সক্রিয় হার্শেল হার্শেল মহাকাশ টেলিস্কোপ আবার গা-ঝাড়া দিয়ে উঠেছে। যান্ত্রিক ত্রম্নটি দেখার পর প্রকৌশলীরা এর মেরামত কাজ সেরেছেন। সুতরাং হার্শেল এখন পুরোপুরি সক্রিয়, লিখেছেন _এমদাদ হোসেন ভূঁইয়া

হার্শেলের পর্যবেৰণ সেলের হাইফাই স্পেকট্রোমিটার মাস তিনেক আগে মহাকাশের বিকিরণ সইতে না পেরে হঠাৎ বিকল হয়ে পড়ে। ওলন্দাজ বিজ্ঞানীদের একটি দল হাইফাই পরিচালনার কাজে নিয়োজিত।
তাঁরা বলেন, ত্রম্নটি সাড়িয়ে ফেলা হয়েছে এবং তার পুনরাবৃত্তি হওয়ার সম্ভাববনা একেবারেই কম।
স্রন নেদারল্যান্ডস ইনস্টিটিউট ফর স্পেস রিসার্চের বিজ্ঞানী ডক্টর ফ্রাঙ্ক হেলমিক মেরামত কাজে নিয়োজিত দলের নেতৃত্ব দেন। তাঁরা হাইফাই পরিচালনার সঙ্গেও যুক্ত। তিনি বলেন, আমাদের দলে ৩০ জন বিজ্ঞানী রয়েছেন। তিনি বিবিসিকে বলেন, আমি টিভি খুব একটা দেখি না। তবে আমি 'ক্রাইম সিন ইনভেস্টিগেশন' (পর্দায় অপরাধ তদনত্মের দৃশ্য) বুঝি, এটা ঠিক এ ধরনেরই একটি তদনত্ম কাজ তবে তা মহাকাশের বুকে! আমরা প্রথমে সমস্যা চিহ্নিত করেছি এবং পরে সমাধানের পথ বের করেছি। হাইফাইর ত্রম্নটি অন্য দু'টি যন্ত্র_ প্যাকস এবং স্পায়ারের কাজে ব্যাঘাত সৃষ্টি করতে পারেনি।

বৈশিষ্ট্য_
ইউরোপীয় মহাকাশ সংস্থা (ইসা) গত মে মাসে হার্শেল স্পেস টেলিস্কোপকে মহাশূন্যে স্থাপন করে। এর কয়েকটি বৈশিষ্ট্য এখানে তুলে ধরা হলো :
১. এই দূরবীন বা মহাকাশ পর্যবেৰণ যন্ত্রটি পৃথিবী পৃষ্ঠের দেড় কিলোমিটার ওপরে স্থাপন করা হয়েছে।
২. এটি মহাকাশের অতি হাল্কা আলোকরশ্মির অতি ৰুদ্র ভগ্নাংশ পরিমাপ করতে সৰম।
৩. এটিতে স্থাপন করা আছে সাড়ে তিন মিটার ব্যাসের আয়না। মহাকাশে মানুষের স্থাপন করা এটা এ ধরনের বৃহত্তম আয়না।
৪. হার্শেল গ্যাসের মেঘ এবং সদ্য জন্ম নেয়া তারকার ধূলিকণার অসত্মিত্ব খতিয়ে দেখতে সৰম।
৫. এটি যুগে যুগে ছায়াপথের বিবর্তনের চিত্র খতিয়ে দেখার সামর্থ্য রাখে।
৬. এর বর্তমান মিশন তিন বছর চলবে।
তারকা এবং ছায়াপথের জন্ম, গঠন প্রকৃতি এবং বিবর্তন সম্পর্কে গবেষণা হার্শেলের অন্যতম প্রধান কাজ। 'হেটারোজাই ইন্সট্রুমেন্ট ফর দ্য ফার ইনফ্রারেড' (হাইফাই) হচ্ছে অতি উচ্চমাত্রা বর্ণচ্ছটা পরিমাপক যন্ত্র স্পেকট্রোমিটার। এটি আলোকরশ্মি ধারণ এবং তরঙ্গ দৈর্ঘ্যে বিচ্ছুরণের মাধ্যমে 'ফিংগার প্রিন্ট' তৈরি করতে পারে, যা আলোর উৎসের রসায়নের তথ্য উদঘাটিনে সৰম।
হাইফাই গ্যাসের সৃষ্ট মেঘ এবং তারকা জন্ম লাভের ফলে সৃষ্ট ধুলোবালি সম্পর্কে আগের চেয়ে জোরালো তথ্য উদঘাটনে সৰম। গত আগস্টে তার এই ৰমতাটাই নষ্ট হয়ে গিয়েছিল। যা সারানোর পর হাইফাই এখন পূর্ণ সক্রিয়।
ইলেকট্রনিক ধাঁধা
তদনত্ম দল এবং তাদের টার্গেট ক্রাইম সিন-এর মধ্যে ব্যবধান ১৫ লাখ কিলোমিটার। এই দূরত্ব ঘুচিয়ে 'স্রন' দল 'কসমিক রশ্মি'র আঘাতে হার্শেলের 'মাইক্রোপ্রসেসর' ৰতিগ্রসত্ম হওয়ার ঘটনা চিহ্নিত করতে সৰম হন। প্রথমে হতাশ হয়ে পড়লেও বিজ্ঞানীরা সমস্যাটির সমাধান করতে সৰম হন।
হাইফাই প্রকল্পের নেতা ডক্টর পিটার রোয়েলফসেমা বলেন, বিষয়টি প্রথমে আমাদের কাছে একটি ইলেকট্রনিক বা প্রযুক্তিগত ধাঁধা মনে হয়েছিল, সীমিত তথ্য এবং প্রচ- চাপ মোকাবেলা করে আমরা সমাধানে পেঁৗছাতে সৰম হয়েছি। স্বল্প সময়ে দ্রম্নত গতিতে সমস্যা সমাধানের সাফল্য পেশাদারিত্বের জন্য একটি গর্বের বিষয়।
৫. হেলমিক বলেন, নতুন পর্যায়ে আগামী কয়েক মাসে হার্শেল তার মোট দৰতার ৫০ শতাংশ কাজে লাগাবে। এর মাধ্যমে অগ্রাধিকারভিত্তিতে সবচেয়ে গুরম্নত্বপূর্ণ তথ্যগুলো আগে সংগ্রহ করা হবে। তবে যথা শীঘ্রইর সম্ভব পূর্ণ ৰমতায় ফিরে যাবে।
মহাকাশের রহস্য উন্মোচনে হার্শেল তিন বছর তার শীতাতপ নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা বিকল হওয়ার আগ পর্যনত্ম তার মিশন অব্যাহত রাখবে।
সূত্র : বিবিসি।

No comments

Powered by Blogger.