে চুক্তি করে পরিকল্পনা পাস করে নিত, তারা এখন আর তেমন একটা পারছে না। এক শ' ভাগ দুর্নীতি বন্ধ করতে চাই। এ কারণে ভেতর ও বাইরে থেকে হুমকি নয় প্রতিবন্ধকতার শিকার হতে হচ্ছে। বৈধ কাগজপত্র নিয়ে প্রকল্প মালিকরা পরিকল্পনা অনুমোদনের জন্য এলে যদি যথাসময়ে তা না হয় আমি নিজে এ ব্যাপারে সহযোগিতা করব। ইতোমধ্যে অনেক দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তা-কর্মচারীর বিরম্নদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। ২০ জনের বিরম্নদ্ধে নেয়া হয়েছে শাসত্মিমূলক ব্যবস্থা। তিনি বলেন, আনত্মর্জাতিক মানের আদলে পূর্বাচল প্রকল্প তৈরি করা হবে। তিনি চ্যালেঞ্জ ছুড়ে বলেন, রাজউকে টেন্ডার কেলেঙ্কারির কোন ঘটনা নেই। আগামী মার্চ-এপ্রিলের মধ্যে তিন হাজার পস্নট গ্রাহকদের হসত্মানত্মর করা হবে। ২০১২ সালের মধ্যে পর্যায়ক্রমে তা শেষ করা হবে। আগামী ২৬ মার্চ বিজয় সরণি থেকে তেজগাঁও শিল্প এলাকা পর্যনত্ম ফাইওভার নির্মাণ কাজ ও রাসত্মা উন্মুক্ত কর্মসূচীর উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী। এছাড়া ঢাকায় প্রবেশের জন্য আরও দু'টি এন্ট্রি পয়েন্ট বাড়ানোর কাজ চলছে বলে তিনি জানান। রাজউকের কর্মকা- এগিয়ে নিতে বস্তুনিষ্ঠ সংবাদ পরিবেশনসহ সাংবাদিকদের সহযোগিতা কামনা করেন তিনি।

No comments

Powered by Blogger.