নারী বলেই কি আমি বিচার পাব না- বলতে চাই

আজ একবিংশ শতাব্দীতে বড় গর্বের সঙ্গে ভাবতে শুরম্ন করেছিলাম যে, নারী তার স্বাধীনতাকে সমুন্নত রেখে সমাজের সকল েেত্র পুরম্নষের পাশাপাশি পরিবার-সমাজ-দেশ সর্বোপরি জাতির কল্যাণে এক ব্যতিক্রমধমর্ী আলোকবর্তিকার মশাল জ্বালিয়ে শানত্মির দুয়ার উন্মোচন করবে, সত্য-সুন্দরকে প্রতিষ্ঠা করতে প্রকৃত সোনার বাংলার মৃত্তিকায় চেষ্টা চালিয়ে যাবে।
কিন্তু অত্যনত্ম দুঃখের সঙ্গে বলতে হচ্ছে, তা মনে হয় আর সম্ভব হবে না। কারণ হিসেবে উলেস্নখ করছি, এখন পুরম্নষ শাসিত সমাজের পরতে পরতে নারীরা যেহারে নিগৃহীত হচ্ছে, হচ্ছে নির্যাতিত, ন্যায্য অধিকার থেকে হচ্ছে যত্রতত্র বঞ্চিত, কিছু স্বার্থান্বেসি পুরম্নষ বিচারের নামে নারীদের করছে হয়রানি_ যা কোনভাবেই একটি সুস্থ-সুন্দর সমাজ গঠনে কোন নারীর প েভূমিকা রাখা সম্ভবপর নয়।
আমি একজন রেজিঃকৃত বেসরকারী প্রাইমারী স্কুল শিক। শিকতার পাশাপাশি বিএ পড়াশোনাও করছি। আমার বিয়ে হয়েছিল আট বছর পূর্বে একভদ্রলোকের সঙ্গে। বিয়ের এক বছর পর আমার স্বামী আমার অনুমতি ছাড়াই আরেকটি বিয়ে করে আমাকে ছেড়ে চলে যায়। এর কিছু দিন পর আমি একটি পুত্র সনত্মানের মা হই। এরপর আমার স্বামী আমার আর কোন খোঁজ-খবর রাখেনি। আমি তার কথা না ভেবে, আমার মতো স্বপ্ন দেখতে শুরম্ন করি আমার আদরের সনত্মানকে নিয়ে। অনেক কাঠখড় পুড়িয়ে সামনে এগুতে চেষ্টা করি। হঠাৎ আমার ছেলে ভীষণ অসুস্থ হয়ে পড়ে। আমার হাতে একটি টাকাও ছিল না ওই সময়। আমি পাগলের মতো ছুটে যাই তিতাস উপজেলার কড়িকান্দি বাজারে এক স্বর্ণের দোকানে। আমার একমাত্র সম্পদ ৪ আনা ২ রতি সোনার দুলজোড়া বন্ধক রেখে ৪ হাজার টাকা নিই প্রতিহাজারে মাস প্রতি এক শ' টাকা সুদে 'মা স্বর্ণ শিল্পালয়' নামের একটি দোকান থেকে, যার মালিক তপন সরকার, রতন সরকার, লিটন সরকার ও স্বপন সরকার; ওরা আপন ৪ ভাই। তাদের আরো ব্যবসা প্রতিষ্ঠান রয়েছে দাউদকান্দির গৌরীপুর বাজারে। যেসব প্রতিষ্ঠানের নাম 'রাজলক্ষ্মী শিল্পালয় এ্যান্ড স্টোর', 'রাজলক্ষ্মী ডাইসকাটিং সেন্টার' ও 'রাজলক্ষ্মী স্বর্ণ শিল্পালয়'। তারা আমাকে একটি পাকা রশিদও দেন ওইসময়। তিন মাস পর আমি অনেক কষ্টে ধার দেনা করে সুদের টাকাসহ মূল টাকা নিয়ে মা স্বর্ণ শিল্পালয়ে গেলে তপন সরকার আমার কাছ থেকে টাকা বুঝে নিয়ে আগামীকাল তাদের মূল শাখা গৌরীপুরের রাজলক্ষ্মী স্বর্ণ শিল্পালয় থেকে আমার দুলজোড়া এনে দেবে বলে জানায়। আমি বিশ্বাস করে তাদের দেয়া রশিদ নিয়ে বাড়িতে চলে আসি।
পরের দিন দোকানে গিয়ে দেখি তপন সরকার নেই। তখন অন্যান্য কর্মচারীরা বলেন, 'দাদা ভীষণ অসুস্থ, কুমিলস্না হাসপাতালে আছেন। সুস্থ হলেই আপনার স্বর্ণের জিনিস আপনি পাবেন'। (আসলে প্রকৃত ঘটনা হলো, ফেনসিডিলের সঙ্গে ধরা খেয়ে তপন তখন জেলে অবস্থান করছে।) এরপর থেকে আমি বহুবার তাদের দোকানে গিয়েছি কিন্তু আমার গয়না আমি পাইনি।
হঠাৎ একদিন শুনি তারা দোকান বিক্রি করে সকল ভাই এখন গৌরীপুরে ব্যবসা করেন। আমি ছুটে যাই গৌরীপুরে রাজলক্ষ্মী স্বর্ণ শিল্পালয়ে। তপনকে না পেলেও তার বড় ভাই স্বপন আমার দুলজোড়া কয়েকদিন পর দেয়ার কথা বলেন। তিনি বলেন, 'মাধব বণিকের এখানে স্বর্ণ জমা থাকে, টাকা জমা দিয়ে ওখান থেকে স্বর্ণ আনতে হয়। আমার কাছে এখন টাকা নেই। টাকা মিল করতে পারলে দু'চার দিন পরে স্বর্ণ এনে ঘরে রাখব। আপনি এসে যে কোন সময় নিয়ে যাবেন। (মাধব বণিক, গৌরীপুর বাজারের একজন বড় ব্যবসায়ী)। এভাবে আমাকে ঘুরাতে থাকেন একের পর এক। এক সময় আমি নিরম্নপায় হয়ে গৌরীপুর বাজারের একজন ব্যবসায়ী আলী আশরাফের সঙ্গে এ বিষয়ে কথা বলি। তিনি আমার সঙ্গে রাজলক্ষ্মী শিল্পালয়ে যান এবং তপনকে না পেয়ে তার বড় ভাই স্বপনের সঙ্গে কথা বলেন। স্বপন বলেন, আপনারা আর কয়েক দিন অপো করেন। আমি কথা দিচ্ছি আমার ছোট ভাই জিনিস না দিলেও আমি আপনাদের জিনিস দিইয়া দিব। আমার ছোট ভাই নষ্ট হয়ে গেছে। তার এখন কোন দোকানপাট নেই, কি করবেন আর কয়েকটা দিন অপো করেন'।
এরপর কেটে যায় অনেক দিন। স্বপন সরকারের কাছে গেলেই দেন-দিচ্ছি বলে আমাকে ঘোরাতে থাকে। এদিকে তার ছোট ভাই পালিয়ে পালিয়ে থাকে। আমার ধৈর্যের বাঁধ ভাঙ্গে ভাঙ্গে অবস্থা। আমি গৌরীপুর স্বর্ণকার সমবায় সমিতির সেক্রেটারি ও বিশিষ্ট ব্যবসায়ী বাবু সঞ্জীত রায়-এর সাথে কথা বলি। তিনিও আমাকে অপো করতে বলেন। কয়েকদিন পর যোগাযোগ করলে তিনি হতাশার সুর শোনান আমাকে। এখন আমি কার কাছে যাব? আমার স্বপ্নের দুলজোড়া কি মেরে খাবে এই স্বর্ণকার সুদখোর মহাজনেরা। এখন আমি আমার দুলজোড়া চাই। বিচার চাই এই অনৈতিক ব্যবসায়ীদের এহেন কর্মকা-ের। স্থানীয় প্রশাসন যদি মনে করেন, আমার এই ব্যাপারে তাদের কোন করণীয় আছে, তাহলে এর একটা বিহিত ব্যবস্থা নেয়ার জন্য বিশেষভাবে অনুরোধ করছি। আর যদি এর কোন বিচারই না পাই তাহলে ধরে নেব নারী বলেই আমি আজ এর বিচার হতে বঞ্চিত। যদিও একজন নারীই আজকে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী। তারপরেও ভেবে নেন নারীরা চিরকালই অবহেলিত-নির্যাতিত-বঞ্চিত। এটা আমার ভাগ্য-এটাই আমার নিয়তি।
মোসাম্মৎ অজুফা খাতুন
সহকারী শিীকা, শিবপুর রেজিঃ বেসরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়, নবগঠিত তিতাস উপজেলা, দাউদকান্দি, কুমিলস্না।

No comments

Powered by Blogger.